‘‘ভারত-আওয়ামীলীগ এর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারন’’ - এম.আব্দুল্লাহ..(৫ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দূর্বল ঈমানদার ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৩৬:১৭ রাত
আগের পর্ব: ( ৪র্থ পর্ব )
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
১৮) ১৯৪৯ সালের প্রথমদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের ঢাকায় আগমন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে (বর্তমান মেডিকেল কলেজের সম্মুখস্থ খেলার মাঠ) বক্তৃতা দেয়ার কথা । এ উপলক্ষে ড. মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের অফিসে (বর্তমান জগন্নাথ হলের অংশ বিশেষ ) রাত্রিকালে ঢাকা শহর ছাত্রনেতাদের এক সভা আহবান করা হয় । আমি ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজের (বর্তমান কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ)ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণক সম্পাদক হিসেবে ঐ সভায় যোগদান করি । শেখ মুজিবুর রহমান ও ঢাকা কলেজের প্রতিনিধি হিসেবে ঐ সভায় উপস্থিত হন । ….. ঐ সভাতেই তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের বিমাতাসূলভ মনোভাবের উল্লেখ করেন এবং লিয়াকত আলী খানকে সম্বর্ধনা দানের বিরোধীতা করেন । অবশ্য সে সভায় একথা তখন তেমন সমর্থন লাভ করেনি । সভা শেষ হয় রাত ১২টার পর । তখন শেখ সাহেব ও আমি হেটে হেটে বাসায় ফিরি । উনি তখন আরমানিটোলার এক বাসায় থাকতেন । আমি থাকতাম আহমদ মঞ্জিল সংলগ্ন ছাত্রাবাসে । সারাটি পথ তিনি আমাকে পাকিস্তানিদের শোষণ ও পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চ-নার কথা বলতে থাকেন এবং পাকিস্তান থেকে আমাদের পৃথক হয়ে যাওয়াই উচিত- এ কথা বলেন । (সূত্র: ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সমকালীন মুসলিম সমাজ, মোহাম্মদ হাসন, বইয়ের ভূমিকার লেখক ড. মোহর আলী পৃ-১২)
উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত অবলোকন করে যে কোনো সাধারণ জ্ঞানের মানুষ ও বুঝতে পারবে যে, আধিপত্যবাদী
বর্ণবাদী ভারতীয় নেতৃবৃন্দের অখণ্ড ভারত গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্যই ভারত ১৯৪৭ সাল থেকেই তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টিসমূহ, পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস সদস্যবৃন্দ এবং মুসলিম লীগের ক্ষমতালোভী নেতৃবৃন্দের মদদ দেয়া শুরু করে । এরই ধারাবাহিকতায় নিয়মতান্ত্রিক ভাষা আন্দোলন বিপদগামী হয়ে রক্তাক্ত পরিণতি লাভ করে । এই রক্তপাতের পর মুসলিম সংস্কৃতিকে বিপদগামী ও হিন্দু সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার ও হিন্দু সংস্কৃতির আদলে ভাষা দিবস চালু করা হয় । যা পর্যায়ক্রমে মূর্তিপূজা, প্রতিকৃতি পূজা, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনে পর্যবসিত হয় । যে মুসলিম ঐক্য সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসর ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী শক্তির শতসহস্র চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে উপমহাদেশে মুসলমানদেরকে পাকিস্তান নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড দান করেছিল সে মুসলিম ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য ৪৭ পরবর্তীতে মিথ্যাচার ও ভাষা আন্দোলনকে ব্যবহার করে মুসলিম ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগ গঠন করা হয় । পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম শক্তিকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য যক্তফ্রন্ট গঠন করা হয় । পর্যায়ক্রমে অদূরদর্শী ও ক্ষমতালোভী শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্যবহার করে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে চূড়ান্তভাবে দুইভাগ করা হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্মসমর্থন করে । ঘটনার এখানেই শেষ নয়- ১৯৭১ সালের পর থেকে মুসলিম বিদ্বেষী ইহুদী-খ্রীস্টান চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী ভারত বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উ. পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে আলাদা করে পাকিস্তানকে ৪ টুকরা এবং বাংলাদেশকে জুমল্যান্ড, বঙ্গভূমি ও বাংলাদেশ এরূপ তিন টুকরা করার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে । বর্তমান পাকিস্তানে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে ভারত সৃষ্ট পিপিপি, সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট বামপন্থী দলসমূহ, টিটিপি, মোহাজের কওমী পার্টি, বালুচ লিবারেশন ফ্রন্ট, ধর্ম ব্যবসায়ী ভণ্ডপীর-ফকির, কবর পূজারী, মাজার পূজারী, পীর পূজারী ও বেদআতীগণ । বর্তমান বাংলাদেশ ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারত সৃষ্ট আওয়ামী লীগ, সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট বামপন্থী দল সমূহ, শান্তিবাহিনী, বঙ্গসেনা, ধর্মব্যবসায়ী ভণ্ডপীর, ফকির, কবরপূজারী, পীর পূজারী ও বেদআতীগণ । ১৯৪৭ পূর্বকালের ভারতের এবং বর্তমান ভারতে মুসলমানরা হিন্দুদের যে সকল অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এবং হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশ ও ঈমানদার দেশ প্রেমিক মুসলমানরা ভারত সৃষ্ট আওয়ামী জোট কর্তৃক একই প্রকার অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে । হিন্দুস্থানের হিন্দুরা যেভাবে বিগত ২৫০ বছর যাবত মুসলমানদেরকে ধর্মপালনে বাধা দিয়েছে, ধর্ম ও নীতির কারণে জুলুম নিপীড়ন করেছে বর্তমান বাংলাদেশেও দেশ প্রেমিক ইসলামী শক্তিসমূহ একই রূপ অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে । ক্ষেত্রবিশেষে প্রভূকে খুশি করার জন্য এরা প্রভূর চেয়ে আরো বেশী হিংস্রতার আশ্রয় গ্রহণ করেছে । বাংলাদেশে ভারত সৃষ্ট দল ও গোষ্ঠীসমূহ বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে বর্ণহিন্দু মানস ধারন করে মুসলিম ও ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে ।
এতদসংক্রান্ত তথ্যাবলী উল্লেখের পূর্বে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হচ্ছে । বিষয়গুলো হলো-অখণ্ড ভারত তত্ত্ব বা The India Doctrin, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি ও কারণ এবং পাকিস্তান ভাঙার কৌশলের ধারাবাহিকতা ।
[চলবে, সাথেই থাকুন]
পরের পর্ব: ৬ষ্ট পর্ব
বিষয়: বিবিধ
১৬০০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন