‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ....(১৯তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ০৮ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:৩৯:৪৬ সকাল
আগের পোষ্ট: ১৮তম পর্ব:
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
৩. বাস্তবে কম্যুনিজম ও সমাজতন্ত্রের কাজ হচ্ছে নীতি-নৈতিকতাহীন বিফল ও হতাশ মানুষকে সাফল্যের পথ ধরানো, আর প্রতিষ্ঠিত ও সবল মানুষকে সর্বশ্বান্ত করা।
ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত উপমহাদেশের মুসলমান যুবকদেরকে সরাসরি হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করা সম্ভব নয় জেনে প্রথমে তাদেরকে কম্যুনিজম বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে দীক্ষিত করে অতঃপর গান্ধী ও বলরাজ মোদকের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী তাদেরকে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে গড়ে তোলে, অতঃপর তাদেরকে নিজ ধর্ম ও জাতির বিরুদ্ধে কাজে লাগায়। অথচ হিন্দু-বৌদ্ধ-ইহুদি-খ্রিস্টান কম্যুনিস্টরা কিন্তু নিজ ধর্ম-দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কখনো শত্রুতা করে না।
তথাকথিত কম্যুনিস্ট ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের আন্দোলন যে ভারতেরই আন্দোলন ১৯৯৩ সালে ভারতীয় কংগ্রেস প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে। ১৯৯৩ সালের ২২ জুন নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সমন্বয় কমিটির ৮ম বিশেষ সাধারণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনের রাজনৈতিক মূল্যায়নে বলা হয়-
“বাংলাদেশে দুই শক্তির মধ্যে যুদ্ধ চলছে। সম্ভবত এটাই শেষ যুদ্ধ। একদল চাইছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। অপর দল চাইছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার (১৯৭১) অধ্যায় মুছে ফেলতে এবং প্যান ইসলামিক স্রোতের সাথে মিশে যেতে। অশুভ মৌলবাদী শক্তিগুলো সুপরিকল্পিত লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে। ...একটি আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের প্রগতিশীল শক্তির পতাকা সমুন্নত রাখতে ভারতের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে।
(বাংলাবাজার পত্রিকা, ২৩ আগস্ট ১৯৯৩)
ভারতের বৌদ্ধ শাসন এবং বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা যে কৌশল অবলম্বন করেছিল তা ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে। তার মূল কথা ছিল তারা বৌদ্ধকে নিজেদের অবতার ঘোষণা দিয়ে বৌদ্ধদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে বৌদ্ধ জনসমাজে ভাঙন ধরিয়েছিল। যারা ব্রাহ্মণ্যবাদী ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছিল তাদের নাম দেয়া হয়েছিল মহাযানী বৌদ্ধ আর যারা অকৃত্রিম বৌদ্ধ মতবাদকে আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিল তাদেরকে নাম দেয়া হয়েছিল হীনযানী বৌদ্ধ। এরপর হীনযানী-মহাযানী দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করে বৌদ্ধদেরকে হীনবল করে এবং একপর্যায়ে উভয় প্রকার বৌদ্ধদের উপর চূড়ান্ত হামলা করে ভারতবর্ষ থেকে বৌদ্ধ শাসন ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে সক্ষম হয়।
ঠিক তদ্রুপ ভারতবর্ষ থেকে মুসলিম শাসন বিলুপ্ত করার জন্য ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি ইংরেজদেরকে ডেকে এনে এদেশের ক্ষমতায় বসায় এবং দীর্ঘ ১৯০ বছর যাবত চরম অমানবিক হত্যা-নির্যাতন-ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েও মুসলমানদেরকে ধ্বংস করতে সক্ষম না হয়ে অবশেষে ১৯৪৭ সালে বিশাল ভারতের দুই প্রান্তে ২টি ক্ষুদ্র ভূখণ্ড মুসলমানদেরকে ছেড়ে দিয়ে বৃহৎ ভারত থেকে মুসলমানদেরকে বিতাড়িত করে। বিতাড়িত মুসলমানরা সহায়-সম্পদ-ভিটেমাটি ত্যাগ করে ১ কাপড়ে এই দুই ভূখণ্ডে আশ্রয় নেয় এবং এদেশকে (পাকিস্তান) গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করে। ভারত থেকে বিতাড়িত মোহাজের সম্প্রদায়ই নিজেদের পুঁজি, মেধা, শ্রম দিয়ে পাকিস্তানকে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশে পরিণত করে।
পাঠকবৃন্দের নিশ্চয়ই জানা আছে, ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা ছিল অশিক্ষিত, মূর্খ, চাষির দেশ। তখন পূর্ব-পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের সম্মিলিত সৈন্য ১ হাজারেরও কম ছিল, ৪টি কটন মিল ছিল হিন্দু মালিকানায়, ৮০% জমির মালিক ছিল হিন্দু জমিদারগণ, নৌবন্দর, বিমানবন্দর, পাকা সড়ক ছিল অনুপস্থিত। নতুন সরকারের বসার কোনো জায়গা ছিল না। টিনশেড পলাশী ব্যারাককে করা হয়েছিল সচিবালয়, ডিসি অফিস, এসডিও অফিস, এসপি অফিস থেকে আরম্ভ করে সকল সরকারি অফিস স্থাপন করতে হয়েছিল দোচালা টিনের ঘরে অথবা কোনো হিন্দু ব্যবসায়ীর পাটের গুদাম ঘরকে রিকুইজিশন করে। ডিসি, এসপি, এসডিওর জন্য ছিল না কোনো গাড়ি। কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোধগম্য হবে।
১. পাকিস্তান কায়েম হবার পর শুনেছি, একরাতে রমনা রেস্ট হাউস বানানো হয়েছিল সেক্রেটারি সাহেবদের বাসস্থানের জন্য। (স্মৃতির পাতা থেকে, পিএ নাজির, পৃষ্ঠা-১৪৮)
২. পিএ নাজির ১৯৫৫ সালের সিরাজগঞ্জ মহকুমার এসডিওর অফিস সম্পর্কে বলেন, “এসডিও বাসাটা নাটোরের বাসার চেয়ে ভালো বলতে হবে। কিন্তু এসডিওর কোর্ট, চেম্বার, ইংলিশ অফিস এবং সাধারণ অফিসের অবস্থা শোচনীয়। একটা মেটারনিটি সেন্টার করার উদ্দেশ্যে দোতলা বিল্ডিং হচ্ছে। এসডিও কোর্ট এবং এজলাস এবং আরো দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাস হলো এই বাড়িতে। এসডিও চেম্বার হলো ঐ বিল্ডিংয়ের দোতলার একটি গোসলখানায়। ইংলিশ অফিস হলো একটি পাটের গুদামের টিনের দোচালায়।” (প্রাগুক্ত-৬১)
৩. ১৯৫৪ সালেও মহকুমা প্রধান অর্থাৎ এসডিওর যোগাযোগের বাহন ছিল সাইকেল। পিএ নাজির তখন নাটোর মহকুমার এসডিও ছিলেন। তিনি লিখেছেন- “এই আমন্ত্রণের জন্য সত্যিই প্রস্তুত ছিলাম না। কাজ বাতিল করে সাইকেল হাঁকিয়ে গেলাম রাজার পিসিমার বাড়ি। (প্রাগুক্ত পৃ-৩৩)
৪. ভারতীয় কংগ্রেসের পূর্ব পাকিস্তান শাখার নেতা ১৯৫৪ সালেও কিভাবে এদেশের অগ্রগতিকে বাধা দিয়েছেন তার বর্ণণা করেছেন পিএ নাজির এইভাবে- “খোঁজ নিয়ে জানলাম নাটোরের এসডিওর হাতে নিপীড়িত হিন্দুদের মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই ভদ্রলোক। বাড়ি তার বগুড়ায়। তিনি উত্তরবঙ্গে ভারতীয় (বর্তমান পূর্ব পাকিস্তানের) ন্যাশনাল কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা এবং ইনি যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মনোরঞ্জন ধরের অতি প্রিয়পাত্র। (পিএ নাজির, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৪৯).......
অসমাপ্ত, চলবে, সাথেই থাকুন
[বই:‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ....পৃষ্টা:৪২-৪৪]
পরের পর্ব:২০তম পর্ব
বিষয়: বিবিধ
১০৭৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ খায়ের
মন্তব্য করতে লগইন করুন