‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ....(১৫তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ০২ নভেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫৯:৫১ সন্ধ্যা
আগের পর্ব: আগের পর্ব: ১৪তম পর্ব
জাতীয় পর্যায়ে ভারত মানস- এতক্ষণ বর্তমান ভারত মানস গঠনের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মানস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখন ভারতীয় হিন্দুদের গণমানস সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য তুলে ধরছি।
(ক) ১৯৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় আসার সময় হিন্দুবাদী রাজনীতির ভিত্তি ছিল উত্তর ভারত ও মহারাষ্ট্রের শিক্ষিত ও হিন্দু জাতীয়তাবাদে লালিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। কিন্তু ভারতে সত্তরের দশক থেকেই স্বাধীনতা ও দেশ বিভাগের পর সৃষ্ট গ্রাম ও শহর উভয় এলাকায় মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে আগত নতুন প্রজন্ম হিন্দু পুনরুত্থানবাদী আন্দোলনের প্রতি ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট হয়েছে। সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ সেখানে এমন একটা সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে যাতে এই নতুন প্রজন্ম হিন্দুবাদের অনুসরণ এবং একে সহযোগিতা দানকে মর্যাদা ও অস্তিত্বের স্মারক বলে মনে করছে।
(Hindu Politics, Satyabrata Raj Chowdhury, Statesman, March 19, 1993
(খ) ১৯২০ সালে ‘হিন্দু মহাসভা’ গঠনে যার সূত্রপাত ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২তে বাবরী মসজিদ ধ্বংসে তার ক্রান্তিকাল শাখায়-পল্লবে বিস্তারিত হয়ে ‘জনসংঘ’ ভারতীয় জনতা পার্টি, বজরং দল, শিবসেনা, আমরা বাঙালি, সন্তানদল, আরএসএস বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ইত্যাদি নামে একটি বীভৎস দানবিকতা বিকট রক্তাক্ত নখদণ্ড মেলে আজ ভারতবর্ষের মানসিকতাকে গ্রাস করতে উদ্ধ্যত। ...কথায় ও লেখায় প্রায়ই শোনা যাচ্ছে, ভারতবর্ষে মুসলমানরা বহিরাগত, ভারতবর্ষে নেহাৎই যদি তারা থাকতে চায় তো দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ও চিহ্ন বহন করে চলতে হবে। ...হিন্দুই একমাত্র খাঁটি ভারতীয়। বছর দশেক আগে প্রথম বিশ্বহিন্দু পরিষদের যে বিরাট সমাবেশ হয় দিল্লিতে, তখন চার-পাঁচ হাত লম্বা অক্ষরে দিল্লির ইতস্ততঃ বিরাট দেওয়াল জোড়া বিজ্ঞপ্তি (ইংরেজিতে) দেখা যায়- “সকল অহিন্দুই অভারতীয়।” সম্প্রতি শিবসেনা নেতা এর চেয়েও বড় কথা বলেছেন। তা হলো- মুসলমানরা ভারত না ছাড়লে লাথি মেরে তাদেরকে ভারত ছাড়া করা হবে। (সূত্র : ভারতবর্ষে আগন্তুক মুসলমান, সুকুমার ভট্টাচার্য, একালের রক্তকরবী, শারদ সংখ্যা, কোলকাতা-১৪০০ সাল)
(গ) ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এবং হিন্দুরা ১৯৪৭-এর ভারত বিভাগ কি উদ্দেশ্যে মেনে নিয়েছে সে সম্পর্কে কয়েকটি ঐতিহাসিক তথ্য এখানে উল্লেখ করা হলো-
১. জেনারেল টুকার ’৪৭ সালের ভারত বিভাগ মেনে নেয়ার সময় হিন্দু মানস কিরূপ ছিল তা লিখেছেন এইভাবে- “অবশেষে তারা বললেন, আচ্ছা মুসলিম লীগ যদি পাকিস্তান পেতে চায়, তা ঠিক আছে পেতে দাও। আমরা তাদের অঞ্চলের একটি ইঞ্চি কেটে কেটে নিয়ে নেবো যাতে মনে হবে যে, তা আর টিকে থাকবে না। যতটুকু থাকবে ততটুকু দিয়ে টেকসই দেশ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। (Sir Francis Tuker, while memory serves, London, Cassell, 1950, P.-257)
(২) সর্দার প্যাটেল ১৯৪৯ সালে ভারতের গণপরিষদে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, আমি সর্বশেষ উপায় হিসেবে দেশবিভাগে সম্মত হই, যখন আমরা সব হারিয়ে ফেলেছিলাম। মি. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কাঁটছাট করা পাকিস্তান চাননি কখনো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাই তাকে গিলতে হলো।
(Quoted in kewni L. Panjabi, The Indesmiable Sarder, Bombay, Bharatia Vidya Bhaban, 1962, P.-124)
৩. তদানীন্তন ভারতের ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ও সীমানা চিহ্নিতকরণের দায়িত্বে নিয়োজিত র্যা ডফ্লিকের সাথে ষড়যন্ত্র করে গান্ধী, প্যাটেল, নেহেরুসহ হিন্দু নেতারা যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেন তা হলো-
(ক) হিন্দুস্তান বা ইন্ডিয়ান ইউনিয়নকে ভারতে ব্রিটিশ সরকারের উত্তরাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। পাকিস্তানকে মনে করা হবে যে, কিছু অঞ্চলসহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
(খ) পাকিস্তানের সাথে যেসব এলাকা সংশ্লিষ্ট করা হবে তা হবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র এবং তা পূর্ববাংলা, পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে। সীমান্ত প্রদেশ পাকিস্তানের বাইরে থাকবে। ফলে পাকিস্তানকে কৌশলগতভাবে ঘিরে রাখা যাবে।
(গ) সময়, উপায়-উপাদান, সামরিক-বেসামরিক জনশক্তি ও মালমশলা থেকে পাকিস্তানকে বঞ্চিত করে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে যাতে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারে।
(ঘ) পাকিস্তান যাতে টিকে থাকতে না পারে তার জন্য যা কিছু করা দরকার তা করা হবে। কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ নিশ্চিত ছিলেন যে, পাকিস্তান বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না। এ জন্য তাদের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের অর্থনীতি ধ্বংস করা। (Chowdhury Mohammad Ali, The Emergence of Pakistan, PP. 123-124)
বই:‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ , লেখক-এম.আবদুল্লাহ.. পৃষ্টা:৩৪-৩৬
[অসমাপ্ত, চলবে, সাথেই থাকুন ]
পরের পর্ব: ১৬তম পর্ব
বিষয়: বিবিধ
৯৫২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন