আমার দূরন্ত শৈশব ও কৈশোরের দিনকাল।(১ম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন জারা ০৩ মে, ২০১৩, ০৫:২৩:৩৭ বিকাল

প্রত্যেকটা মানুষেরই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় তার দুরন্ত শৈশব এবং কৈশোরের প্রানবন্ত দিনগুলো। আমি আমার ওই হারিয়ে যাওয়া সময়গুলোকে ভেবে এখনও খুব আনন্দ অনুভব করি। বড় ভাইয়া আর আমি স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বুর জামার পকেট থেকে দু, একটা টাকা চুরি করে আইসক্রিম ও মুরালি,ঝুড়িভাজা, মনেক্কা নামে কি যেন একটা খাবার কিনে খেতাম। যার মজাই ছিল আলাদা ধরনের।

তখণ চার আনা, পাঁচ পয়সা, আট আনায় অনেক রকমারী খাবার পাওয়া যেত। ওই সময়টাতে যা আমাদের মতো বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত লোভনীয় ছিলো। স্কুল আরম্ভ হতো সকাল ১০ টায়। পদব্রজে দু ভাইবোন স্কুলে চলে যেতাম। স্কুল ছুটি হতো বিকেল চারটার সময়ে। আব্বুর চাকুরীর সুবাদে আমরা কোর্য়াটারে থাকতাম। ওখানে আমাদের সমবয়সি অনেক ছেলে মেয়েরা ছিলো। খুব সকালে ওখানকার মসজিদে আমরা দলবেধে আরবী ও কোরআন শরীফ পড়া শিখতে চলে যেতাম। আর স্কুলের সময়টা বাদে বাকি সময়ে আমরা খেলাধুলায় মগ্ন থাকতাম,কখনও গোল্লাছুট,দাড়িয়াবান্ধা, ছি বুড়ি, কুমির কুমির খেলা আরও কত কি নাম জানা খেলা, কখনও বা পুতুলের বিয়ে। আর আমার দাদুর সবসময়েই আমাদের ভাইবোনদের প্রতি অত্যান্ত সজাগ থাকার কারনে প্রায়ই আমাদের খেলা ভন্ডুল করে দিতো ,যার ফলে আমরা ছোটরা দাদুর উপরে ক্ষেপে লাল হয়ে যেতাম। আজ আমাদের দাদু বেচেঁ নেই। আমাদেরকে নজরদারী করার মানুষটি আজ আমাদের থেকে অনেক দুরে।

সাল, তারিখটা মনে নেই তবে যতদুর মনে পরে আমরা দু ভাইবোন ক্লাস ফোরে পড়ছি। বাসায় প্রথম ভিসিআর নিয়ে আসা হলো। কোয়াটারের প্রায় সবাই আমাদের বাসায় আসা যাওয়া করছে ভিসিআরে ছিনেমা দেখার জন্য। আমরা তখন ছিনেমা বুঝতে পারতাম না। তবে মুরুব্বীরা কাছে দেখলেই আমাদের সরিয়ে দিতো আর বলতো এখানে এসো না। এগুলো দেখার বয়স তোমাদের হয়নি।ইত্যাদি ইত্যাদি। যার ফলে আমাদের জেদ কৌতূহল আরও বাড়লো, ভাবলাম কি এমন জিনিস যা বড়রা দেখতে পারবে আর আমরা দেখতে পারবো না। স্কুলে যাওয়ার পথে দু ভাইবোন শলাপরামর্শ করলাম, যে হয় স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসবো, আর ছুটি না পেলে পালিয়ে বাসায় চলে আসবো। ভাই আর আমি স্কুল থেকে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় প্লান মোতাবেক দু ভাই বোন মিলে বাসায় ফিরবো।

আমরা ভাবনা মতোই কাজ জুরে দিলাম। টিফিন পিরিয়ডে আমি পেটে ব্যাথা করছে বলে আমার হেডমিষ্ট্রেসএর কাছ থেকে ছুটি নিলাম। আর ভাইয়া স্কুল থেকে পালিয়ে চলে আসলো। দু ভাই বোন একসঙ্গে বাসায় ফিরতেই জেরার মুখে পরলাম , এতো তাড়াতাড়ি স্কুল থেকে ফিরলাম কি করে?? তখনকার মতো মিথ্যা বলে পার পেয়ে গেলাম।

বললাম স্কুল আজ তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেছে। বাসাতে সবাই বিশ্বাস করে নিলো। ঝটপট দুপুরের খাবার খেয়ে দু ভাইবোন কেউ দেখার আগেই সোফার নিচে লুকোলাম, কারন সোফার নিচ থেকে খুব ভালো ভাবে টিভি দেখা যায়। আর আমাদের জন্য পূর্বথেকেই নিষেধাগ্ঘা ছিলো, যার দরুন এই ব্যবস্হা ।

ধরা পরার ভয় খুব কম। কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর দেখলাম ভিসিআর চালু করা হলো ,একে একে দর্শনার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়লো। আমরা সোফার নিচে শুয়ে শুয়ে ভিসিআর দেখতে দেখতে কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলো বুঝতেই পারিনি। ইতিমধ্যে আমার এক প্রানের সখী আমার খোজঁ নিতে বাসায় এসে আমার ছোট মার কাছে জানতে চাইলো আমি কোথায়। আমার ছোট মা বললো, কেন তোমাদের না আজ দুপুর বেলাতেই স্কুল ছুটি দিলো। বেরসিক সখী জোর প্রতিবাদের সাথে বললো, না আন্টি স্কুলে তো সাড়ে চারটা প্রর্যন্ত ক্লাস হয়েছে। আমি সোফার নিচে শুয়ে শুয়ে আমার আজ রাতের ফলাফল চিন্তা করছি। আর সাথে সাথে সখীর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছি।ফান্দে পড়িয়া বগা যেমন কান্দে সেই অবস্হা আমার তখন। ঘুচে গেলো আমার জনমের মতো ভিসিআর দেখার স্বাদ আহাঃ। Crying Crying

ক্রমশঃ

বিষয়: বিবিধ

২৮৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File