‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ....(১২তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ২৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৪৫:৫১ দুপুর
আগের পর্ব: ১১তম পর্ব
ভারত মানস- ভারত মানসকে বুঝতে হলে ভারতে বর্তমানে পূজিত জাতীয় বীর, জাতীয় নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের মানস বুঝতে হবে। প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি না করার জন্য আমি উদাহরণ হিসেবে কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির মানস সম্পর্কে আলোচনা করবো যাতে ভারত মানস উপলব্ধি করা যায়।
১. সম্রাট আকবর, শাহজাহান পুত্র দারাশিকোকে ভারতীয় হিন্দুরা ইসলামবিরোধী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। আকবর প্রবর্তিত তথাকথিত দ্বীন-ই-ইলাহী ধর্মে হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান সঠিকভাবে পালনের নিয়ম ছিল- কিন্তু সকল ইসলামবিরোধী রীতিনীতিতে সমৃদ্ধ ছিল। ভারতীয় হিন্দুরা মোগল শাসকদেরকে নিজেদের বোন ও কন্যাদেরকে দান করে ব্যস্ত রেখে শাসনকার্যের গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ এবং অর্থ বিভাগ দখল করতে সক্ষম হয়েছিল। হিন্দুদেরকে আপন করার জন্য এবং তাদের আকাক্সক্ষা পূরণে আকবর ইসলামের বিপক্ষে যাওয়া সত্ত্বেও হিন্দু মানসিকতা আকবরকে আন্তরিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ একটি ছোট ঘটনা তুলে ধরছি। ঘটনাটি হলো- মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহ তার পুত্র উদয় সিংহ এবং তার পুত্র প্রতাপ সিংহ বংশানুক্রমিকভাবে আকবরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন। তারা কেউ আকবরকে কন্যাদানপূর্বক বশ্যতা স্বীকার করেননি। দীর্ঘ যুদ্ধে পর্যুদস্ত উদয় সিংহ একপর্যায়ে আকবরের নিকট বশ্যতাসূচক পত্র লিখলে আকবরের সভাসদ ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয় (সম্রাট জাহাঙ্গীরের শ্বশুর বিকানীরের রাজা রায় সিংহের কনিষ্ঠ) পৃথ্বিরাজ এক গোপন পত্রে প্রতাপ সিংহকে লিখেন, “আমরা রাজপুতরা আকবরের অধীনতা স্বীকার করে এবং কন্যা দিয়ে অধঃপতিত হলেও আপনার জন্য গর্ব করি। একদিন সম্রাট আকবরকে মরতেই হবে। তখন আমাদের দেশে খাঁটি রাজপুত বীজ বপনের জন্য আমরা আপনার নিকটেই উপস্থিত হবো। রাজপুত জাতি আপনার মুখের দিকে চেয়ে আছে। এই চিঠি পাওয়ার পর উদয় সিংহ আকবরের নিকট বশ্যতা স্বীকারে বিরত হয়।
(সূত্র : জাতির উত্থান-পতন সূত্র, এসএম নজরুল ইসলাম, পৃষ্ঠা-২৭)
২. সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমল থেকে মারাঠা দস্যু সর্দার শিবাজী সমগ্র ভারতের মুসলিম জনপদে লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মুসলিম শক্তির ক্ষতিসাধন করে। মোগল শাসনের যবনিকা পর্যন্ত মারাঠা, জাঠ, বর্গী ও শিখদের নেতৃত্বে ভারতব্যাপী দস্যুতা ও মুসলিম হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে জাতি গঠনের জন্য যখন একজন জাতীয় বীরের প্রয়োজন হলো তখন হিন্দু মানসিকতা তাদের জাতীয় বীর হিসেবে বেছে নেয় অগণিত মুসলমান হত্যাকারী দস্যু সর্দার শিবাজীকে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যেসব হিন্দু বীর যুদ্ধ করেছে তাদের কাউকে জাতীয় বীর হিসাবে নির্বাচিত করেনি। হিন্দু বিশ্বের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই দস্যু সর্দারের জন্য কবিতা লিখলেন-
ক) সেদিন শুনিনি কথা, আজি মোরা তোমার আদেশ শির পাতি লব
কণ্ঠে কণ্ঠে বক্ষে বক্ষে ভারতে মিলিবে সর্বশেষ ধ্যানমন্ত্র তব
এক ধর্ম রাজ্য হবে এ ভারতে এ মহাবচন করিব সম্বল।
খ) মারাঠীর সাথে আজি হে বাঙালি এক কণ্ঠে বল জয়তু শিবাজী
মারাঠীর সাথে আজি হে বাঙালি, এক সঙ্গে চল মহোৎসবে সাজি
৩. গান্ধী মানস- ভারতের জাতির পিতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর মানস সংক্ষেপে নিম্নরূপ-
ক) কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পরামর্শে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী অবিভক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য হিন্দু নেতা শরতচন্দ্র বসু ও কিরণ শংকর রায়ের সাথে কয়েক দফা আলোচনায় মিলিত হন। হঠাৎ আলোচনা বন্ধ হয়ে যায। ‘আমি মুজিব বলছি’ বইয়ে কৃত্তিবাস ওঝা লিখেছেন, “শরৎ বসু ভারত ডোমিনিয়নের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া যুক্ত বাংলায় রাজি হননি। সিরাজুদ্দীন হোসেন ইতিহাস কথা কও গ্রন্থে লিখেছেন, গান্ধীর বিরোধিতার কারণেই যুক্ত বাংলার প্রস্তাব নস্যাৎ হয়। (সূত্র : আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, অধ্যাপক আবদুল গফুর, পৃষ্ঠা ২৩১-২৩২)
খ) কায়েদে আযমের আশীর্বাদপুষ্ট বসু-সোহরাওয়ার্দীর সার্বভৌম বাংলার পরিকল্পনাকে গান্ধী এই বলে নস্যাৎ করে দেন যে, এই পরিকল্পনা কংগ্রেসের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে হলে সার্বভৌম বাংলার সংস্কৃতি হিসেবে হিন্দু উপনিষদের আদর্শকে গ্রহণ করতে হবে। গান্ধীর এ অন্যায় প্রস্তাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে শরৎ বসু একপত্রে তাঁকে লিখেন, যে কংগ্রেস একদা মহান জাতীয় প্রতিষ্ঠান ছিল, তা দ্রুত একটি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে চলেছে দেখে আমি মর্মাহত।” In Retrospection, Abul Hashim, Page-161)
গান্ধী সম্পর্কে
গ) মাওলানা মোহাম্মদ আলীর উক্তি- মাওলানা মোহাম্মদ আলী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জন্য যথেষ্ট ত্যাগ স্বীকার করেছেন, দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন। ১৯৩০ সালে বোম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন-
“মি. গান্ধী সাম্প্রদায়িকতাবাদী হিন্দু মহাসভার প্রভাবাধীনে কাজ করিতেছেন। তিনি হিন্দু ধর্মের প্রাধান্যের জন্য এবং মোছলেম জাতির স্বতন্ত্র মুছিয়া ফেলার জন্য সংগ্রাম করিতেছেন। আইন অমান্য আন্দোলনের ব্যাপারে তিনি কখনও মোছলেম জাতির সাথে পরামর্শ করেন নাই। তিনি চান, ভারতীয় মোছলেম জাতির মাথার উপর দিয়া বিজয়রথ চালনা করিতে। আমরা কোনো প্রতিশ্রুতি, চুক্তি বা সন্ধি ভঙ্গ করি নাই। আমরা ভারতের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করি নাই। গত ১০ বছর মুসলমানগণ সংখ্যাগুরু হিন্দুদের দ্বারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হইয়াছে। মি. গান্ধী অবস্থার উন্নতির জন্য চেষ্টা বা মুছলমানদের প্রতি হিন্দুদের স্বৈরাচারের প্রতিবাদে টু-শব্দটি পর্যন্ত করেন নাই। তিনি শুদ্ধি আন্দোলনের প্রতিবাদ করেন নাই। এই সমস্ত আন্দোলনের উদ্দেশ্য হইতেছে ভারতের বুক হইতে এছলাম ও মুছলমানের অস্তিত্ব মুছিয়া ফেলা। (সংক্ষেপিত) (সূত্র : একশ’ বছরের রাজনীতি, আবুল আসাদ, পৃষ্ঠা-৩৪৫)
খ) গান্ধীর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বুঝার জন্য গান্ধী প্রতিষ্ঠিত সংগঠনসমূহের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য জানা জরুরি। তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠনসমূহ এবং সেগুলোর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
(১) গান্ধী আশ্রম- সেবাগাঁও, ওয়ার্ধা- এটি রোমান ক্যাথলিক পোপের রাজধানী ভ্যাটিকানের আদলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভারতীয় কংগ্রেসের বুদ্ধিবৃত্তিক রাজধানী। পরবর্তীতে হিন্দু জাতীয়তাভিত্তিক শিক্ষানীতিও এ আশ্রমের পরিকল্পিত।
(২) গান্ধী সেবাসংঘ- ৯ সদস্যবিশিষ্ট গান্ধীর স্থায়ী মন্ত্রণা পরিষদ। এর সদস্যরা সবাই বর্ণহিন্দু ছিল।
(৩) গান্ধী হরিজন সেবাসংঘ- অনুন্নত শ্রেণীর লোকদিগকে হিন্দু ধর্মের আওতায় আনা এবং ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
(৪) গান্ধী হিন্দী প্রচার সংঘ- সংস্কৃত বহুল হিন্দী ভাষাকে ভারতের রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় ভাষা বলিয়া প্রচার করা। উর্দু ভাষার প্রভাব, গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা বিনাশ করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত। (উল্লেখ্য, ১৮৬০ সালের পূর্বে হিন্দী ভাষার আলাদা কোনো অস্তিত্ব ছিল না। শত শত বছরের মুসলিম শাসনে ভারতের কমন ভাষা হিসাবে উর্দু ভাষা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। উর্দু ভাষা লিখা হয় আরবি হরফে। সুচতুর ইংরেজদের পরামর্শে ও সহযোগিতায় হিন্দু পণ্ডিতগণ দেবনাগরী অক্ষরে উর্দু ভাষা লিখে সেটাকে হিন্দী নামে চালু করে। আরবি-ফার্সি শব্দ যথাসম্ভব বাদ দিয়ে তদস্থলে সংস্কৃত ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটায়। এতদসত্ত্বেও এখন পর্যন্ত উর্দু-ফার্সি-তুর্কী ভাষার প্রভাব এত বেশি যে, হিন্দী আর উর্দু ভাষার কথ্যরূপে খুব বেশি পার্থক্য নেই)।
(৫) গান্ধী নাগরী প্রচার সভা- দেবনাগরী বর্ণমালায় ভারতের সমস্ত ভাষা লেখা উচিত এমন ধারণা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং উর্দু বর্ণমালা প্রচলন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে এই সভা প্রতিষ্ঠা করা হয়।সচেতন পাঠকবৃন্দ গান্ধীর সকল কর্ম-অপকর্মের খতিয়ান দিয়ে হাজার পৃষ্ঠার বই রচনা করা সম্ভব। গান্ধীকে যতোই উন্মোচন করবেন ততই দেখতে পাবেন তিনি ছিলেন ভারত বর্ষে ব্রিটিশ শাসকদের ১নং গোলাম, মুসলমানদের ১নং শত্রু এবং তার ব্যক্তি চরিত্র এতো বেশি নোংরা ছিল যে, তা প্রবন্ধের কলেবরে শেষ করা যাবে না। এতদসত্ত্বেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে গান্ধীকে দেবতার আসনে বসানোর চেষ্টা করা হয়? এই দলটি এবং এই দলের বুদ্ধিজীবীরা কি এই দেশ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের মুছে ফেলতে চায়?
...........অসমাপ্ত... উক্ত বইর ২৮-৩১পৃষ্টা
পরের পর্ব:১৩তম পর্ব
বিষয়: বিবিধ
১৩৫২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন