আমার দূরন্ত শৈশব ও কৈশোরের দিনকাল (২য় পর্ব)।

লিখেছেন লিখেছেন জারা ০৪ মে, ২০১৩, ০১:১৩:৪৩ রাত

তখন বয়সটা আরও কম, মাএ ক্লাস ওয়ানে পড়ছি। ভাই আর আমি স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথ ধরেছি। পথের মাঝমাঝি আসতেই হঠাৎ করে কাল বৈশাখী ঝড় শুরু হলো প্রচন্ড বেগে।

ভাই আর আমি ভয়ে আতংকে দিশেহারা হয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম। পথে এক লোক দয়া বশত ভাই আর আমাকে তাদের বাসাতে ঢুকতে বললো। ভাই লোকটির কথামত সুবোধ ছেলের মতো তাদের বাসাতে চলে গেলো। আর আমি লোকটাকে এক নজর দেখে ভয়ে জমে গেলাম। কারন লোকটির চোখদুটি অনেক বড় এবং লালচে ধরনের। লোকটি আবারও আমাকে ডাকতেই আমি একছুটে ওখান থেকে পালিয়ে চলে আসলাম। কিছু দূর আসতেই এক রেস্তোরার দয়ালু মালিক আমাকে কোলে তুলে তার রেস্তোরায় নিয়ে গেলেন এবং ততক্ষনে আমি বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে ঠান্ডায় জমে আইসক্রিম হয়ে গিয়েছি। উনি পরম মমতায় আমাকে তোয়ালে দিয়ে মুছে দিলেন। উনি ওনার রেস্তোরার এটা সেটা আমাকে খেতে দিলেন। আমি আতংকে কিছুই খেতে পারছি না । দুচোখ বেয়ে আমার গন্ডদেশ ভিজে যাচ্ছে। উনি আমাকে মামনি সম্ভোধন করে জিজ্ঞেস করলেন, কাদঁছি ক্যানো। আমি কাদঁতে কাদঁতেই বললাম , আমার ভাইটি এক ডাকাতের কবলে পরেছে। লোকটি প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে আমাকে আবারও প্রশ্ন করলেন আমি ডাকাতটিকে দেখেছি কিনা। আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম। লোকটি আমাকে আবারও খাবার খেতে অনুরোধ করলো। আমি টলোমলো চোখে তাকে বললাম আমি খাবো না ,আগে আমার ভাইকে এনে দিতে হবে। লোকটি আমাকে নিয়ে পড়লো মহা সমস্যায়। উনি না পারছেন আমাকে সামাল দিতে আর না পারছেন আমার ভাইকে এনে দিতে। কারন উনি আমার ভাইকে চেনেন না। একটা সময় ঝড় থেমে যেতেই লোকটি আমাকে নিয়ে বাইরে বেরোলেন আমার ভাইয়ের খোঁজ নিতে। পথেই ভাইয়ের দেখা মিলতেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো কিন্তু সেটা মিলিয়ে যেতে খুব একটা সময় লাগলো না। ভাইয়ের সাথে যে সেই ডাকাত লোকটা রয়েছে।

আমি আবারও ঝেড়ে দৌড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিতেই রেস্তোরার মালিক আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখলেন। আমি প্রানপনে পালাবার পথ খুজেঁ চলেছি। মালিকটি বললো মামনি ভয় পেয়ো না উনি ডাকাত নন। কিন্তু আমার বিশ্বাস হলো না। ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে বললো চল বাসায় যাই। লোক দুজন বললো চলো আমরাও তোমাদের বাসায় পৌছেঁ দিয়ে আসি। বাসাতে আসার পরে দেখলাম আমার আব্বু ওনাদের পরিচিত। রেস্তোরার মালিক আমার আব্বু ও আম্মুকে আমাকে নিয়ে তার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতেই আমাকে নিয়ে শুরু হলো আরেকপ্রস্হ দমফাটানো হাসির বন্যা।

আমি আর আমার ভাইয়ের ছোটখাটো একটি দল ছিলো। যাদের কাজই ছিলো স্কুল থেকে ফিরেই যতো রাজ্যের দুষ্টুমি আছে তার সন্ধানে ব্যস্ত থাকা। কোথায় চড়ুই পাখি ডিম পারলো তার হিসেব রাখা। কুকুরের বাচ্চা হয়েছে ,সেই বাচ্চাদের দেখভাল করা। ইট খড়কুটো জোগারযন্ত করে তাদের

থাকার জন্য ঘরবাড়ি করে দেওয়া। গাছে বরই হয়েছে ,অকালেই বরই গুলো পেড়ে খেয়ে ফেলতাম খুব মজা করে।

আমাদের দলে হিন্দু একটি ছেলে ছিলো জয় নামে। খুব সাহসী।

একদিন জয় বললো আমি রান্না করা গরুর মাংস খেয়ে দেখাতে পারি। বললাম তোমার মা বকবে নাতো। ও হাত নেড়ে মাছি তাড়ানোর মতো করে বললো তোমরা আমার মাকে না বললেই হলো। ওর কথামতো আমরা ওকে গরুর মাংস খাইয়েছি। ও রান্না করা গরুর মাংস খেয়ে খুব প্রশংসা করেছিলো। আমরা দলে প্রায় বিশ পচিঁশের মতো ছিলাম। পবিত্র শবে বরাতের সময় আমরা ছোট ছোট মেয়েরা সারারাত্রি নামাজ পড়বো বলে সব একত্র হতাম। হাতে মেহেদি পরতাম। গোসল অজু সেরে সবাই একঘরে নামাজের দাড়িয়ে যেতাম। আর আমার তিন ভাই ও অন্যান্য ছেলেরা যেত মসজিদে নামাজ পড়তে। ভাইয়া বলতো যে ও সারারাত্রি নামাজ পড়বে। হিংসার চোটে আমিও ভাবলাম ভাইয়া সারারাত্রি নামাজ পড়লে আমিই বা বাদ যাবো ক্যানো। মাঝরাত্রে এসে জায়নামাজের উপরেই একটা সময় ঘুমের কোলে ঢলে পড়তাম। আমার ছোট মা কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিতো। আজ এতটা বছর পার হবার পরও কত শবে বরাতের নামাজ আদায় করেছি, তবে সেই কৈশোরের শবেবরাতের মতো আর আনন্দ ফিরে আসে না।

চলবেঃ

বিষয়: বিবিধ

৩০৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File