‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ....(১১তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ২৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:১৯:১৫ বিকাল
আগের পর্ব: ১০ম পর্ব
উল্লেখ্য, স্যার সৈয়দ আমীর আলীই সর্বপ্রথম ভারতের নির্যাতীত মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবি তোলেন। পরবর্তীতে মুসলিম লীগের দাবির মুখে ব্রিটিশ সরকার এই দাবি মেনে নেয়। বিষয়টি ছিল এই- জনসংখ্যার হার অনুযায়ী হিন্দু-মুসলিম ও তফসিলী হিন্দুদের জন্য আসন বরাদ্দ থাকিবে। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজেদের ভোটে নিজেদের নেতা নির্বাচন করিবে। এতে সাম্প্রদায়িক বঞ্চনা অবসান ঘটিবে। মূলতঃ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের কবল থেকে নিজেদের অধিকার আদায়ে ইহা ছিল উত্তম ব্যবস্থা। মুসলিম নেতারা মনে করিতেন যুক্ত নির্বাচন হইলে হিন্দুরা এমন সব মুসলমানদেরকে ভোট দিবে যারা নামে মুসলমান হইলেও কার্যক্ষেত্রে হিন্দু স্বার্থ রক্ষাকারী। ১৯৫৭ ইং পর্যন্ত এই নিয়ম চালু ছিল। কিন্তু ভারতসৃষ্ট দল আওয়ামী লীগ ও ভারত লালিত বামদল সমূহ এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের শাখা পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসের সদস্যরা ১৯৫৭ সালে যুক্ত নির্বাচনের প্রশ্নে প্রবল চাপ সৃষ্টি করে এবং যুক্তনির্বাচন প্রথা চালু হয়। এর বিষময় ফল আমরা এখনো ভোগ করছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এখনো যদি এদেশে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা হয় তবে এদেশের রাজনীতিতে ভারতের নাকগলানো অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যাবে।
১২. ৩০-০৩-১৯৫৭ তারিখে গভর্নর শেরে বাংলার চাপে আতাউর রহমান খান মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করেন।
১৩. ৩০-০৩-১৯৫৮ তারিখে মুখ্যমন্ত্রী পদে আবু হোসেন সরকার নিযুক্ত হন।
১৪. সোহরাওয়ার্দীর অনুরোধে ফিরোজ খান নুন ৩১-০৩-৫৮ তারিখে গভর্নর পদ থেকে অপসারিত হন।
১৫. ০১-০৪-৫৮ তারিখে প্রদেশের চীফ সেক্রেটারী গভর্নর পদে আসীন হওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকারকে পদচ্যুত করেন।
১৬. কিছুক্ষণ পরেই আওয়ামী লীগের আতাউর রহমান খান মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ৯ সদস্য বিশিষ্ট সরকার গঠন করেন।
১৭. ১৮-০৬-৫৮ তারিখে ন্যাপের অসহযোগিতায় আতাউর রহমান সরকারের পতন ঘটে।
১৮. ১৯-০৬-৫৮ তারিখে আবু হোসেন সরকার পুনরায় মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেন।
১৯. ২৫-০৬-৫৮ তারিখে পূর্ব পাকিস্তানে পুনরায় প্রেসিডেন্ট শাসন প্রবর্তিত হয়।
২০. ২২-০৬-৫৮ তারিখে অনাস্থা ভোটে আবু হোসেন সরকারের পতন ঘটে।
২১. ২২-০৭-৫৮ তারিখে আতাউর রহমান খান পুনরায় মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করেন।
২৪. ২৩-০৯-৫৮ তারিখে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পরিষদ অভ্যন্তরে স্পীকারের উপর হামলা করে। গুরুতর আহত স্পীকার শাহেদ আলী ২৬-০৯-৫৮ তারিখে ইন্তেকাল করেন।
২৫. ২৪-০৯-৫৮ তারিখে প্রাদেশিক পরিষদ অধিবেশন মুলতবী ঘোষণা করা হয়।
২৬. আওয়ামী লীগ ১৯৫৯ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের শর্তে প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুনের কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন দানের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে। তদ্অনুযায়ী ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯ তারিখে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়। ক্ষমতাপিপাসু আওয়ামী লীগ ২ অক্টোবর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগ দেয় এবং দফতর বণ্টন বিষয়ে অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ মন্ত্রিবর্গ ৭ অক্টোবর ১৯৫৮ইং তারিখে পদত্যাগ করে। (প্রাগুক্ত, অলি আহাদ, পৃ. ২৪৯)
২৭. প্রাদেশিক পরিষদ অভ্যন্তরে ভারপ্রাপ্ত স্পীকার শাহেদ আলী হত্যা, প্রাদেশিক পরিষদে মন্ত্রীত্ব লাভে সীমাহীন নির্লজ্জ তৎপরতা, জাতীয় এবং প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা এবং তদ্সমর্থক পরিষদ সদস্য ও দলীয় কর্মীদের বল্গাহীন দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ, ১৯৫৭ সালের ৯ই মে আততায়ীর গুলিতে ডা. খান সাহেবের মৃত্যুবরণ দেশকে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত করলে ৭ অক্টোবর ১৯৫৮ইং মধ্যরাতে ইস্কান্দার মীর্জা বিশেষ ঘোষণায় সমগ্র দেশব্যাপী সামরিক আইন ঘোষণা করেন, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করেন, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ বাতিল করেন, সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত ঘোষণা করেন, সংবিধান রহিত করেন এবং সেনাপতি জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করেন।
২৮. ২৭ অক্টোবর ১৯৫৮ তারিখে ইস্কান্দার মীর্জা জেনারেল আইয়ুব খানের নিকট সমান ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশ ত্যাগে বাধ্য হন।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দলাদলি, ক্ষমতার লোভ ও ষড়যন্ত্রই যে আমাদের অগ্রগতির প্রধান বাধা ছিল তা বুঝতে কি কারো বাকি আছে? এতদ্সত্ত্বেও এসব নেতৃবন্দ এবং তাদের বর্তমান অনুসারীরা অদ্যাবধি পাকিস্তানী শোষণ অত্যাচারের কথা বলে জাতির নিকট মিথ্যাচার করছেন। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের পর আমাদের নেতৃবৃন্দ শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থে কতবার সরকার গঠন করেছেন, একে অপরকে ল্যাং মেরেছেন তা কি গুনে শেষ করা যাবে? হিসাব করলে দেখা যাবে ভারত সৃষ্ট আওয়ামী লীগ নেতারাই এদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সবচেয়ে বেশি তৎপর ছিল এবং এ দলের জাতির পিতা শেরেবাংলা মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্ব না পেয়ে ৭৫ পয়সার ঝগড়ায় মানুষ খুন করেছেন, সরকার পতনের জন্য স্পিকার হত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছেন, ভুখা মিছিলের নামে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন এবং নিজ দলের অভিজ্ঞ ও বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা আতাউর রহমান খানকে মুখ্যমন্ত্রী করার বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন।
পাকিস্তান আমলে বাঙালিদের দুর্গতির কারণ ছিলেন এ সকল নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশ আমলে জাতীয় দুর্দশার কারণ এসব নেতৃবৃন্দের অনুসরণ। পাকিস্তানি শাসকদের তথাকথিত শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার পর ও বিগত ৪২ বছরে কি আমাদের জনগণের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে? নাকি আমাদের নেতৃবৃন্দ ও তাদের সহযোগীদের উন্নতিকেই আমরা দেশের উন্নতি বলে ভুল করছি। এখনো যদি আমরা ভুল নেতা নির্বাচন করি তবে আমাদের ভাগ্যে পরাধীনতা ও দুর্দশা ছাড়া আর কিছু জুটবে না। যেসব দল ও নেতা পাকিস্তান আমলে গণতন্ত্রের বক্তৃতা দিয়ে রাতের আঁধারে সামরিক শাসকদের সাথে ষড়ন্ত্র করতো সে দল এবং সে দলের নেতারা অদ্যাবধি একই কাজ করছে। ইতিমধ্যে জনগণ জানতে পেরেছে যে, ’৭৫ সালে খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান, ’৮১ সালে জিয়া হত্যা, এরশাদের ক্ষমতা দখল, জেনারেল নাসিমের ক্ষমতা দখল প্রচেষ্টা ও হিডেন মীরজাফর সেনাপতি মঈন-উ-আহমেদকে গোপনে ও প্রকাশ্যে মদদ দিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং বাকশালের নামে গণতন্ত্র হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। এই দলটি ক্ষমতা লাভের জন্য শয়তানের সাথে হাত মেলাতে পারে এবং দেশের স্বার্থকে বিদেশী প্রভুদের পায়ে জলাঞ্জলি দিতে পারে।
অখ- ভারত প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সাম্রাজ্যবাদী ভারত সৃষ্ট দলকে বুঝতে হলে ভারত মানস ও হিন্দু মানস সম্পর্কে অবগত হতে হবে। কেননা কালের পরিক্রমায় আওয়ামী লীগ ইসলাম ও মুসলমানদের উপর সেইরূপ জুলুম-নির্যাতন করছে যেরূপ জুলুম-নির্যাতনের শিকার হিন্দুস্তানের মুসলমানরা। এমতাবস্থায় হিন্দুদের মুসলিম বিদ্বেষ, আওয়ামী লীগের ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ সম্পর্কে আলোচনা করে প্রবন্ধের ইতি টানবো।
অসম্পূর্ণ................
[চলবে, সাথেই থাকুন]
পরের পর্ব:
বিষয়: বিবিধ
১০৫৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন