আমার দূরন্ত শৈশব ও কৈশোরের দিনকাল (৩য় পর্ব)।

লিখেছেন লিখেছেন জারা ০৫ মে, ২০১৩, ০৩:৪৭:১০ দুপুর

এক রৌদ্রস্নাত চমৎকার সকালে আমার পরলোকগত দাদু আমাকে আমার এক কাজিনকে তার বাড়িতে আমাদের বাসায় কি যেন একটা উপলক্ষে নিয়ে আসার জন্য পাঠালো। তখন আমরা আমাদের নানার বাসাতে থাকি। কাজিনের বাড়ি একটু দূরে ছিলো। তাই নানা বাড়িতে বেড়াতে আসা খালাতো বোনটিকে পথ চলার সংগী করে নিলাম। দুজনে পিঠাপিঠি বলা যায়। বোনটি যখনই নানাবাড়িতে বেড়াতে আসতো তখন দূজন মিলে পূরো মফস্বল শহরটা চষে বেড়াতাম মনের নিদারুন আনন্দে। ও আমার খুব প্রিয়দের মধ্যে একজন। আজও আছে এবং আশাকরি ভবিষ্যতেও থাকবে। চমৎকার বোঝাপড়া আমাদের দুজনের মধ্যে। একজনের মনের কথা আরেকজন না বলতেই বুঝতে পারি এই আর কি। তো যা বলতে চাচ্ছিলাম। আমরা বাসা থেকে বের হলাম সকাল দশটার সময়ে। আমাদের একটু আগে আমার বাবাও তার অফিসে চলে গেছিলেন। আমরা দু,বোন অনেকটা গল্প করতে করতে পথ চলছিলাম। আমার কাজিনের বাড়ি যেতে হলে একটা নদী পার হতে হয় ,প্রায় নদীর কাছাকাছি চলে এসেছি এমন সময় কিছুটা লম্বা ও ফর্সা সম্পূর্ন অপরিচিত এক লোক হঠাৎ করে আমাদের দু,বোনের দু,হাত খপ করে ধরে ফেললো । আমরা আচমকা ভয় পেয়ে হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলাম কিন্তু লোকটা আরও শক্ত করে আমাদের হাত চেপে ধরলো। আর বললো তোমাদের বাবা তোমাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন। আমরা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ভাবলাম বাবা তো জানে যে আমরা কাজিনকে আনতে যাচ্ছি।

যদিও আমাদের বয়সটা খুবই কম, দুজনের বয়স আট বছর চলছে। লোকটি সম্পূর্ন উল্টা পথে নিয়ে যাবার জন্য হাত ধরে টানছিলো। একসময় আমার বোন আমাকে ইশারায় লোকটির হাতে কামড়ে দিতে বললো। আমি ও বোনটি সুযোগ

বুঝে লোকটির দু,হাতে এলাহী কামড় বসিয়ে দিলাম। আর কোথায় যায়। লোকটি প্রচন্ড যন্ত্রনায় ককিয়ে উঠে হাত ছেড়ে

দিতেই আমরা একছুটে পালিয়ে চলে আসলাম। আমার কাজিন

কে সব খুলে বলতেই তিনি বললেন, বড় বাচাঁ বেচেঁ গেছিস, ওটা ছেলেধরা ছিলো। ওই সময়ে আমাদের এলাকায় ছেলেধরার উৎপাত খুব বেড়ে গিয়েছিলো। প্রায় সময়ই স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গায়েব হয়ে যেত। আমার বোনটির সুক্ষ বুদ্ধির জোরে আমার সেদিন রক্ষা পেয়েছিলাম।

আজও মহান আল্লাহর কাছে লক্ষ্য কোটি শুকরিয়া করছি।

Praying Praying Praying Praying

পবিএ সিয়াম সাধনার মাসে আমার বাবা বাসাতে ঘোষনা করলেন। আমাদের সব পিচ্চি ভাইবোনদেরকেও রোজা রাখতে হবে এবং নিয়মিত সালাত আদায় করতে হবে। আর খুব সকালে উঠে বাসায় আরবী শিক্ষকের কাছে পবিত্র কোরআন শরীফ পড়তে হবে। যথারীতি আমরা সব ভাইবোন সেহরী খেয়ে সিয়াম সাধনা শুরু করলাম। এমনকি আমার চার বছরের পুচঁকে বোনটাকেও ছাড় দেয়া হয়নি। সারাদিন রোজা রেখে আমরা ছোটরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ইফতারীর ঘন্টা দুয়েক আগে বাবা আমাকে দাদুর রুমে রাখা গাছ পাকা দু,ছড়া কলার মধ্যে যেগুলো পাকা সেগুলো বেছে আনতে বললেন। আমিও দাদুর রুমে ঢুকলাম কলা নিয়ে আসার জন্য।

কলার ছড়াগুলো একটু কাচাঁ অবস্হায় চটের বস্তায় ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিলো ভালোভাবে পাকার জন্য। আমি বস্তার মুখ খুলে ভেতরে হাত দিতে শুধু কলার ছড়াটা হাতে বাজলো। কলার ছিটেফোটাও খুজেঁ পেলাম না। বাবার হুকুম কলা নিয়ে যেতে হবে তাই দ্বিতীয় বস্তাটাও খুললাম ওমা সেখানেও দেখলাম একই হাল। বাবাকে এসে সব খুলে বললাম। বাবা রেগে গিয়ে আমাদেরকে সবাইকে একচোট বকাঝকা করলো, কে এই মহৎ কর্মের জন্য দায়ী। অপরাধী ব্যক্তিকে কোন মতেই ছাড় দেয়া যাবে না। ভাইয়া আর আমি ওই ক্লান্ত অবস্হায়ই মহা উৎসাহ নিয়ে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ধরার জন্য

ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। অনেক খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম এ কাজের জন্য অন্য কেউ নয়। আমাদের মেঝো ভাইটি এই মহৎ কর্মের অধিকারী ব্যক্তি। বেচারা আবার ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না যার দরুন কলাগুলো গায়েব হয়েছে। পরদিন থেকে আমার বাবা মেঝো ভাইকে সিয়াম সাধনা থেকে রেহাই

দিলেন। শেষে কিনা ক্ষুধায় ঘরে রাখা যাবতীয় সব খেয়ে ফেলে এই আশংকায়। মেঝোভাইটা হাফ ছেড়ে বাচঁলো। (ও কিন্তু এখন নিয়মিত রোজা রাখে)।

চলবেঃ

বিষয়: বিবিধ

১৮২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File