‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ....(৯ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ২০ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:২৯:৩৯ দুপুর
আগের পোষ্ট, ৮ম পর্ব:৮ম পর্ব
সামরিক শাসক ইয়াহিয়া-মুজিব আঁতাত-
মুজিব ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ক্রীড়নক। ভারতের আগ্রাসী আকাঙ্খা বাস্তবায়নের একজন সহযোগী। এজন্য তিনি পাকিস্তান ভেঙে পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন আজীবন। পাকিস্তানকে ব্যর্থ করার জন্য সব সময় সমাজবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির সহযোগী হয়ে ভারতের আকাঙ্খা পূরণ করেছেন। নিজ দেশ ও জাতির সাথে প্রতারণা করে নিজের ভাগ্য গড়েছেন। গণতন্ত্রের লেবাস পরা এই ভদ্রলোক শুধুমাত্র আইয়ুবের সহযোগী ছিলেন না- ইয়াহিয়ার ও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এতদ্সংক্রান্ত কিছু তথ্য নিম্নরূপ-
১. ইয়াহিয়া খান একদিকে বলছিলেন, সব দল অবাধে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। অন্যদিকে কোনো রকমের তদন্ত না করে এবং বিশ্বাসযোগ্য কোনো কারণ না দেখিয়ে মুসলিম লীগের ফান্ড ফ্রীজ করেন। পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোর পিপলস্ পার্টি ও পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রকাশ্যে দহরম-মহরম করে ইয়াহিয়া খান বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, এদের হাতেই তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চান। এর পরের অনেক ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ইয়াহিয়া খান মনে করতেন পিপলস্ পার্টি এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকতে পারবেন। এ রকম একটা চাপা গুঞ্জন পূর্ব পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক মহল থেকেই শোনা যাচ্ছিল। (সূত্র : একাত্মরের স্মৃতি, ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন, পৃ-১২২)
২. প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ক্ষমতা দখল করার পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে রদবদল বরখাস্ত করতেন শেখ মুজিবের পরামর্শে। এ সুযোগে মুজিব অনেক দেশপ্রেমিক কর্মকর্তার বরখাস্ত ও বদলির ব্যবস্থা করেন। (সূত্র : স্মৃতির পাতা থেকে, পিএ নাজির, পৃ-২১৪/২৬৫)
৩. ’৭০ সালের শেষ দিকে ইয়াহিয়া ঢাকায় এলে মুজিব তিনবার তাঁর সাথে গোপনে বৈঠকে মিলিত হন- নভেম্বর মাসের শেষ ও ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে। ইয়াহিয়া ততদিনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, নির্বাচন আর পিছানো হবে না। সে সময় তিনি নূরুল আমিনসহ পূর্ব পাকিস্তানের ‘এগারো নেতাকে’ সাক্ষাত পর্যন্ত দেননি। কারণ তাঁর ধারণা, তাহলে নুরুল আমিন নির্বাচন পিছানোর অনুরোধ জানাবেন। ইয়াহিয়ার সিদ্ধান্তে আর সব নেতা যেমন অখুশী হলেন, মুজিব তেমনি খুশী হলেন। (সূত্র : প্রাগুক্ত-এ.ড.পযু অনুবাদ ইফতেখার আমিন পৃ-৯২)
৪. যাহোক আওয়ামী লীগের বিশেষজ্ঞদের প্রস্তুত ভবিষ্যত সংবিধানের একটা কপি আমার হাতে পড়েছিল। সেটায় অখণ্ড পাকিস্তানের কোনো আশা আমি দেখতে পাইনি। তাতে সরাসরি দেশ ভাগের কথা লেখা ছিল না ঠিকই, কিন্তু যা ছিল তাতে ফেডারেল ইউনিয়নের টিকে থাকার কোনো সুযোগও ছিল না। পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার বাকি বিস্তারিত বর্ণনা পড়ে পাঠক হয়তো বুঝবেন কে বিশ্বাসঘাতক ছিলেন, মুজিব না ইয়াহিয়া। (প্রাগুক্ত-পৃ-৯৩)
৫. ’৭০ সালের নির্বাচনের সময় পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার আওয়ামী লীগকে সমর্থন এবং আওয়ামী শ্রমিক সংগঠনকে পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করার সুযোগ দেয় ... শেখ মুজিব গর্ব করে বলেছেন, তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বামপন্থী শক্তিকে নির্মূল করে দেবেন। কিন্তু তাকে কিছুই করতে হয়নি। তাঁর প্রতি সমবেদনা জানাতে পূর্ব পাকিস্তানের মিলিটারী গভর্নর আহসানই কাজটা করে দিয়েছেন। (প্রাগুক্ত-পৃ-১০৩)
৬. মুজিব পাক আর্মির কাছে আত্মসমর্থন করার আগেই মার্কিন অফিসিয়ালদের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান সরকারকে একটা গোপন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হয় যাতে মুজিবকে বাঁচিয়ে রাখা হবে বলে নিশ্চয়তা ছিল। পাক আর্মি তাজউদ্দীন আহমদ সহ অন্য সব বড় আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পরিবার পরিজনদের হত্যা করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকলেও মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে ছিল আশ্চর্যরকম নরম। (প্রাগুক্ত-পৃ-১৫৭)
৭. পাকিস্তান জুট মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আবুল খায়ের ২৫ মার্চ বিকেল ২টায় বঙ্গবন্ধুর বাসায় পৌঁছেন। ২টা ১৫ কি ২০ মিনিটের সময় বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্ট থেকে এক টেলিফোন কল পান। অপর প্রান্ত থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলছিলেন। ইয়াহিয়া বলেন, ‘আপনি ২৫ তারিখ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার কথা দিয়েছিলেন। এখন যেহেতু আপনি আপনার কথা রাখতে পারছেন না, আমার আর এখানে বসে থাকার কোনো প্রয়োজন নাই। আমি এখনই করাচী রওয়ানা হয়ে যাচ্ছি। সেনাবাহিনী আজ রাত ১০টার সময় ঢাকা দখল করে নেবে। আপনার বা আপনার পরিবারের কোনো অসুবিধা হবে না। আপনার নিরাপত্তা সেনাবাহিনী দেবে।’ ... বঙ্গবন্ধু ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে টেলিফোন করে রাত ১০টায় সেনাবাহিনীর ঢাকা আক্রমণের সংবাদ জানিয়ে তাদেরকে অনুরোধ করলেন ঢাকার বাইরে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য। (সূত্র : ইতিহাস সত্য কথাই বলে, একেএম রফিকউল্লা চৌধুরী-পৃ-৮০)
৮. ১৯৬৯ সালের গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর সেই সময়কার পাক সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়ার সাথে মুজিবের দহরম-মহরম জমে উঠে। ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে পাকিস্তানে পুনরায় সামরিক শাসন জারির ফলে ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র পুনপ্রবর্তন রুদ্ধ হয়ে যায়। (সূত্র : দি আল্টিমেন্ট ক্রাইম : উইটনেস্ টু পাওয়ার গেম- সরদার এম চৌধুরী, লাহোর ১৯৯৭/১৯৯৯ পৃ-৯৮)
৯. ইয়াহিয়ার সাথে মুজিবের সুসম্পর্ক ছিল নিতান্তই তাৎপর্যময়। যার ফলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর ইয়াহিয়া প্রকাশ্যে মুজিবকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। বস্তুতঃ মুজিব-ইয়াহিয়া দহরম-মহরম না থাকলে এবং প্রেসিডেন্ট আইয়বের নেতৃত্বে ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন হলে আর ১৯৬৯ সালে সেনা শাসন জারি না হলে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার নোংরা রাজনীতির কোনো সুযোগই ঘটত না। (সূত্র : এমটি হোসেন, প্রাগুক্ত-পৃ-২৭)
উপরোক্ত তথ্য উপাত্তের আলোকে পাঠকবৃন্দ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবেন যে, শেখ মুজিব আগাগোড়াই ছিলেন ক্ষমতালোভী, গণতন্ত্র হত্যাকারীদের দোসর এবং দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি। তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ছিল পূর্বাপর একটি সুবিধাবাদী, নৈরাজ্যবাদী ও সন্ত্রাসী দল। যে দলটি পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশ আমলে বারবার উচ্চাভিলাসী সেনাকর্মকর্তাদের ক্ষমতারোহণে ও ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহযোগীতা করেছে এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করেছে। এরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায় কিন্তু ক্ষমতায় গেলে এরা হয়ে পড়ে নিকৃষ্ট স্বৈরাচার।
পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশ আমলে এরা ছিল গণতন্ত্র হত্যাকারী এবং জাতীয় বিশ্বাসঘাতক। জাতি যতবারই এদেরকে বিশ্বাস করেছে- ততবারই প্রতারিত হয়েছে। এই দলের জাতির পিতা শেখ মুজিব কখনো জাতির পিতাসুলভ আচরণ করেনি। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো-৭১ সালে দেশের মানুষকে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নিজের ও নিজের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য মার্কিন মধ্যস্থতায় চুক্তি করে স্বেচ্ছায় পাকিস্তানি বাহিনীর নিকট আত্মসমর্থন করা। এ জন্যই দেখা যায় ৭১-এর যুদ্ধে এই পরিবারের এক ফোটা রক্তও ঝরেনি।তদুপরি তারা যুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানিদের ভাতায় ঢাকায় নিরূপদ্রব জীবন যাপন করেছে। নিম্নের ২টি তথ্য বিষয়টিকে আরো বোধগম্য করবে।
১. ১৯৪৯ সালের অক্টোবর ব্যতীত গণআন্দোলনের প্রয়োজনে শেখ সাহেব কখনো আত্মগোপন করেননি। দেখা গিয়েছে, সকল আন্দোলনের সূচনা মুহূর্তে স্বগৃহে অবস্থান করিয়াই তিনি গ্রেফতার বরণ করিতেন। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আলোচনায় বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবের উপস্থিতি অপরিহার্য সত্ত্বেও তিনি গ্রেফতার বরণ করিতেন। হানাদার বাহিনীর হামলার খবর তিনি পূর্বাহ্নে অবগত হয়ে ২৫ মার্চ রাত্রিতে নেতাকর্মীদেরকে গা-ঢাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে নিজে বাস ভবনে অবস্থান করেন এবং গ্রেফতার বরণ করেন। (সূত্র : জাতীয় রাজনীতি : ১৯৪৫ থেকে ৭৫, অলি আহাদ, পৃ-৪১০-৪১১)
২. মুজিব গাছেরটিও খেতেন, তলারটিও কুড়োতেন। ইয়াহিয়ার আস্থাভাজন হওয়ার কারণে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান সরকার বেগম মুজিবকে ১৫০০ টাকা মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে। (প্রাগুক্ত-পৃ-৪১১)
৩. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইয়াহিয়া সরকার আওয়ামী লীগ দলীয় ৭৯ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং ১৯৪ জন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যকে পদচ্যুত করে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করে কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের এন-ই-১১১ ও ড. কামাল হোসেনের ১১২ নং আসন শূন্য ঘোষিত হয় নাই। (প্রাগুক্ত-পৃ-৪৪৫)
[চলবে, সাথেই থাকুন...]
পরের পর্ব:
বিষয়: বিবিধ
৯৮২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন