মধ্যবিত্তের চক্রজাল
লিখেছেন লিখেছেন ফাহিম মুনতাসির ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:৩৬:১২ সকাল
আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়ে আমাদের এক অন্যতম কাজ হচ্ছে আশা করে যাওয়া, স্বপ্ন দেখে যাওয়া।
আবার সেই আশার জন্য, সেই স্বপ্নের জন্যেও আশা করে যাওয়া যে একদিন পূরণ হবেই। আর না হলেই বা কি? সবকিছু পেতে নেই। ‘সব পেলে নষ্ট জীবন '
সম্ভবত মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর জীবনের পাওয়া, না-পাওয়ার দ্বন্দ্ব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষগুলোকে একটি বৃত্তের মধ্যেই বারে বারে ঘোরাফেরা করাতে বাধ্য করে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বাবা-মা’রা তাদের জীবনের পুরোটা সময় কাটিয়ে দেন সন্তানের সম্ভব সবটুকু ভালো করার জন্য; সন্তানের সবটুকু সুখের জন্য। আর সেই সন্তানরাও চেষ্ট করে তাদের পিতামাতাকে সম্ভব সবটুকু খুশী করার জন্য। বাবা-মা তাদের ইচ্ছাগুলোকে বিসর্জন দেন সন্তানের ইচ্ছাপূরণের জন্য।
অভাব অনটন যেন তাদের নিত্য সঙ্গী! প্রতি টা মাসে কোন না কোন ছুতোয় অভাব লেগেই থাকে! আশায় তাদের বাঁচিয়ে রাখে, এই মাস টা কোন রকম পার করে দেই সামনের মাসটা হতে ভালো ভাবে চলতে পারব। কিন্তু তাদের মাঝে ঐ সামনের মাস আর আসে না...এই ভাবেই তাদের দিন -মাস -বৎসর -যুগ অতঃপর জীবনের ইতি ঘটে তবু তারা ঐ সামনের মাসটার খুজ পায় না।
মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ছেলে অথবা মেয়ে জানে যে, তাদের অর্থ নেই; প্রতিপত্তি নেই; ক্ষমতা নেই; আছে শুধু সম্মানবোধ; আছে শুধু শিক্ষা; আছে সততা; আছে ভালোবাসার মত কতগুলি গুণাবলী। তাইতো, একটা মধ্যবিত্ত সন্তান কোন কাজ করার আগে হাজারো বার চিন্তা করে যে, সেটি তার পরিবারের সম্মানকে ক্ষুন্ন করবে কিনা? তার কাছের মানুষগুলোকে কষ্ট দেবে কিনা? নিজের পরিবারের কথা ভেবে কখনো কখনো কষ্টকে নিরবে সঙ্গী করে নেয়; নিজের ভালোলাগাগুলোকে দেয় বিসর্জন। জীবন-যুদ্ধের জন্য তাকে নিজেকেই এগিয়ে যেতে হবে এটা জানে বলেই একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান লেখাপড়ার জন্য নিজেকে উজাড় করে দেয়। তবে ধরা খাই আমাদের সভ্য (?) সমাজের নিয়মের নামে অনিয়মের ভেড়াজলে!
তবে মজার বিষয় হলো তাদের ভেতর একটা আত্নতৃপ্ত বোধ কাজ করে। তারা বলে আমার স্রষ্টা আমাদের পরিক্ষা করছেন কেননা তিনি তো বলেছেনঃ '...অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ জানিয়ে দিন সবরকারীদের।' (সূরা বাকারা : ১৫৫)
তাই তারা সবর করে অথাৎ ধৈর্য্য ধরে এবং বলে আমার স্রষ্টা নিশ্চয়ই আমার সাথে আছেন কেননা তিনি অন্যত্র বলেছেনঃ '...নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।' (সূরা বাকারা : ১৫৩)।
প্রশ্ন হতে পারে স্রষ্টা কেন এই মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের কষ্ট দিয়ে থাকেন? তিনি কি তাহলে তাদের প্রতি অবিচার করছেন? সৎ লোকের বিপদাপদ দেওয়ার কারণ তাদের গোনাহ নয়, বরং উদ্দেশ্য হ’ল তাদের পরীক্ষা করা এবং পরীক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা। যেমন ইবরাহীম (আঃ)-কে আল্লাহ কঠিন পরীক্ষা সমূহ নিয়েছেন। অবশেষে সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ায় তাঁকে আল্লাহ বিশ্বনেতার মর্যাদায় ভূষিত করেন। ইহুদী-নাছারা-মুসলমান সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ‘পিতা’ হিসাবে তিনি সারা পৃথিবীতে সমাদৃত ও নন্দিত। অথচ তাঁকে নির্যাতনকারী রাজা নমরূদ সর্বত্র ধিকৃত ও নিন্দিত। এমনকি নমরূদ বা ফেরাঊন বা আবু জাহলের নামে সন্তানের নাম রাখতেও কোন পিতা-মাতা রাজি হবেন কি-না সন্দেহ। তাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে মুমিনগণের উপরে মুছীবত প্রকৃত প্রস্তাবে তাদের জন্য রহমত স্বরূপ।
যেমন : রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মহান আল্লাহ্তা'আলা যে ব্যক্তির কল্যাণ চান তাকে বিপদে ফেলেন।
[বুখারী, রিয়াদুস স্বালিহিন, ৩৯]
অপর এক হাদিসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্ যখন তাঁর বান্দার কল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন দুনিয়াতে তার জন্য তাড়াতাড়ি বিপদ-আপদ নাযিল করে দেন। আর যখন তিনি তাঁর বান্দার অমঙ্গলের ইচ্ছা করেন তখন তাকে গোনাহের মধ্যে ছেড়ে দেন। অবশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পাকড়াও করবেন।
[তিরমিযী, রিয়াদুস স্বালিহিন, ৪৩]
রাসূল সাঃ বলেছেনঃ কোন মুসলিম ব্যক্তি মানসিক বা শারীরিক কষ্ট পেলে,কোন শোক বা দুংখ পেলে অথবা চিন্তাগ্রস্ত হলে সে যদি ধৈয্য ধারণ করে তাহলে আল্লাহ প্রতিদানে তার সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন।
এমনকি যদি সামান্য একটি কাটাও পায়ে বিধে তাও তার গুনাহ মাফের কারণ হয়ে দাড়ায়।
(বুখারী ও মুসলিম)
অতএব জীবনে হতাশ হলে চলবে না। ' আশায় জীবন, জীবনের শ্রী। '
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন