কুরবানীর সময় আমাদের যে প্রচালিত ভুলটি হয়!
লিখেছেন লিখেছেন ফাহিম মুনতাসির ০৫ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:৩৫:৩০ সকাল
কুরবানীর সময় আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত আমল অনেকেই করতে দেখতে পাই, তা হচ্ছে, পশু কুরবানী দেয়ার সময় তাতে সন্তানের আকিকা দেওয়া। বিষয়টির ব্যাখ্যা এই রকম যে, যেহেতু একটি গরু কিংবা উটে সাতটি ভাগ প্রমাণিত। অর্থাৎ সাত ব্যক্তি শরীক হয়ে কুরবানী দিতে পারে এবং সেটি সাত জনের পক্ষে স্বীকৃত। তাই কোন কুরবানীদাতা যদি কুরবানীর উদ্দেশ্যে একটি গরু বা উট ক্রয় করে, অতঃপর তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদি ৪ কিংবা ৫ কিংবা ৬য় হয়, তাহলে সে অতিরিক্ত ভাগগুলিতে কুরবানীর নিয়ত না করে সেই সকল সন্তানের আকিকার নিয়ত করে, যাদের সে নির্দিষ্ট সময়ে আকিকা দেয় নি বা দিতে পারে নি। তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতঃ কুরবানীর একই পশুতে আকিকাও করে। আমরা এই আমলটি প্রায় দেখতে পাই। এখন প্রশ্ন হল, এই রকম করা কি শরীয়ত স্বীকৃত, এটা কি সহীহ দলীল সম্মত?
দেখুন, আকিকার উত্তম সময় হলো সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিবস। সপ্তম দিনে আকিকা দিতে না পারলে ১৪তম দিনে, তা করতে না পারলে ২১তম দিনে আকিকা দেবেন। সপ্তম দিনে আকিকা করার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের সুন্দর নাম রাখা, মাথার চুল কামানো এবং চুলের সমপরিমাণ ওজনের রৌপ্য সদকা করাও মুস্তাহাব। (তিরমিজি)।
বিনা কারণে আকিকায় বিলম্ব করা সুন্নতের পরিপন্থী। দারিদ্র্য বা অন্য কোনো কারণে যদি উল্লিখিত সময়ের মধ্যে আকিকা না করে, তবে সন্তান ছোট থাকা অবস্থায় যখনই অভাব দূর হবে, তখনই আকিকা করা যাবে। অভাবের কারণে যদি কোনো লোক তার শিশু ছেলেমেয়েদের আকিকা করতে না পারে, তাহলে সন্তান বড় হওয়ার পর যদি তার আর্থিক অবস্থা ভালো হয়, তখন আকিকা করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে এবং পিতা-মাতা সওয়াব পাবে, ইনশাআল্লাহ। এমনকি কারও পিতা-মাতা যদি আকিকা না করে, সে ব্যক্তি বড় হয়ে নিজের আকিকা নিজে করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) নবুওয়ত পাওয়ার পর নিজের আকিকা নিজে করেছেন।’ (বায়হাকি)।
আকিকার ক্ষেত্রে সুন্নত হলো, ছেলে সন্তান হলে দুটি দুম্বা বা ছাগল আর মেয়ে সন্তান হলে একটি দুম্বা বা ছাগল দিয়ে আকিকা করা। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দুটি সমবয়সের ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দিয়ে আকিকা দিতে হবে।’ (তিরমিজি)
আসলে কুরবানীর সময় আকিকা দেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে কোন হাদীস পাওয়া যায় না । এমনকি সাহাবাগণের আমলও পরিলক্ষিত হয় না। তাই বলা যেতে পারে মাস্আলাটি পুরোপুরি ইজতেহাদী মাস্আলা। অর্থাৎ ইসলামের মুজতাহিদ উলামাগণের গবেষণা দ্বারা স্বীকৃত, যা ফিক্হ গ্রন্থ সমূহে বর্ণিত হয়েছে। এই রকম বিষয়ে আমরা কোন গবেষককে (মুজতাহিদকে) দোষারোপ করতে পারি না। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “ফয়সালাকারী যখন বিধান প্রণয়নে গবেষণা মূলক প্রয়াস করে এবং সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে তখন তার জন্য দুটি সওয়াব নির্ধারিত হয়, আর সিদ্ধান্তে ভুল হলে একটি সওয়াবের অধিকারী হয়’’। [বুখারী মুসলিম] তবে চোখ বন্ধ করে কোন একটির অনুসরণও করা যায় না; কারণ হক্ব কোন একটি মতের সাথে রয়েছে, সবার সাথে না। তাই যেই মতটি কিতাব ও সুন্নতের বেশী কাছাকাছি আমরা সেটিই গ্রহণ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহতালা আমাদের প্রত্যেক বিবেকবান মানুষকে সত্য বোঝার তৌফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
২০৪৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন