আমার দূরন্ত শৈশব ও কৈশোরের দিনকাল(৪র্থ পর্ব)।
লিখেছেন লিখেছেন জারা ০৯ মে, ২০১৩, ০৪:১২:৩৩ বিকাল
আষাঢ়ের এক ঘণবর্ষায় দুপুরে ভাই আর আমি কাকভেজার মতো ভিজতে ভিজতে স্কুল থেকে বাসাতে ফিরলাম। বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে দুপুরের খানা খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে ভাইয়া এসে আমাকে বললো বরশী দিয়ে মাছ ধরতে যাবি। শুনেই বিছানা থেকে এক লাফে উঠে বসলাম। বাসাতে চুপচাপ শুয়ে থাকতে ভালো লাগছিলো না।
ভাইয়াকে বললাম যাবো। বাসায় কড়া শাসনের মধ্যে থাকতে আর ভালো লাগে না। আমার দাদুকে ভুলিয়ে ভালিয়ে দূরন্ত দু,ভাইবোন বরশী ও মাখানো আটা ও কিছু ভাত নিয়ে চললাম মাছ ধরতে। ওই অঝোড় ধারার বৃষ্টির মধ্যেই পাশের বাড়ীর পুকুর ঘাটে বসে প্রায় অনেকক্ষন ধরে বরশী ফেলে ছোট ছোট পুটি মাছ ধরলাম। একসময় ভাইয়া বললো চল অনেক হয়েছে। আবারও চুপি চুপি বাসাতে ঢুকলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। আমার ছোট মামার হাতে ধরা খেলাম। অনেক বকাঝকা হলো। তারপরে শাস্তি সরুপ রাতের খানা বন্ধ। কি আর করা। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাইয়া আর আমি ভাবছি। এ অবিচার আর সহ্য হয় না, আমরা কবে যে বড় হবো।
আগের ৩য় পর্বতে আমার যে বোনের কথা উলে্লখ করে ছিলাম। ওরা মাঝে মধ্যে আমাদের বাসায় বেড়াতে আসতো।
আমার শৈশবটা যে কোর্য়াটারে কেটেছে ওখান থেকে আমার নানার বাড়ীর দূরত্বটা খুব বেশী ছিলো না বিধায় প্রায় সারাক্ষনই আমরা এ বাসা থেকে ও বাসা আসা যাওয়া করতাম। আমরা ছিলাম পাঁচ ভাইবোন আর ওরা তিন ভাইবোন। সব মিলিয়ে সাত জন। দেখা যেত সকাল বেলা এক বাসা থেকে লাইন ধরে আমরা অন্য বাসাতে যাচ্ছি। আবার অন্য বাসা থেকে আমাদের বাসায় আসছি। এরকম দেখতে দেখতে একদিন প্রতিবেশীরা আমাদের দেখে রসিকতা করে বললো কি হে ছোট্র হাঁসের ছানার দল ওই বাসাতে যাচ্ছ বুঝি। আমাদের ছোট্র অবুঝ মনে ওই রসিকতা কোন বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলো না। আমরা আমাদের মতোই থাকতে লাগলাম।
আমার বোনরা বেড়াতে এলেই আমরা প্লান করতাম কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াবো। এমনিতে তো কেউ সহজে বাসা থেকে বের হতে দিবে না। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতাম। কেন যাচ্ছি ,কিসের জন্য যাচ্ছি কিছুই বুঝতাম না। শুধু বুঝতাম আমাদের বাইরে যেতেই হবে। আমাদেরকে বাইরের জগৎটা খুব কাছে টানতো বিধায় পুরো এলাকাটা ঘুরে বেড়াতাম ,কখনও বা দোকানে গিয়ে খাবার কিনে খেতাম। ওই হাঁসের মতো চড়ে বেড়ানো আর কি। তারপরে দুপুর বেলাতে চুপিচুপি চোরের মতো ঘরে ঢুকে পড়তাম। এদিকে আমাদেরকে না পেয়ে হয়তো শুধুমাত্র মাইকিং করাটা বাকি থাকতো। বাসায় ঢুকলে পড়ে মামাদের পিটুনি জুটতো এই অধম বেপরোয়া বালিকাদের কপালে। কতক্ষন কেদেঁ কেঁটে আবার সব কিছু ভূলে সেই একই কাজের পূনরাবৃ্ত্তি ঘটতো।
অনেক সময় ভাবতাম আচ্ছা মামারা মরে যায় না কেন, তাহলে আমাদেরকে আর কেউ কিছু বলতে পারবে না, আমরা আমাদের মতো মনের সুখে ঘুরে বেড়াবো। সব কিছুতেই মামাদের বাড়াবাড়ি আর সহ্য হয় না। অসহ্য।
চলবেঃ
বিষয়: বিবিধ
৪২১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন