‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ....(১০ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ২১ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:০০:২৯ দুপুর
আগের পর্ব: ৯ম পর্ব
উল্লেখ্য, ৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আসন সংখ্যা ছিল ১৬৯টি। তন্মধ্যে ২টি বাদে বাকি ১৬৭টিতে বিজয়ী হয়েছিল আওয়ামী লীগ। তন্মধ্যে ৭৯ জনকে পদচ্যুত করা হয়- তার মানে শেখ মুজিব ও ড. কামালসহ অবশিষ্ট ১৬৭-৭৯=৮৮ জন আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ সদস্য পাকিস্তানিদের সহযোগী ছিল। অপরদিকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে আসন সংখ্যা ছিল ৩০০টি তন্মধ্যে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছিল ২৯২টিতে। সামরিক সরকার ১৯৪ জনকে পদচ্যুত করেছিল। তার সাথে অবশিষ্ট (২৯২-১৯৪)=৯৮ জন আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। এমতাবস্থায় এসব জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা কি কোলাবোরেটর নয়? এদের দ্বারা ৭২-এর সংবিধান রচনা ও জাস্টিফাই করা কি ন্যায়সঙ্গত হয়েছে? শেখ মুজিব বা ড. কামাল কিভাবে সরকার/রাষ্ট্রপ্রধান এবং সংবিধান রচনাকারী হল?
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যায় আওয়ামী লীগ ও মুজিব
এই দেশের জনগণের দুর্ভাগ্য হলো- জনগণের সিংহভাগ অংশ ব্রিটিশ আমল থেকেই ছিল গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা নিজেদের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নে গণতন্ত্রকে নিজেদের রক্ষাকবচ মনে করে। অথচ বাঙালি নেতৃবৃন্দ জনগণের এই আস্থা বিশ্বাসের মূল্য দিতে বারবার ব্যর্থ হইয়াছে। জনগণ যাদেরকে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারে পাঠায় তারা ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে বিদেশীদের হাতে তুলিয়া দিতে বিবেকের দংশন অনুভব করে না। নেতৃবৃন্দের লোভ ও স্বার্থপরতা এ জাতিকে বিগত ৬৫ বছরেও কাঙ্খিত সমৃদ্ধির সন্ধান দিতে পারে নাই। কালের পরিক্রমায় বর্তমানে বিষয়টি ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, এদেশের রাজনীতিতে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য লোকের খুব অভাব। সকল দলে অসৎ, অযোগ্য, অদুরদর্শী ও বিদেশী এজেন্ট নেতারা সংখ্যাগরিষ্ট হওয়ায় বর্তমানে সৎ, দেশপ্রেমিক দূরদর্শী নেতৃবৃন্দ মিথ্যা অজুহাতে, মিথ্যা মামলায় কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। এখন চোর, ডাকাত, বদমাশ, ইভটিজার, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ধর্ষক, বিদেশী দালালরা, শেয়ার বাজার লুণ্ঠনকারী, ব্যাংক লুটেরা, এমএলএম ব্যবসা, কুইক রেন্টালের নামে দেশের অর্থ বিদেশে পাচারকারীরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে। অপরদিকে সৎ, ধর্মভীরু দেশপ্রেমিকরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
এদেশে এখন দুর্বৃত্তের শাসন চলছে। যেসব আমলা সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক তাদেরকে ওএসডি/চাককিচ্যুত করা হয়েছে অপরদিকে যেসব আমলা দলবাজ ঘুষখোর-নীতিনৈতিকতাহীন ও দেশদ্রোহী তাদের উত্তরোত্তর প্রমোশন হচ্ছে। সৎ ও নিষ্ঠাবান সেনা কর্মকর্তারা হত্যা, গুম ও চাকরিচ্যুতির শিকার হচ্ছে- অন্যদিকে অসৎ-দলবাজ ব্যক্তিরা ছড়ি ঘোরাচ্ছে। রাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করা এখন দোষের নয় বরং চুরি করতে দেখলে, সত্য খবর প্রকাশ করলে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। একটি জাতি চূড়ান্তভাবে ধ্বংস হওয়ার পূর্বে যেসব লক্ষণ দেখা যায় বর্তমানে বাংলাদেশে উক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।
প্রাচীন আমলের বিশ্বশক্তি রোমান সাম্রাজ্য ধ্বংসের পূর্বে রোমান জাতি ও শাসকগণ এরূপ অবস্থায় উপনীত হয়েছিল। রোমান সাম্রাজ্যের ইহুদীরা হযরত ঈসা [আ:]-এর বিরুদ্ধে এ মর্মে অভিযোগ উত্থাপন করে যে- এই ব্যক্তি আমাদের ধর্মের অবমাননা করছে- আমরা এর শাস্তি চাই। জনমতের চাপে তৎকালীন শাসক হযরত ঈসা [আ:]কে বন্দী করে। বিচারে ঈসা [আ:] এর মৃত্যুদণ্ড হয়। রোমানদের জাতীয় দিবসে রাজা এবং রাজপ্রতিনিধিরা কিছু কিছু বন্দীকে মুক্তি দান করে। জাতীয় দিবস আসার পূর্বে রোমান রাজপ্রতিনিধি জনগণের নিকট প্রস্তাব করেন- আসন্ন জাতীয় দিবসে আমি ২ জন বিখ্যাত মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ব্যক্তির ১ জনকে মুক্তি দিতে চাই। এদের একজন হলো ধর্ম অবমাননার দায়ে দণ্ডিত ঈসা এবং অন্যজন হলো কুখ্যাত ডাকাত সর্দার বারাব্বা। ইহুদী ধর্মনেতাগণ ও জনতা ডাকাত বারাব্বাকে মুক্তি দিতে এবং ঈসাকে শূলে চড়াতে দাবি জানাল। রাজপ্রতিনিধি জনতার রায় মেনে নিয়ে বারাব্বাকে মুক্তি দিলেন এবং ঈসাকে শূলে চড়ানোর ব্যবস্থা করলেন। বর্তমান বাংলাদেশেও ধর্ম নেতাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং খুনীদেরকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ঘোষণা করা হচ্ছে এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, উক্ত ঘটনার পর রোমান সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয় এবং এক সময় ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দের চরিত্র সম্পর্কে জানতে হলে এদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে হবে এবং এদেরকে সুযোগ দিলে এরা কিভাবে গণতন্ত্র ও দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় তা অনুধাবন করার জন্য আমি ২টি সংক্ষিপ্ত শাসনকালের উদাহরণ উল্লেখ করব। প্রথমটি ১৯৫৪-১৯৫৮ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকার এবং অন্যটি ১৯৭২-৭৫ সালের আওয়ামী লীগ সরকার।
পাকিস্তানিরা গণতন্ত্রবিরোধী স্বৈরশাসক, তারা বাঙালিদেরকে ঘৃণা করে, বৈষম্য করে ও শোষণ করে তাই বাঙালিরা নির্যাতনের শিকার। এই স্লোগান তুলে ১৯৫৪ সালে সকল বাঙালি নেতৃবৃন্দ জোট বেঁধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। জনগণ নেতাদেরকে বিশ্বাস করে নির্বাচনে বিজয়ী করে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা পাওয়ার আশায়। যুক্তফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগ কিভাবে জনগণের আশার গুড়ে বালি দিয়েছে তা দেখতে নিম্নের তথ্যগুলো লক্ষ্য করুন-
১. ১৯৫৪ সালে ৩ এপ্রিল শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠন করা হয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুরোধ সত্ত্বেও শেখ মুজিবকে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় গ্রহণ করা হয় নাই। যার ফলশ্রুতিতে মুজিবের নেতৃত্বে ৭৫ পয়সার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলায় ১ জন নিহত হয়েছিল যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তদুপরি ১০ মে ১৯৫৪ ইং তারিখে মাওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবের আহ্বানে পল্টনে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর পরেই শেখ মুজিব মন্ত্রীসভার সদস্য হন।
২. ৩০ মে গভর্নর জেনারেল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা বরখাস্ত করেন।
৩. আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার আইনমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। শহীদ সাহেবের প্রচেষ্টায় ১৮-১২-১৯৫৪ তারিখে শেখ মুজিব জেল থেকে মুক্তি পান।
৪. ১০ আগস্ট ১৯৫৫ তারিখে কেন্দ্রে মুসলিম লীগ-যুক্তফ্রন্ট কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। শেরে বাংলা হইলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সোহরাওয়ার্দী বিরোধী দলের নেতা।
৫. ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১৬-১০-৫৭ তারিখে পদত্যাগে বাধ্য হন।
৬. ১৭-০২-৫৫ ইংরেজিতে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে শেরে বাংলার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয় যা ব্যর্থ হয়।
৭. শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এক বিবৃতিতে গভর্নর জেনারেল ইস্কান্দর মির্জাকে ‘খাঁটি বাঙালি’ সার্টিফিকেট দিয়া পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত করেন। বিনিময়ে তিনি উর্দুভাষী রাষ্ট্রপ্রধান ইস্কান্দার মির্জা কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত হন।
৮. ৩০-০৮-১৯৫৬ ইং তারিখে মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার মন্ত্রীসভা গভর্নর শেরে বাংলার নিকট পদত্যাগপত্র দাখিল করেন। শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রতিদিনকার ‘ভুখা মিছিল’ সৃষ্ট হাঙ্গামায় আবু হোসেন সরকারের পতন হয়।
৯. ০৬-০৯-১৯৫৬ তারিখে আতাউর রহমান খান এর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মন্ত্রীসভা গঠিত হয়।
১০. ১১-১০-১৯৫৭ তারিখে মুসলিম লীগ নেতা আইআই চুন্দ্রীগড কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী হন।
১১. পৃথক ও যুক্ত নির্বাচন নিয়ে বিরোধের জের ধরে ১১-১২-৫৭ তারিখে চুন্দ্রীগড় মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করেন এবং মালিক ফিরোজ খান নুন প্রধানমন্ত্রী হন।
[চলবে, সাথেই থাকুন]
পরের পর্ব:
বিষয়: বিবিধ
১১৫৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন