বন্ধু দিবস এবং বন্ধুত্বের ব্যপারে ইসলাম কী বলে।
লিখেছেন লিখেছেন ফাহিম মুনতাসির ০২ আগস্ট, ২০১৫, ০৭:৩৫:০৯ সন্ধ্যা
বন্ধুত্বের ব্যপারটায় ইসলাম অনেকটা গুরুত্ব দিয়েছে। কুরআনের স্পষ্ট বলা হয়েছে, "সত্যবাদী লোকদের বন্ধু হও।(আত তাওবাঃ119)
মানুষ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন অনুভব করে। কারণ, একজন প্রকৃত বন্ধু জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার অংশীদার হয়। প্রকৃত বন্ধুই পারে আত্মার আত্মীয় হয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে রাখতে।
এ প্রসঙ্গে নবীজী বলেছেনঃ "একাকী নিঃসঙ্গতার চেয়ে ভালো বন্ধু উত্তম আর নিঃসঙ্গতা মন্দ বন্ধুর চেয়ে উত্তম।"
বন্ধু নির্বাচন : ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “মুমিন ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক মজবুত কর। আর তার সাথেই পানাহার কর।” এখানে মুমিন ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মুমিন ছাড়া কি আর কারো সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না? এ প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ তায়ালাই দিয়েছেন। তিনি বলেন,
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা ঈমানদারদের বাদ দিয়ে কাফেরদের নিজের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে আল্লাহতায়ালার কাছে তোমাদের বিরুদ্ধে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ তুলে দিতে চাও?
[সূরা আন নিসা : ১৪৪]
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ঈমানদার ব্যক্তিরা কখনো ঈমানদারদের বদলে কাফেরদের বন্ধু বানাবে না। যদি তোমাদের কেউ তা করে, তবে আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্কই থাকবে না।” [সূরা আলে-ইমরান : ২৮]
এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, এমন ব্যক্তিকে আমরা বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবো যে ঈমানদার, ধর্মপ্রাণ, সত্যবাদী, সদাচারী, সৎকাজে অভ্যস্ত এবং নীতিবান কেননা
হাদিসে বলা হয়েছে, 'মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনের সময় খেয়াল করা উচিত সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।' পবিত্র কোরআন ও হাদিসের এসব বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো যে, সব ধরনের লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করাকে ইসলাম সমর্থন করে না।
রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, 'দুনিয়াতে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তার সঙ্গেই হাশর হবে ।' এ জন্য বন্ধু নির্বাচনের আগে তাকে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি। ইমাম গাযযালী (রহঃ) বলেন, 'সবাইকে বন্ধু নির্বাচন করা যাবে না, বরং ৩টি গুণ দেখে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। গুণ তিনটি হল-
১. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ
২. বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময় এবং
৪. বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান
' ফরাসী এক প্রবাদে বলা হয়েছে, 'বন্ধুত্ব হলো তরমুজের মতো। ভালো একশটিকে পেতে হলে এক কোটি আগে পরীক্ষা করে দেখতে হয়।'
ইরানের বিখ্যাত মনীষী শেখ সাদী (রহঃ) বলেছেন, 'সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।' এ উক্তির মূলকথা হচ্ছে, একজন উত্তম বন্ধু যেমন জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতে পারে । তাই যাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তাকে আগেই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।
যাদের সাথে বন্ধুত্ব নয় :
ইমাম জয়নুল আবেদীন (রহঃ) পাঁচ শ্রেণীর মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই পাঁচ শ্রেণীর মানুষ হলো- মিথ্যাবাদী, ইতর, কৃপন, অভদ্র ও নির্দয়। অন্যদিকে ইমাম জাফর সাদেক (রহঃ) তিন শ্রেণীর লোকের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই তিন শ্রেণী হলো- বিশ্বাসঘাতক, নির্মম ও মিথ্যাবাদী। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, শেষ বিচারের দিন সকল বন্ধুই শত্রুতে পরিণত হবে তবে একমাত্র সৎ বন্ধুই সেদিন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেবে। তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সততা, আমানতদারি, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্থতা প্রভৃতি গুণের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্রয়োজনে বন্ধুত্ব ছিন্ন
ভালো গুণ দেখে বন্ধুত্ব করার পরও অনেক সময় বন্ধুর মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা খারাপ গুণগুলো প্রকাশ পেয়ে যায়। এক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে বন্ধুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যেমনটি করেছিলেন, আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদেক (রহঃ)। 'ইমাম জাফর সাদেকের এক বন্ধু ছিলো; যে সব সময় ইমামের সাথে ঘোরাফেরা করতো। একদিন ইমাম বাজারে গেলেন। সঙ্গে সেই বন্ধু ও তার কাজের ছেলেটি ছিলো। বাজারে ঘুরতে ঘুরতে কাজের ছেলেটি কৌতুহল বশতঃ এটা ওটা দেখছিলো এবং মাঝে মাঝে পরিচিত লোকদের সাথে কথা বলছিলো। এতে সে তার মনিবের কাছ থেকে একটু পিছিয়ে পড়লো। আর এদিকে ইমাম ও তার বন্ধুটি বাজারের মাঝখানে চলে গেল। হঠাৎ পেছনের দিকে তাকিয়ে কাজের ছেলেকে না দেখে ইমামের বন্ধুর মেজাজ বিগড়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ছেলেটি ফিরে এলে মনিব তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। ইমামের সামনেই সে কাজের ছেলেটির বাপ-মা তুলে গালি দিলো। লোকটির অশ্লীল কথাবার্তা শুনে ইমাম অবাক হয়ে তার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বললেন, 'হায় আল্লাহ! একি করলে তুমি! ছেলেটির বাপ-মা তুলে গালি দিলে? আমি তো মনে করেছিলাম তুমি একজন ধার্মিক ও খোদাভীরু লোক। এখন দেখছি সামান্য তাকওয়াও তোমার মধ্যে নেই!'
ইমামের কথা শুনে লোকটি বলল, আপনাকে আর কি বলবো, এই ছেলেটি আসলেই বদ। তার মা সিন্ধু থেকে এসেছিলো। ওই বেটির জন্মেরও কোন ঠিক ছিল না। তাছাড়া সে মুসলমানও ছিল না। সে ক্ষেত্রে তাকে কিছু বলা মোটেও অন্যায় হয়নি।'
ইমাম বললেন, 'আমি জানি ওই মহিলা একজন অমুসলিম ছিল। কিন্তু তোমার জানা দরকার, প্রত্যেক ধর্মেরই নিজ নিজ আইন কানুন আছে। একজন অমুসলিম তার নিজ ধর্মের আইন অনুযায়ী বিয়ে করলে অশুদ্ধ হয় না। তাদের বিয়ের পর সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করলেও তা অবৈধ হয় না। তুমি ছেলেটির মাকে অন্যায়ভাবে অপবাদ দিয়েছো। তাই তোমার সাথে বন্ধুত্ব রাখা আমার পক্ষে আর সম্ভব না। আজ থেকে তোমার সাথে আমার সম্পর্কের অবসান হলো। এ ঘটনার পর ইমাম জাফর সাদেকের সাথে ওই লোকটিকে আর কখনই দেখা যায়নি।'
তবে কথা হচ্ছে বিজাতীয় দিবস সেলিব্রেট করাটা ইসলাম সমর্থন করে না, এই বিষয়টা মাথায় রাখা উচিত।
বিষয়: বিবিধ
২৩৫৫ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
-সহমত পোষণ করছি। ভাল পোস্ট। অনেক ধন্যবাদ..
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কাছের প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক না রাখলে পদে পদে বিপদে পড়তে হয় । কারণ প্রতিবেশীরই বেশী সুযোগ থাকে ক্ষতি করার । আর সে প্রতিবেশী যদি বৃহৎ ,পরাশক্তিআকাঙ্খী , আগ্রাসী ভিন্নধর্মের হয় তাহলে কি উপায় ?
কথা অনেকে জিজ্ঞাসা করে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন