‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ....( ২২তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ১১ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:১৪:৪১ দুপুর
আগের পর্ব: ২১তম পর্ব
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
১৯৪৬ সালের সর্বভারতীয় নির্বাচনী ফলাফল ছিল নিম্নরূপ-
কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের ৩০টি মুসলিম আসনের ৩০টি আসন ও প্রাদেশিক আইন পরিষদ নির্বাচনে আসামে ৩৪টি মুসলিম আসনের মধ্যে ৩১টি, বঙ্গদেশে ১১৯টির মধ্যে ১১৩টি, বিহারে ৪০টির মধ্যে ৩৪টি, উড়িষ্যায় ৪টির মধ্যে ৪টি, যুক্ত প্রদেশে ৬৬টির মধ্যে ৫৫টি, পাঞ্জাবে ৮৬টির মধ্যে ৭৯টি, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ৩৮টির মধ্যে ১৭টি, সিন্ধুর ৩৫টির মধ্যে ২৮টি, বোম্বেতে ৩০টির মধ্যে ৩০টি, মধ্য প্রদেশে ১৪টির মধ্যে ১৪টি, মাদ্রাজে ২৯টির মধ্যে ২৯টি, অর্থাৎ সর্বমোট ৫২৫টি মুসলিম আসনের মধ্যে ৪৬৪টি আসন লাভ করার মাধ্যমে সমগ্র ভারতের মুসলমানরা পাকিস্তানের পক্ষে ম্যান্ডেট প্রদান করে।
উপরোক্ত নির্বাচনী ফলাফলের দ্বারা দেখা যায় যে, ১৯৪৭ সালের পাকিস্তানে ভারতের সকল এলাকার মুসলমানদের সমান হক রয়েছে। সমগ্র ভারতের মুসলমানরা যদি না চাইতো তবে হিন্দুরা কখনও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা মেনে নিত না। সুতরাং যারা সমগ্র ভারতের মুসলমানদের আশা-আকাক্সক্ষাকে পদদলিত করে বলে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা ভুল ছিল, পূর্ব পাকিস্তান ভূখণ্ডে উর্দুভাষী থাকতে পারবে না তারা কি রাতারাতি সমগ্র মুসলিম জাতির সাথে বেঈমানী করে নাই। অথচ ১৯৪৭ সালের পূর্বে হিন্দীভাষী হিন্দুরা যখন বাংলার ৮০ ভাগ ভূমির মালিক ছিল, সকল শিল্প কল-কারখানার মালিক ছিল এবং মুসলমানদেরকে পায়ের তলায় পিষ্ট করছিল সেই অত্যাচারী হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো কথা এসব তথাকথিত মুসলমান নামধারী রাম-বামপন্থী ব্যক্তিরা ৪৭ সালের পর বেমালুম চেপে গিয়ে তাদের হাতে পুনরায় আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। যার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে ১৯৭১ সালে এবং বর্তমান সরকারের আমলে কলকাতার বাবুরা এবং তাদের দোসররা আমাদের দেশের ব্যবসা বাণিজ্য, চাকরির গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দখল করে নিচ্ছে। মুসলমানদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত পাকিস্তানের এবং পাকিস্তানের বাই প্রডাক্ট বাংলাদেশের ভূমি, অর্থ ও সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে একশ্রেণীর তথাকথিত রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরা হিন্দু ভারতের পক্ষে প্রকাশ্য দালালী করছে। এরাই আবার নিজেদেরকে প্রগতিশীল বলে জাহির করছে।
এ প্রসঙ্গে আমার ব্যক্তিজীবনের একটি ঘটনা মনে পড়ে যায়। ঘটনাটি হল পিতার আর্থিক অসুবিধার কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেলে এবং ছোটখাট কোনো চাকরি জোটাতে সক্ষম না হয়ে আমি ১৯৮১ সালের প্রথমদিকে মানচিত্র মুখস্থ করে তদানুযায়ী পাকিস্তান হয়ে ইরান যাওয়ার জন্য রওয়ানা হই। এক পর্যায়ে আমি দুপুর বারটায় পূর্ব পাঞ্জাবের অমৃতসরের একটি জামে মসজিদে যাই। ইচ্ছা ছিল সেখানে ওজু করব, একটু বিশ্রাম নেব এবং খবরাখবর নিয়ে পাকিস্তানের সীমান্তে যাওয়ার বাসে উঠব। আমার সাথে নোয়াখালী নিবাসী একজন বন্ধু ছিল। আমরা মসজিদে ঢুকে ওজু করা শেষ করলে একজন সত্তোরর্ধ ব্যক্তি (সম্ভবতঃ মসজিদের মুয়াজ্জিন বা কেয়ারটেকার) আমাদের পরিচয় জানতে চায়। আমরা বাংলাদেশী মুসলমান বলায় তিনি বললেন, “জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু তোমাদেরকে চাকুরী দিতে পারছে না? তোমাদেরকে দেখলে আমাদের ইচ্ছে করে ব্লেড দিয়ে এঁকে লবণ দিতে। তুমি জান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় পাঞ্জাবের কত লক্ষ মুসলমান শহীদ হয়েছে? আমার একজন ভাইকেও আমি হারিয়েছি। এতদসত্ত্বেও আমাদের একটি সান্তনা ছিল আর তা হচ্ছে আমাদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের ভাইয়েরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পেয়েছে। অথচ তোমরা জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে সেই দেশটাকে ভেঙে হিন্দুস্থানের হাতেতুলে দিয়েছ। এখন আবার চাকুরীর জন্য পাকিস্তান যাচ্ছ। লজ্জা করে না তোমাদের?”
উক্ত বৃদ্ধ লোকটির রাগান্বিত কণ্ঠস্বর ও মুখের ভাব দেখে আমরা ভয়ে আর উক্ত মসজিদে এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। এমন আর একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে ২০১১ সালে হজে গিয়ে। কিছু ভারতীয় হাজীকে যখন বললাম, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, তখন তারা উপহাসের হাসি হেসে বলল, এই নামে কোনো স্বাধীন দেশ আছে নাকি, আমরা তো জানি এই দেশটি এখন হিন্দুস্থানের একটি রাজ্য হয়ে গেছে। এই হলো আমাদের স্বাধীনতার ব্যাপারে ভারতীয় মুসলমানদের মূল্যায়ন। এ মূল্যায়নের বিপক্ষে হয়তো অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু পক্ষে বলার তথ্যও কম নাই। যথা-
১। ইন্ডিয়া যে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র মনে করে না তার বহু প্রমাণ তখন পাওয়া গেছে। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা প্রথম প্রথম বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে রাজ্যপাল বলত। রাজ্যপাল উপাধিটি ইন্ডিয়ার প্রাদেশিক গভর্নরের। বাংলাদেশের প্রেস যখন এ নিয়ে আপত্তি করে তখন ওরা সুর পাল্টে দেয়। (অবশ্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ নিয়ে জোরালো প্রতিবাদ করেনি কেউ)। সূত্র : স্মৃতির পাতা থেকে প্রাগুক্ত পৃ.-২০৯
২। আমি আগে বোধহয় উল্লেখ করেছি যে, শেখ মুজিব দেশে প্রত্যাবর্তনের কিছুকাল পর প্রেসিডেন্টের পদ ত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। তখন জাস্টিজ আবু সাঈদ চৌধুরীকে প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করা হয়। জাস্টিজ চৌধুরী প্রেসিডেন্ট হিসাবে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদককে বাংলাদেশে বেড়াতে আসবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমন্ত্রণলিপি কাগজে বের হয়েছিল। এর ভাষা দেখে আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম যদিও বিস্মিত হইনি। প্রথমত; কোনো দেশের রাষ্ট্র প্রধান একটি পত্রিকার সম্পাদককে এভাবে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন না। এটা প্রটোকলের খেলাপ। দ্বিতীয়ত আমন্ত্রণের ভাষা ছিল একজন প্রার্থীর ভাষা। সম্পাদক মহাশয় এ দেশে এলে তিনি কৃতার্থ হবেন, এ রকম কথা। এই ঘটনার মধ্যে ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সত্যিকার রূপের সন্ধান পেলাম। এ দেশের প্রেসিডেন্টও মনে করতেন কলকাতার একটি পত্রিকার সম্পাদকের মর্যাদা তার উপরে। (প্রাগুক্ত পৃ.-২০৯)
৩। ১৯৯৭ সালে কলকাতার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বারবার মুখ্যমন্ত্রী সম্বোধন করলেও তিনি কোনো প্রতিবাদ না করে মুচকি হেসেছিলেন।
অসমাপ্ত, চলবে , সাথেই থাকুন
[বই: ‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ-----পৃষ্টা: ৪৮-৫০]
পরের পর্ব: ২৩তম পর্ব: Click this link
# ইতিহাস জানুন, অন্যথায় অন্ধকারেই থেকে যাবেন
বিষয়: বিবিধ
১৮৬৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন