‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ....( ২৪তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ২১ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:৫৮:১৮ দুপুর
আগের পর্ব:http://www.bdfirst.net/blog/blogdetail/detail/4273/sarwark/71542
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কার্যকলাপ ও ১৯৭২-৭৫ সালের অনুরূপ।
১১। বাংলাদেশ সরকার দেশের জন্য একটি গঠনতন্ত্র তৈরীর উদ্দেশে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের জন্য নির্বাচিত সদস্য নিয়ে একটি গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ছিলেন এজন্য বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত। বাংলাদেশ শাসনতন্ত্র তৈরীর সময় যতটুকু লেখা হতো তা ড. কামাল সাহেব নিয়ে গিয়ে ইন্দিরা গান্দীর অনুমোদন নিতেন। (সূত্র : ইতিহাস সঠিক কথাই বলে, এ কে এম রফিকউল্লা চৌধুরী, পৃ.-৯৪)
কংগ্রেসী ও বামপন্থী কম্যুনিস্ট লালন :
ভারত ১৯৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস ও পাকিস্তানের বাম দলগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করত । কংগ্রেস তো সব সময় অখণ্ড ভারতে বিশ্বাসী, অন্যদিকে কম্যুনিস্ট পার্টির মূল নেতৃত্বে ছিল হিন্দুরা। আর হিন্দুরা বেশিরভাগই সচেষ্ট থাকত ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে। ইতিপূর্বে কংগ্রেসী হিন্দুদের তৎপরতা সম্পর্কে বলা হয়েছে এখন কম্যুনিস্ট তৎপরতা সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য উল্লেখ করা হল-
১। আমাদিগকে সম্বর্ধনা দানকালে কতিপয় ছাত্রের মধ্যে এক চাপা অসন্তোষ লক্ষ্য করলাম। তাহারা ছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসী আত্মগোপনকারী কম্যুনিস্ট পার্টির প্রকাশ্য কর্মী। (জাতীয় রাজনীতি, ১৯৪৫-৭৫, অলি আহাদ, পৃ.-৪৭)
২। ১৭ মার্চ ১৯৪৮ সালে ঢাবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের বেল তলায় অনুষ্ঠিত ছাত্র সভায় সভাপতির ভাষণে অলি আহাদ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কম্যুনিস্টদের উদ্দেশে বলেছেন, “যাহারা কলিকাতায় সদ্য অনুষ্ঠিত ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টির ২য় কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করিয়া বিপ্লবের অলীক স্বপ্নের বার্তা বহন করিয়া আনিয়াছেন এবং ‘ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়’ বলিয়া প্রকাশ্যে গগনবিদারী আওয়াজ তুলিতেছেন, তাহারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।” (প্রাগুক্ত-পৃ.-৪৯)
৩। ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টির পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া পূর্ব পাকিস্তান কম্যুনিষ্ট পার্টি ১৯৫৭ সালে সন্ত্রাসবাদী উন্মাদ পরিকল্পনা প্রত্যাহার করে। (প্রাগুক্ত, পৃ.-৭৪)
৪। সরকারের সহিত সহযোগিতার নীতির আড়ালে ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে কমরেড ভবানী সেন ভারত হইতে ঢাকা আগমন করেন। কোন মহল থেকে বাধাপ্রাপ্ত না হইয়া ঢাকার সদরঘাটস্থ করনেশন পার্কের এক জনসভায় ভাষণ দেন। এমন কি কমরেড মুজাফফর আহমদও কলকাতা হইতে আসিয়া ঢাকার রথখোলা ন্যাশনাল বুক এজেন্সীর দ্বারোদঘাটন করেন। (প্রাগুক্ত, পৃ.-৮২)
৫। সরকার রাষ্ট্রদ্রোহী কম্যুনিস্টদের প্রকাশ্য তৎপরতায় বাধা দিলে আত্মগোপন অবস্থায় কমরেড মনি সিং ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনা মহকুমার দুর্গাপুরে অমুসলিম হাজং এলাকায়, কমরেড ইলা মিত্র, রাজশাহী জেলার নওয়াবগঞ্জ মহকুমার অমুসলমান সাঁওতাল সম্প্রদায় অধ্যুষিত নাচোল এলাকায়, কমরেড সুব্রত পাল সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার অমুসলমান, নমশূদ্র ও দাস সম্প্রদায় অধ্যুষিত সানেশ্বর এলাকায়, পার্টি নেতৃত্ব খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও অমুসলমান নমশূদ্র; প্রধান ধানমুনিয়া এলাকায়, যশোহর জেলার সদর মহকুমা ও নড়াইল মহকুমাভুক্ত বামাপাড়া ও নড়াইল থানার অন্তর্গত জামদিয়া, সেখাটি, তুলারামপুর, নড়াইল ও কলোরা ইউনিয়নগুলির অমুসলমান নমশুদ্র এলাকায় সশস্ত্র কৃষক অভ্যুত্থান ঘটায়। এইভাবে অমুসলিম সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক অন্ধ পাকিস্তান বিদ্বেষকে মূলধন করিয়া পার্টি কমরেডগণ শ্রেণী সংগ্রামের ভাওতা ও দোহাই দিয়া পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটাইবার বহু চেষ্টা করিয়াছে। (প্রাগুক্ত, পৃ ৮৩-৮৫)
৬। ভারতের উত্তর প্রদেশবাসী কমরেড সাজ্জাদ জহিরকে সম্পাদক করে পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের কদর্য অর্থ করিয়া সরকার উৎখাতের উন্মত্ততায় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর উচ্চাভিলাষী সমর নেতাদের চক্রান্তের সহিত জড়াইয়া পড়েন এবং মেজর জেনারেল আকবর খানের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটাইবার চেষ্টা করেন। (প্রাগুক্ত, পৃ. ৮৪)।
৭। কমিউনিস্ট পার্টি নেতৃবৃন্দ অতি সীমিত শক্তি সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রগতিশীল (!) গণআন্দোলনে সক্রিয় অবদান রাখিয়াছেন এবং এই ধরনের প্রতিটি গণআন্দোলনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্তভাবে অংশগ্রহণ করিয়াছেন। সরকারী দমননীতিতে কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন জনসংঘটন যদিও ভাঙ্গিয়া চুরমার হইয়া গেল তবুও তাহাদের সংগ্রামের ফলে সৃষ্ট সরকার বিরোধী মনোভাব আওয়ামী লীগ সংগঠনের অগ্রযাত্রায় বহুলভাবে সহায়তা করিয়াছিল। (প্রাগুক্ত, পৃ.-৮৪, ৮৮)
উপরোক্ত তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পাকিস্তানের জন্মের পূর্বেকার আমের মুকুলে পোকার ডিম এবং ডিম থেকে জন্ম নেয়া আওয়ামী লীগ, ভারত লালিত পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস এবং কম্যুনিস্ট নামধারীরা পাকিস্তানে তথাকথিত ভারতমুখী প্রগতিশীল আন্দোলনের নামে পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করেছে, পাকিস্তানে জাতিবিদ্বেষও ভাষা বিদ্বেষ সৃষ্টি করিয়াছে এবং জেনারেল আকবর খানকে পাকিস্তানের গণতন্ত্র হত্যা করে ক্ষমতা দখল করতে প্ররোচিত করেছে। পরবর্তীতে এই তিন শক্তি একত্রিত হয়ে ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে, স্পিকার হত্যা করে এবং আইয়ুব-ইয়াহিয়ার সাথে আঁতাত করে গণতন্ত্র নস্যাৎ করে পাকিস্তানকে দুই টুকরা করেছে। ’৭১-পরবর্তীতে এরা ভারতের তাবেদার সরকার গঠন করে এ দেশের স্বাধীনতাকামী রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র ও যুবকদেরকে হত্যা করার কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে যা করা হচ্ছে তাও ভারতীয় এজেন্ডা। বাংলাদেশ গ্রাসে যেসব নেতৃবৃন্দ পথের কাঁটা হতে পারে, যেসব দল বাধা দিতে পারে তাদেরকে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করতে চাইছে। জাতির সাথে প্রতারণাকরে, মিথ্যাচার করে, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে এরা ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে।
অসমাপ্ত, চলবে , সাথেই থাকুন
[বই: ‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ-----পৃষ্টা: ৫০-৫২]
পরের পর্ব:
# ইতিহাস জানুন, অন্যথায় অন্ধকারেই থেকে যাবেন
বিষয়: বিবিধ
১৫২১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন