‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ....(২০তম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ০৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:২৮:৫৬ দুপুর

আগের পর্ব: আগের পর্ব: ১৯তম পর্ব

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)

ইঙ্গ-মার্কিন শাসন-শোষণে সমগ্র পূর্ব বাংলাই ছিল অজ-পাড়াগাঁ। এই অজপাড়াগাঁকে দেশ বানিয়ে আধুনিক দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সকল অবকাঠামো নির্মাণ করে, লাখ লাখ প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজার হাজার হাইস্কুল, শত শত কলেজ, বেশ কিছুসংখ্যক মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল ও কলেজ, মেরিন একাডেমী, পলিটেকনিক স্কুল ও কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে পাকিস্তানের ২৪ বছরে। এতদ্সত্ত্বেও ভারতসৃষ্ট আওয়ামী লীগ ও ভারত লালিত বাম দলসমূহ এবং বিক্রিত বুদ্ধিজীবীরা সম্পূর্ণ মিথ্যাচারের মাধ্যমে

> বাংলা-উর্দু বিরোধ সৃষ্টি করেছে,

> মোহাজের-আনসার জাতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছে,

> কল্পিত শোষণের গল্প ফেঁদেছে এবং এক পর্যায়ে ইয়াহিয়া খান নির্বাচিত দলের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি- এমন মিথ্যা অজুহাতে ২০ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত পাকিস্তানকে ভারতের নীল নকশা মোতাবেক ভেঙে দু-টুকরা করেছে এবং ৭ দফা ও ২৫ সালা চুক্তির মাধ্যমে দেশকে তাবেদার বা আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করেছে।

ভারত ও ভারতের সহযোগিরা এখানেই থেমে থাকেনি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংসতায় সাধারণ বিক্ষুব্ধ যুবকরা আওয়ামী লীগ ও ভারতের প্রতারণামূলক প্রচারণায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলে ভারত ব্রাহ্মণ্যবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত মুজিব বাহিনীর মাধ্যমে দেশের ইসলামপন্থী নেতৃবৃন্দকে হত্যা করতে শুরু করে। ১৬

ডিসেম্বরের পর সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে ফিরে গেলেও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সদস্যরা এবং মস্কোপন্থী কম্যুনিস্টরা এদেশের প্রতিরোধ শক্তিকে চিরতরে নির্মূল করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাইকারীভাবে হত্যা-নির্যাতন শুরু করে এবং মোহাজের ভাইদের ভিটেমাটি, সহায়-সম্বল কেড়ে নিয়ে তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, তারা দেশের প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে দেশকে অকার্যকর করার জন্য সকল ইউনিয়ন পরিষদে ভেঙে তদস্থলে রিলিফ কমিটি গঠন করে নিজেদের দলীয় লোকজন দিয়ে। উক্ত রিলিফ কমিটির লুটপাট সম্পর্কে এদেশের চল্লিশোর্ধ্ব সবাই অবহিত আছেন।
এ ছাড়া মেধাবী শিক্ষকদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া করা হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে মেধাবী ও দেশপ্রেমিকদেরকে বিতাড়িত করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। এখনও তাদের এরূপ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এতদ্সংক্রান্ত তথ্য নিম্নরূপ :

১. ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সামরিক বাহিনীর হাতে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর নবজাত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দেশের কল্পিত ও পরিকল্পিত শত্রু নিধনের এক নরমেধযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় বেশ কিছুদিন ধরে। এ যজ্ঞে নিহত নিরীহ দেশবাসীর সংখ্যা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান বাহিনীর হাতে নিহতদের বহুল প্রচারিত সংখ্যার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। যুদ্ধাবসানের পূর্বেও অতর্কিত আক্রমণে বহু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়।... এই নরমেধযজ্ঞের সাথে সাথে ঢালাওভাবে হাজার হাজার দেশবাসীকে পাকড়াও করে জেলে ঢুকানো হয় দেশের শত্রু অপবাদে। মনে পড়ে জানুয়ারি (১৯৭২) শেষে যখন আমাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয় তখন সেখানে আবদ্ধ ব্যক্তিদের সংখ্যা ছিল দু-হাজারের একটু বেশি। এক সপ্তাহের মধ্যে এ সংখ্যা দাঁড়ায় তেইশ হাজারে। উল্লেখ্য, তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দু-হাজার বন্দী রাখার ব্যবস্থা ছিল। সে সময়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে আবদ্ধ এ সকল কয়েদীর দুর্ভোগ ও দুরবস্থা বর্ণনাতীত। আওয়ামী লীগ বহির্ভূত এমন কোনো নেতা বা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন না যাদেরকে দেশের শত্রু অপবাদে কারারুদ্ধ করা হয়নি।
শুধু মুসলিম লীগ নয়- ভাসানী ন্যাপ, কৃষক প্রজা পার্টি, খিলাফতে রব্বানী, জামায়াতে ইসলামীসহ সকল দলের নেতা ও কর্মীদের ঢালাওভাবে পাকড়াও করা হয়েছিল।
(ড. মোহর আলী, প্রগুক্ত)

২. ১৬, ১৭, ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ মহা উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটে। তখন চারদিক থেকে শুধু হত্যাকাণ্ডের খবর আসছিল। পাকিস্তান সমর্থক বলে যাদের উপর সন্দেহ হয়েছে তাদেরকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ছিল হাজার হাজার বিহারী ও বহু বাংলাদেশী মুসলমান। (একাত্তরের স্মৃতি, ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন, প্রক্তন ভিসি, ঢাবি, ও রাবি, পৃ. ১৪৮)

৩. জয় বাংলা বলতে অস্বীকার করায় বহু লোককে জবাই করা হয়। দাড়িওয়ালা লোক দেখলেই গেরিলারা ধরে নিয়ে যেত যে, সে হয় মুসলিম লীগ নয়তো জামায়াতে ইসলামী। এভাবে যে কত লোক নিহত হয় তার হিসাব কেউ জানে না। (প্রাগুক্ত, পৃ. ১৭৩)

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, হিন্দু ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করে যারা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান এনেছিল, তাদেরকেই ১৯৭১ সালে বলা হলো স্বাধীনতাবিরোধী এবং তাদেরকে হত্যা করা হলো। অথচ পূর্ব পাকিস্তান যদি পাকিস্তানের অংশ না হয়ে ’৪৭ সালে ভারতের অংশ থাকতো তবে ভারত কি পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা প্রদান করতো, নাকি কাশ্মীরীদের মতো অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে পদতলে পিষ্ট করতো। এ জন্য তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ নয়াদিল্লিতে বিদেশী সাংবাদিকদের বলেছিলেন এর মাধ্যমে ভারত মুসলমানদের বিরুদ্ধে হাজার বছরের বদলা নিয়েছে। এই বদলা নেয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল ’৪৭ পূর্ব অজ্ঞ-মূর্খ-ভিক্ষুকদের সবল ও শিক্ষিত সন্তানেরা। এদেরকে সবল ও শিক্ষিত করেছিল পাকিস্তান। পশ্চিবঙ্গের মুসলমানরা সংখ্যায় ২৪% হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোনো আওয়াজ করার ক্ষমতা এখনও হয়নি।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, হীনযানী-মহাযানী বিভেদ সৃষ্টি করে ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত যেভাবে ভারতবর্ষের শাসনক্ষমতা থেকে ও ভারত থেকে বৌদ্ধদেরকে উৎখাত করেছিল, ঠিক সেভাবেই ভারত তার চক্রান্ত দ্বারা পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে মৌলবাদী ও প্রগতিশীল ধারা সৃষ্টি করে তাদেরকে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ লাগিয়ে পাকিস্তানকে দুই টুকরা করেছে। ’৭১ পরবর্তীতে ভারত আবার ১৭৫৭ এর ন্যায় ইউরোপীয়দেরকে ডেকে এনে বাংলাদেশ থেকে এবং পাকিস্তান থেকে মুসলিম শাসন ও মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন করার কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তার এই এগিয়ে চলার সহযোগীরা হচ্ছে মুসলমান নামধারী তথাকথিত প্রগতিশীলরা। এ জন্যই ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কংগ্রেস ১৯৯৩ সালের কংগ্রেস সম্মেলনে বাংলাদেশের এই দ্বন্দ্বকে প্রগতিশীল ও মৌলবাদীদের শেষ যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং এতে তাদের সহযোগীদের পক্ষে লড়াই করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। সুতরায় দেখা যাচ্ছে, ১৯৭১ সালের পূর্ব-পশ্চিম লড়াইটা ছিল ভারতের লড়াই এবং বাংলাদেশের বর্তমান লড়াইটাও অখ- ভারত প্রতিষ্ঠার লড়াই। এই চূড়ান্ত লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের জয়লাভ মানে ব্রাহ্মণ্যবাদের জয়লাভ এবং মৌলবাদীদের জয়লাভ মানে ইসলাম ও মুসলমানদের জয়লাভ এবং বাংলাদেশের জয়লাভ।.......
অসমাপ্ত, চলবে , সাথেই থাকুন


[বই: ‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ-----পৃষ্টা: ৪৪-৪৬]

পরের পর্ব: ২১তম পর্ব: Click this link

# ইতিহাস জানুন, অন্যথায় অন্ধকারেই থেকে যাবেন ।

বিষয়: বিবিধ

১৪২২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

349067
০৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৬
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ভালো লেখা মানুষ কমই পড়ে চালিয়ে যনি খুবই ভালো লাগলো আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
০৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:৫০
289715
দূর্বল ঈমানদার লিখেছেন : আমার বিশ্বাস এই লেখাকে একদিন ব্লগার তথা ঐতিহাসিকগণ একদিন মূল্যায়ণ করবেন । এখন কেউ পড়ুক বা না পড়ুক যারা এর মূল্যা বুঝতে পারবে তারা ঠিকই সব পর্ব পড়ে নিবেন । আপনাকে ধন্যবাদ ।
349090
০৯ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪২
শেখের পোলা লিখেছেন : পুরাণো ক্ষতটা আবার উস্কে দিলেন৷ সেদিনের সে চাক্ষুস ইতিহাসের ভার আজও বয়ে বেড়াচ্ছি৷ কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক, পড়ুক আর না পড়ুক আপনার সত্য লিখন যেন থেমে না যায়৷ ধন্যবাদ৷
১০ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০২
289864
দূর্বল ঈমানদার লিখেছেন : চাক্ষুস ইতিহাসের যা বয়ে বেড়াচ্ছেন তা সবাইকে জানান ।
আমার লেখা থাকবে না ইনশাআল্লাহ । দোয়া করবেন ।
১০ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০২
289865
দূর্বল ঈমানদার লিখেছেন : আমার লেখা থামবে না ইনশাআল্লাহ
349156
০৯ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১১:২১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১০ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০৩
289866
দূর্বল ঈমানদার লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ।
349263
১০ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:০০
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : ইতিহাস বড়ই নির্মম
১১ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৫৫
289957
দূর্বল ঈমানদার লিখেছেন : Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File