‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ....(২১তম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ১০ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:৫৫:০৫ সকাল

২০তম পর্ব: Click this link

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)

এ যুদ্ধে জয়লাভের জন্য ভারতের অনুসৃত পন্থাসমূহ

আমের মুকুলে পোকার ডিম : আমের খোসায় কোনো দাগ নেই। কিন্তু খোসা ছাড়ালে দেখা যায় ভিতরের অংশে বড় বড় পোকা বসে আছে। এমন অবস্থা আমরা প্রায়ই দেখি। এর প্রকৃত কারণ হলো- আমগাছে যখন ফুল (মুকুল) হয় তখন একশ্রেণীর পোকা উক্ত ফুলে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে উক্ত মুকুল যখন আমে পরিণত হয় তখন উক্ত পোকার ডিম আমের মধ্যে অবস্থান করে। আম বড় হতে থাকলে উক্ত ডিম থেকে বাচ্চা হয় এবং আম পাকার সময় দেখা যায় উক্ত বাচ্চা পরিণত বয়স্ক হয়ে আমকে নষ্ট করে স্বরূপে বেরিয়ে আসে। ঠিক তদ্রুপ শত প্রচেষ্টা করেও যখন হিন্দুস্থান-পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় বাধা দেওয়া অসম্ভব মনে করে তখন তারা পাকিস্তানের মুকুলে কিছুসংখ্যক ভারত-বান্ধব ডিম ঢুকিয়ে দেয়। পাকিস্তান যখন নিজস্ব শক্তিতে শিশু থেকে যৌবনে পদার্পণ করে তখন দেখা যায় এসব ডিম থেকে উৎপন্ন বাচ্চারা পাকিস্তানকে ভিতর থেকে নষ্ট করে বাহ্যিক অস্তিত্ব ধ্বংসে মেতে উঠেছে। পাকিস্তান পরিচালনায় দূরদর্শী নেতৃত্বের অভাব থাকায় এসব পোকারা পাকিস্তানকে ভেঙে টুকরা করে দিয়েছে। এতদ্সংক্রান্ত তথ্য নিম্নরূপ :

১. ব্রিটিশ সরকারের ‘বিভেদ করো ও শাসন করো’ নীতির সর্বশেষ ফলশ্রুতিতে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুইটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষিতে এই সময়ের মুসলিম লীগের প্রগতিশীল (!) গ্রুপের অন্যতম উঠতি নেতা হিসেবে শেখ মুজিবের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, এই স্বাধীনতা বাঙালি তথা পূর্ব বাংলার জনগোষ্ঠীর উপর নতুন ধরনের শাসন ও শোষণ চাপিয়ে দেবে। ১৯৪৭ সালের ৩ জুনের পরপরই কলকাতায় ইসলামীয়া কলেজের সিরাজুদ্দৌলা হলে ছাত্র-যুবনেতাদের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগের ‘প্রাসাদ ষড়যন্ত্র’ প্রতিহত করে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আন্দোলন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রাম পরিচালনার অঙ্গীকার ঘোষিত হয়। (যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, পৃ. ১১)

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, যে সময়ে এ রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে সে সময় সমগ্র ভারতে হিন্দুরা হিংস্র হায়েনার মতো মুসলমানদের রক্তে হোলি খেলছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা তখনও নিশ্চিত নয়। ইঙ্গ-হিন্দু শাসক চক্র প্রতিনিয়ত মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। মুসলমানদের এরূপ শোচনীয় অবস্থায় কোনো উঠতি নেতা কিভাবে পাকিস্তানে বাঙালিরা শোষিত হবে এবং নতুন রাষ্ট্রে ‘প্রাসাদ ষড়যন্ত্র’ হবে বুঝতে পারলেন? তদুপরি বিশ লাখ শহীদের রক্ত ডিঙ্গিয়ে তিনি কোন রুচিতে অসাম্প্রদায়িক তথা মুসলিম বিদ্বেষী রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন? তবে কি তিনি ও তার সহযোগীরাই পাকিস্তানী আমের মুকুলে পোকার ডিম ছিলেন? বর্তমান প্রজন্মের পাঠকদের বুঝার জন্য ’৪৭ সময়কালীন পরিস্থিতি সম্পর্কে দু-একটা উদাহরণ দিচ্ছি :

১. আমি থাকতাম আমহার্স্ট স্ট্রীটের সেন্টপল ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ হোস্টেলে। হোস্টেলের নাম ছিল সেন্ট ডেভিড হোস্টেল। কলেজে মাত্র চার-পাঁচজন মুসলমান ছেলে ছিলাম। সবাই হোস্টেলে থাকতাম। ১৯৪৬ সালে দাঙ্গা শুরু হতেই ঢাকা এবং কুমিল্লার দুই সহপাঠী চলে গেল হোস্টেল ছেড়ে। থাকলাম সিলেটের এসএম আলী (বর্তমানে বিখ্যাত সাংবাদিক) এবং আমি। এরপর আলীকেও ওখান থেকে সরিয়ে দেয়া হলো নিরাপদে। থাকলাম একা। প্রফেসর ও সহপাঠীরা সকলেই সহানুভূতিশীল ছিলেন। দিন-রাত বিভীষিকা চারদিকে। (স্মৃতির পাতা থেকে, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৮)

২. আমি কলকাতা থেকে স্টীমারে খুলনায় এলাম। পথে কয়েকজন কলেরায় মারা গেল। আমার ভাই সারা রাত রেল স্টেশনে কলকাতা থেকে ট্রেনে আসা মোহাজেরদের সাহায্যের কাজ করেছেন। পথে রিকশায় শুনলাম, ডাকবাংলোয় মওলানা আকরম খাঁ সাহেব আছেন। গেলাম সেখানে। দেখলাম কয়েকজন যুবক এবং আরো অনেকে বেশ উত্তেজিত আলাপ-আলোচনা করছে। বিষয়, রাতে কলকাতা থেকে আসা ট্রেনে জীবন্ত মানুষ পাওয়া যায়নি। মানুষের লাশ, কাটা মাথা, হাত, পা, জুতা আর রক্ত এই নিয়ে ট্রেনটি এসেছে। (প্রাগুক্ত-পৃ. ৬১)

সর্বোপরি সমগ্র ভারতের মুসলমানদের ভোটে যে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে মুসলমানদের আবাসভূমি হিসাবে, সেখানে এই উঠতি নেতার অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রচেষ্টা কি তদানীন্তন ১০ কোটি ভারতীয় মুসলমানের আশা-আকাক্সক্ষা বিরোধী এবং হিন্দুস্তানের আকাক্সক্ষার পক্ষে নয়।......

অসমাপ্ত, চলবে , সাথেই থাকুন


[বই: ‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ-----পৃষ্টা: ৪৬-৪৮]

পরের পর্ব: Click this link

# ইতিহাস জানুন, অন্যথায় অন্ধকারেই থেকে যাবেন ।

বিষয়: বিবিধ

১৪১২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

349278
১০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:১৫
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনার আজকের লেখায় আমার শৈশবের কলকাতার ম্যাপ আবছা হয়ে ভেঁসে উঠল৷ ধন্যবাদ৷ সাথে আছি৷
১১ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:১১
289982
দূর্বল ঈমানদার লিখেছেন : লেখাটি আমার নয়, এম.আবদুল্লাহ সাহেবের ।
নিশ্চয় তিনি একজন দু:সাহসিক লেখক ।
349297
১০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : দ্বিতিয় উদ্ধিৃতি কি পি.এ নাজির এর বই থেকে?
১১ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:১৩
289983
দূর্বল ঈমানদার লিখেছেন : এখানে সূত্রে উল্লেখিত বই থেকেই হুবহু প্রকাশ করা হচ্ছে ।
ধন্যবাদ আপনাকেও ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File