বর্তমান সরকার অতীতের যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে
লিখেছেন লিখেছেন ফাহিম মুনতাসির ১৩ মার্চ, ২০১৩, ০২:০৯:৫১ দুপুর
ইতিহাস হলো একটি জাতির দর্পণ, আয়নার সাহায্যে আমরা যেমন আমাদের শরীরের ত্রুটি গুলো দেখে সংশোধন
করতে পারি ঠিক তেমনি একটি জাতি যদি তার অতীতের ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যতের পথের দিকে অগ্রসর
হয় তাহলে সে জাতি সফল ভাবে এগোতে পারে।
কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে আজ আমরা ইতিহাস হতে শিক্ষা নেই না এটাই হচ্ছে আমাদের ইতিহাসের
প্রধান শিক্ষা।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই ১৯৯০ সালের কথা ভুলে যান নি? তিনি নিজেও ১৯৯০ সালের একটি ঐতিহাসিক
সাক্ষী।
আপনারা নিশ্চয়ই পলাশীর যুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের কথা জানেন।
যারা পরিক্ষায় এই প্রশ্ন গুলো কোন সময় লিখেছেন তারা নিশ্চয়ই এগুলোর 'প্রত্যক্ষ' এবং 'পরোক্ষ' কারণ
গুলো বেশ ভালো করেই চিহ্নিত করেছেন।
তেমনি ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে সময় "প্রত্যক্ষ " কারণ ছিলো এরশাদ সরকারের সৈরাচারী শাসনব্যবস্থা।
পক্ষান্তরে "পরোক্ষ "যে কারণ গুলো এই গণআন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে সাহায্যে করে তার
সাথে আমাদের বর্তমান সরকারের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ দার করাতে চেষ্টা করব আমার এই পোষ্টে।
(১)
এরশাদ চেয়েছিলেন সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক ধারাকে উপেক্ষা করে নিজ ক্ষমতার বলে শাসনকার্য
চালিয়ে যেতে।
এখন বর্তমান সরকার বুঝতে পেরেছেন যে সংসদে তাদের সংখ্যাগড়িষ্ঠ জনবল আছে এখন তিনি ইচ্ছে করলেই
তিনি ক্ষমতা থাকার কৌশলটাকে একটা সাংবিধানিক ভিত্তি দার করাতে পারবেন।
এরই কৌশল হিসেবে তিনি নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকার আইন বাতিল করে নিজের অধীনে নির্বাচন
করতে চাচ্ছেন। কোন নারী চাইনা তার স্বামীর ঘরে আরেক সতীন আসুক তেমনি নির্বাচিত সরকারের
অধীনে নির্বাচন হলে তিনি কোন দিনই নিরপেক্ষ নির্বাচন করবেন না।
(২)
এরশাদ সরকার যেমন বেশ কিছু প্রহসনমূলক নির্বাচন করে নিজেকে তুলসী পাতা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন ঠিক
তেমনি বর্তমান সরকারও এমন বেশ কিছু প্রহসনমূলক নির্বাচন করে আমাদের দেখিয়েছেন।
(৩)
যে কোন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জাতীয় প্রচার মাধ্যমসমূহের নিরপেক্ষ ভূমিকা একান্ত কাম্য। কিন্তু
এরশাদ সরকারের শাসন আমলে এ মাধ্যমগুলোকে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও দলীয়করন করা হয়। কোন
কোন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এমনকি বিভিন্ন সময় সরকারের
সমালোচনায় অতীব মুখর খবরের কাগজ ও সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বর্তমান সরকারের আমলে আমরাও এরশাদ সৈরাচারী শাসকের নীতি এই সরকারকে অনুসরণ করতে দেখছি।
(৪)
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর থেকেই এরশাদের সৈরাচারী সরকার এদেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমূহ ধ্বংস
সাধনে তৎপর হয়।
বর্তমান সরকারের প্রেক্ষাপটও তাই আপনাদের স্বচক্ষে দেখা গুলো একটু মিলিয়ে নিবেন।
(৫)
এরশাদ সরকার ছিল বিরোধী মতামতের প্রতি নিতান্তই অসহিষ্ণু।বিরোধী দল এবং জোটসমূহের প্রতি এ সরকার
বরাবরই আক্রমণাত্নক মনোভাব পোষণ করতেন এবং বিরোধী দলীয় প্রতিবাদ মিছিলের উপর সরকারি মদদপুষ্ট
গুন্ডাবাহিনীর সশস্ত্র হামলার ফলে অসংখ্য নেতা কর্মী আহত হয়।
সৈরাচারী সরকারের সাথে আমরা যেটার স্পষ্ট মিল পায়।
(৬)
এরশাদ সরকারের সময় দ্রব্য মূল্যের মুদ্রাস্ফীতি ছিল তৎকালীন সময়ে চড়ম আকার।
সৈরাচারী সরকারের সাথে বর্তমান সরকার কমকিসে?
(৭)
এই দেশের কোমল মনা মানুষ একটু বেশি ধর্মপ্রাণ ছিলো তাই এরশাদ সরকার ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার
করে।
আর বর্তমান সরকার ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে একটু ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না!
(৮)
এরশাদ সরকার শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস কায়েমের জন্য "নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ "গঠন করে কুটনৈতিক উপায়ে।
যেটা এরশাদ সরকার পতনের একটা উল্লেখ যোগ্য কারণ ছিলো।
আর বর্তমান সরকারের তা প্রয়োজন হয়নি তার ছাত্রলীগই তাকে যে বারটা বাজাচ্ছেন যেটা বলার
উপেক্ষা রাখে না।
(৯)
১৯৯০ সালে সৈরাচারী এরশাদ সরকার চেয়েছিল তার অধীনে নির্বাচন করতে। কিন্তু আওয়ামীলীগ,
বি.এন.পি.,জামায়াতে ইসলামী ইত্যাদি প্রধান বিরোধী দল এ নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয়।
আর আজ বর্তমান সরকার চাচ্ছে ঐ সৈরাচারী সরকারের মত নিজের অধীনে নির্বাচন করতে। এরশাদ সরকার
যেতে নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করলে সুনিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরেছিলেন
বর্তমানে সরকারও কি তাই ধারণা করছে?
বর্তমান সরকার যদি ঐ সৈরাচারী সরকারের নীতি অনুসরণ করে সামনে এগুতে থাকে তাহলে এই সরকারের পতনও
যে অতি নিকটে তা বলার উপেক্ষা রাখে না।
এই দেশের মানুষ বরাবরই প্রতিটি শাসকের শাসন মেনে নিয়েছে কিন্তু শোষণ মেনে নেইনি যেমন বৃটিশ সরকারের
শাসন এইদেশের মানুষ মেনে নিয়েছিল কিন্তু যখনই শোষণ করতে লাগল তখনই এই দেশের মানুষ
প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, তেমনই ভাবে পাকিস্তান সরকার যখন এই দেশের মানুষকে শাসন করেছিল তখনও এই দেশের
মানুষ তাদের শাসন মেনে নেই কিন্তু যখনই তারা এই দেশের মানুষকে শোষণ করতে শুরু করে তখনই এই দেশের
মানুষ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে যেমন আচরণ করছিলেন এরশাদ সরকার আর যার ফল হয়েছিলো পতন।
তাই আমি মনেকরি সরকারের নিজ স্বার্থেই তার সৈরাচারী মনোভাব ত্যাগ করা উচিৎ।
বিষয়: রাজনীতি
১২৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন