‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ...(৭ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ১৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:১১:২৪ বিকাল
আগের পর্ব: ৬ষ্ট পর্ব
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
ইঙ্গ-হিন্দু শাসন-শোষণে ভারতের মুসলমানদের অবস্থা
১. প্রখ্যাত রাজনীতিক ও দার্শনিক আবুল মনসুর আহমদ তাঁর লেখা আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর বইতে ১৯৩০ দশকের বাংলার মুসলমানদের অবস্থা সম্পর্কে লিখেছেন-
‘বাংলার জমিদার হিন্দু-প্রজা মুসলমান,
মহাজন হিন্দু-খাতক মুসলমান,
উকিল হিন্দু-মক্কেল মুসলমান,
ডাক্তার হিন্দু-রোগী মুসলমান,
হাকিম হিন্দু আসামী মুসলমান,
খেলোয়াড় হিন্দু-দর্শক মুসলমান,
জেইলর হিন্দু-কয়েদী মুসলমান,
দাতা হিন্দু-ভিক্ষুক মুসলমান’ (পৃ-১২৫)
২. ১৯৪৭ সাল নাগাদ পূর্ব বাংলার ৮০ শতাংশ ভূমির মালিক ছিল উচ্চবর্ণের হিন্দুরা, (সূত্র : বি মাধক, পোট্রেট অব এ মার্টায়ার, জাইকো পাবলিসিং হাউস, বোম্বে ১৯৬৯, পৃ-৪৬১)
উল্লেখ্য ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করার পর ইঙ্গ-হিন্দু চক্রান্তে বাংলার ভূমি মালিকানা মুসলমান জমিদারদের নিকট থেকে তাদের খাজনা আদায়কারী হিন্দু কর্মচারীদের নিকট চলে যায়।
৩. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আজিজুল হক ১৯৪০ সালে এই মর্মে তথ্য প্রদান করেন যে, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল ২জন বেতনভোগী মুসলমান রয়েছে- একজন তিনি নিজে অপরজন তাঁর চাপ রাশি। (সূত্র : বাংলাদেশ : মারাত্মক অপপ্রচারণা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের শিকার, এমটি হোসেন, পৃ-৫)
৪. ব্রিটিশ আমলে বাঙালি মুসলমানদেরকে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নেয়া হত না। ১৯৪৭ সালে ফেডারেল সেনাবাহিনীতে বাংলাভাষী মুসলমানদের সংখ্যা ছিল কয়েকশ’ যা কোনোভাবেই ১ হাজারের বেশি নয়। অথচ তখন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সংখ্যা ছিল ৫০,০০০। (প্রাগুক্ত পৃ-৬ ও ৭)
৫. দীর্ঘ দিনের অনভ্যাসে বাঙালি মুসলমানরা সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে চাইত না। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ভর্তির জন্য বাঙালি আবেদনকারী ছিল ৮৭ জন আর পশ্চিম পাকিস্তানি আবেদনকারী ছিল ২৭০৮ জন। (সূত্র : এইচএ রিজভী, মিলিটারী এ্যান্ড পলিটিক্স ইন পাকিস্তান, প্রগেসিভ পাবলিসার্স, লাহোর (পাকিস্তান) ১৯৭৬, ২য় সংস্করন, পৃ-১৮১)
৬. ১৯৪৭ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান প্রশাসন পায় ১০০ জন I.C.S অফিসার ভারত পায় ৫০০ জন। তন্মধ্যে ১ জনও বাঙালি ছিল না। তারা ছিল পাঞ্জাব বা ইউপি এর মুসলমান। (সূত্র : আলী আহমদ, রোল অব হায়ার সার্ভিস ইন পাকিস্তান, লাহোর, পৃ-৩৫)
৭. পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর I.C.S সার্ভিসে একমাত্র বাঙালি ছিল নুরুন্নবী চৌধুরী। তিনি ছিলেন মনোনীত, উত্তীর্ণ নন। ১৯৪৯-৫০ সালে প্রবর্তিত ৪০% কোটার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানিরা I.C.S হওয়ার সুযোগ পায়- মেধার ভিত্তিতে নয়। (সূত্র : আর সায়মন্ডস্ The British & their successors, ফেবার এ্যান্ড ফেবার, লন্ডন, ১৯৬৬, পৃ-৮৮-৯০)
৮. ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক সার্ভিসে (C.S.S) নিয়োগ দেয়ার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের কাউকে পাওয়া যায়নি। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাওয়া যায় ৮ জন। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাওয়া যায় ২ জন, পশ্চিম থেকে ১৬ জন, ১৯৬৪ সালে পূর্ব থেকে পাওয়া যায় ১৯ জন, পশ্চিম থেকে ২০ জন। (সূত্র : রাল্ফ্ ব্রেনবান্তি, দি ব্যুরোক্রেসি অব পাকিস্তান, U.S.A-১৯৬৬, পৃ-২৬৬-৬৭)
৯. পূর্ববাংলায় পৃথিবীর ৮০% পাট উৎপাদন হলেও একটি পাটকলও ছিল না ১৯৪৭ সালে। (সূত্র : এইচ এম আব্বাসী, (অনলুকার এ জার্নালিস্ট) ওভার এ কাপ অব টী, মাশহুর অফসেট প্রেস, করাচী, ১৯৪৭, পৃ-৪৬২)
১০. ১৯৪৭-৭১ সময়কালে পূর্ব পাকিস্তানে ৭৬টি পাটকল, ৯টি চিনিকল, কটন মিল, স্টীল মিল, রিফাইনারী, কাগজকল, গাড়ি সংযোজন কারখানা, অস্ত্রনির্মাণ কারখানা, মেশিন-টুলস ফ্যাক্টরি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা, সিমেন্ট কারখানাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কারখানা স্থাপন করা হয়েছিল। (প্রাগুক্ত-এমটি হোসেন, পৃ-১৪)
উপরোক্ত তথ্য-উপাত্তের আলোকে যে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের বিবেকবান ব্যক্তি একথা স্বীকার করবে যে, ১৯৪৭ সালে দেশ পরিচালনার যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ এদেশে ছিল না। কলকারখানা পরিচালনার দক্ষ লোক ও ছিল না, দেশ রক্ষার জন্য কোনো সেনাবাহিনীও ছিল না। এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই উর্দুভাষী মোহাজের মুসলমানরাই দেশ পরিচালনা, দেশরক্ষার দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়। এরূপ বাস্তবতাকে অস্বীকার করে ভারত সৃষ্ট দল আওয়ামী লীগ, ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত বাম দল সমূহ এবং ভারতের অর্থে লালিত চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীরা ২০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পাকিস্তানকে ভেঙে অখণ্ড ভারতে বিলীন করার জন্য সম্পূর্ণ মিথ্যাচারের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং মিথ্যা অজুহাতে এদেশের মুসলিম শক্তি ও মুসলিম সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। .................অসমাপ্ত
[চলবে, সাথেই থাকুন...]
পরের পর্ব: ৮ম পর্ব
বিষয়: বিবিধ
১৪১৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন