‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ -এম.আবদুল্লাহ.....(৬ষ্ট পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ১৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:২৪:০৪ বিকাল

Good Luck আগের পর্ব: আগের পর্ব, ৫ম পর্ব

(পূর্বে প্রকাশিত পর)

অখণ্ড ভারত তত্ত্ব বা The Indian Doctrine-

মনরো ও আইসেন হাওয়ার ডকট্রিনের আদলে পরিকল্পনা করা হয়েছে Indian Doctrine। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু এর প্রণেতা, পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধী ও আইকে গুজরাল একে আরো অগ্রবর্তী করেছেন। নেহেরু ডকট্রিনের মূল কথা হলো ১৯৪৭ পূর্ব British India নিয়ে হবে অখণ্ড ভারত। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও বার্মা অখণ্ড ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পার্শ্ববর্তী নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ হবে ভারতীয় সামরিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের আওতাধীন। এ লক্ষ্যেই নেহেরুর নেতৃত্বাধীন ভারত ১৯৪৭ থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা এখনো অব্যাহত আছে। এই আধিপত্যবাদের বলি হয়েছে ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত দেশীয় রাজ্যসমূহ, পার্শ্ববর্তী সার্ক দেশ সমূহ, বার্মা ও আফগানিস্তান। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী ভারত পৃথিবীর অন্যান্য ইসলাম বিরোধী শক্তিসমূহ যথা ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাথে হাত মিলিয়ে তার অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। ভারতের এই অপকর্ম পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এসব দেশের ভারত সৃষ্ট রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত ভারতের স্বার্থে নিজ নিজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট, এই জোটের বলয়ে অবস্থানকারী বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতি কর্মীরা প্রতিনিয়ত নিজ দেশকে ভারতের পদতলে বলি দিয়ে ভারতের স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা করছে এবং ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে।

বেশির ভাগ লোকেরা মনে করে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ রাজশক্তি ভারত ২ টুকরা করে ভারত ত্যাগ করেছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ছিল ভিন্ন। নিম্নের তথ্যটি দেখলে বিষয়টি বোধগম্য হবে।

* ব্রিটিশ ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনাধীন অঞ্চলের বাইরে আরো ৭০০টি স্বাধীন রাজ্য ছিল ভারতবর্ষে। ব্রিটিশ রাজশক্তি ছলে-বলে কৌশলে এ সকল রাজ্যের বেশির ভাগ দখলে নিতে সক্ষম হয়েছিল। এর পরেও ১৯৪৭ সালে আরো ২৮৩টি রাজ্য অবশিষ্ট ছিল যাদেরকে করদ রাজ্য বা মিত্র রাজ্য বলা হত। এসব রাজ্যের হিন্দু-মুসলিম রাজা ও নবাবগণ নিজ নিজ আইন অনুসারে রাজ্য শাসন করতেন। ইংরেজ সরকারকে এই রাজ্যগুলো কর দিত। ইংরেজ সরকার ভারতবর্ষ ত্যাগ করার আগে দেশীয় রাজাদের ডেকে বলেছিলেন যে, ‘তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ সরকারের অধীন, ভারত সরকারের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইংরেজ ভারত ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা স্বাধীন। তারা চাইলে স্বাধীন থাকতে পারে অথবা স্বেচ্ছায় ভারত বা পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে পারে।

ভারত ত্যাগের প্রাক্কালে ভাগ সমূহ ছিল নিম্নরূপ-

দেশীয় রাজ্য ২৮১টি

হিন্দুস্থান ১টি

পাকিস্তান ১টি

পর্তুগীজ শাসনকৃত ১টি

ফরাসী শাসনাধীন ১টি

মোট ২৮৫টি

সূত্র : সাপ্তাহিক দেশ, কংগ্রেস শতবর্ষ সংখ্যা, (১৮৮৫-১৯৯৫) লেখক : শ্রী অতুল্য ঘোষ পৃ-১৩০।



কিন্তু ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ভারত ত্যাগ করার পর ভারত অত্যাচার, আগ্রাসন, আন্তর্জাতিক নীতিভঙ্গ, প্রতারণা ও জবরদস্তির মাধ্যমে উক্ত ২৮৩টি রাজ্য দখল করে নেয়।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি ও কারণ

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি হলো- মুসলমানরা অন্য কোনো জাতির অংশ নয়- বরং একটি স্বতন্ত্র জাতি। অন্য কোনো জাতির সাথে মিলিত হয়ে মুসলমানরা কোনো মিশ্র জাতীয়তাও নির্মাণ করতে পারে না। কেননা মুসলিম জাতীয়তাবোধের একমাত্র আদর্শ হলো তাদের দ্বীন বা ধর্ম। তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে অন্য কোনো পথে নয়।

১৯৪৭ সালের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল ভারতের বর্ণবাদী মুসলিম বিদ্বেষী ও মুসলমানদের অস্তিত্ববিরোধী হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে মুসলমান জাতির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম করা যে রাষ্ট্রে তারা নিজেদের ঐতিহ্য এবং আদর্শের আলোকে জাতীয জীবন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করতে পারে। যে রাষ্ট্রে তারা প্রতিনিয়ত সাংস্কৃতিক নিস্পেষন বা অনৈসলামীক ধর্মীয় অনুশাসনের ভয়ে শঙ্কিত হতে হবে না। যে রাষ্ট্রের অর্থনীতি, রাজনীতি বা সংস্কৃতি কিরূপ হবে তা নির্ভর করবে মুসলিম জাতির মৌলিক আদর্শগুলোকে আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করব তার উপর। আমাদের আবাসভূমির উপর আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার স্বাধীনতা আমাদের থাকবে।

এই লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে সানে নিয়েই আমাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত নিরন্তর রক্তাক্ত লড়াই-সংগ্রাম করেছে তৎকালীন বিশ্বশক্তি ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সহযোগী বর্ণহিন্দুদের বিরুদ্ধে। অবশেষে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনাভিত্তিক জাতীয় ঐক্য ২০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হয়। এ লড়াইয়ে সমগ্র ভারতবর্ষের মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের পর দেখা গেল হিন্দু শাসন থেকে মুক্ত হতে এরা নিজেদের সংগ্রামের ফসল পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে বুক ভরা আশা নিয়ে। এদের মধ্যে অনেকেই ছিল কপর্দকহীন, ছিন্নভিন্ন, আহত ও পঙ্গু আর বাকিরা ছিল সফল শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, কারিগর ও উচ্চপদস্থ আমলা। এরাই কৃষিভিত্তিক পূর্ব পাকিস্তানের রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর-নৌবন্দর-শিল্পকারখানা গড়ে তুলল এবং আমরা দ্রুত এগিয়ে চললাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মুসলমানদের অস্তিত্ব বিনাশী হিন্দুস্থান ও তাদের এদেশীয় দোসররা ১৯৭০-৭১ সালে এসব দরদী মেহমানদের ও ১ম স্বাধীনতার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, অবশিষ্টরা এখনো চরম অবহেলায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এসব মোহাজের ভাইদের সহায়তা ছাড়া আমরা আধুনিক শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করতে সক্ষম হতাম না। হিন্দু ভারতের সক্রিয় সহযোগিতায় যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদেরকে কি বাংলাদেশের বা মুসলমানদের বন্ধু বলা যায়? আমার উপরোক্ত বক্তব্যের সমর্থনে নিম্নে কয়েকটি তথ্য প্রদান করছি।

(চলবে, সাথেই থাকুন )

Good Luck পরের পর্ব :৭ম পর্ব

বিষয়: বিবিধ

১২৮৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

346048
১৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:০৯
287230
দূর্বল ঈমানদার লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File