হে মুসলিম একটা কথা শুনে যাও...
লিখেছেন লিখেছেন ফাহিম মুনতাসির ০৩ জুলাই, ২০১৪, ০৫:৪৯:৪৪ বিকাল
পোস্টটা এরিয়ে যাবেন না, যখন পোস্টটি লিখতে বসি একটা চাপা কষ্ট নিয়ে লিখতে শুধু করি...
এক লোক অসুস্থ হবার পর ডাক্তারের কাছে গেলো, ডাক্তার তাকে দেখে তার সুস্থতার জন্য প্রেসক্রিপশনে ঔষধ ও কিভাবে খাবে এবং অসুস্থ হতে সুস্থ হবার আগ পর্যন্ত কিভাবে চলবে তা সুন্দর করে লিখে দিলেন। কখন কি খেতে হবে, কিভাবে চলতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তো লোকটি তেমন শিক্ষত ছিলো না, তবে সে প্রেসক্রিপশন পড়তে পারলো অথচ ঠিকমতো বুঝতে না পারার কারণে ঔষধ খেল সকালেরটা রাতে, রাতের টা সকালে! যেটা খাবারের পূর্বে ছিলো ওটা খেল পরে যেটা খাবার পর ছিলো ওটা খেল পূর্বে! খাদ্যের ক্ষেত্রে এবং চলাফেরার ক্ষেত্রেই সাঙ্ঘাতিক রকম অনিয়ম চলতে থাকে! শুধু সে প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার যা যা করতে বলছিলো সে ভাবে না চলতে পারার কারণে! তার মূল সমস্যা ছিলো সে পড়তে পারল ঠিকই কিন্তু সেটা বুঝল না, তার ফলশ্রুতিতে সে সুস্থ হবার বদলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লো।
আমাদের মুসলমানদের আজ সেইম অবস্থা! আমরা আজ কোরআন পড়ি কিন্তু কোরআনে আমাদের রব আমাদের কি আদেশ নির্দেশ দিচ্ছে তা আমরা বুঝি না এবং সেই অনুসারে চলিনা বিদায় কল্যাণ লাভ করতে পারি না।
ছোট্ট একটা ঘটনা শেয়ার করি তাহলে আপনি সহজেই বোঝাতে পারবেন আমাদের কি করুণ পরিণতি! সেদিন তারাবীহ নামাজের সময় প্রত্যেক চার রাকাত নামাজের পর কেন হাফেজ সাব হাত তুলে মোনাজাত করবে না এই নিয়ে তুলকালাম কান্ড বাধিরে দিলেন এক সনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক! মসজিদে পুরা হই হই রই রই কান্ড বাধিয়ে দিলেন! পরে একই প্রতিষ্ঠানের অন্য একজন অধ্যাপক বললেন "স্যার, আসলে মোনাজাতের বিষয়টা নিয়ে অনেক ইমামদের মধ্যে ইখতেলাফ আছে আমরা সেদিকে না যায়, আর আপনি দেখবেন কিংবা যারা সৌদিতে হজ্জ করতে গেছেন নামাজের পর তারা হাত তুলে মোনাজাত করে না "
কিন্তু ঐ অধ্যাপক সাহেব বিষয়টা মানতে নারাজ! তিনি বলেন, 'আমাদের মসজিদে যে অতীত একটা ঐতিহ্য আছে এতদিনের রীতি সেটা আমরা পালন করবনা এটা হতে পারে না!'
অথচ আমাদের রাসূল (সাঃ) বলছেন : “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।
(সুত্রঃ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে)
যে ব্যক্তি বিদআতী আমল করবে সে যত বড় হুজুর বা মুফতি বা আলেম ই হোন না কেন তার সম্পর্কে রাসুল (সা বলেন: যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে, যার মধ্যে আমাদের আদেশ নেই, তা আমলকারীর উপর প্রত্যাখ্যাত হবে। – (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)
আমি হতবাক হলাম, বড্ড বেশি মর্মাহত হলাম! একজন অধ্যাপকের মুখে আমি কি শুনছি! তার জ্ঞানের ভিত্তি সমাজের প্রচারিত রীতি! কোরআন হাদীসে এই ব্যপারে কি বলা আছে তিনি তার প্রতি কোন ভ্রক্ষেপই করছে না! জনাব অধ্যাপক সাহেবের কথা শুনে আমার হুট করেই 'আবু জাহেলের ' কথা মনে পড়ল। আবু জাহেলের নাম ছিল উমর বিন হিশাম/হাশাম। ইসলাম পূর্ব সময়ে মক্কার মানুষরা তাকে ডাকতো 'আবু হাকাম' মানে জ্ঞানের পিতা। তাকে এইজন্য আবু হাকাম ডাকত যে ততকালীন সময় তার মত পন্ডিত আর কাউকে খুজেঁ পাওয়া যায় নি। ইসলামের আগমন পরবর্তী যুগে-ইসলামকে সত্য জেনেও তার বিরোধিতা ও নিষ্ঠুরতার জন্য তার নিক নাম 'আবু হাকাম হতে আবু জাহাল' অথাৎ মূর্খের পিতা, ইসলামের জ্ঞান না থাকার কারণে।
আপনি বড় জ্ঞানী কিংবা পন্ডিত হতে পারবেন, কিন্তু ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞান আপনার মধ্যে না থাকলে আপনি আমাদের রবের কাছে মূর্খ বলেই বিবেচ্য হবেন।
একজন মুসলমানের ইসলামী জ্ঞানের উৎস কোন সামাজিক প্রথা কিংবা কোন হুজুরের বয়ান হতে পারে না, একজন মুসলমানের ইসলামী জ্ঞানের উৎস হল কোরআন এবং বিশুদ্ধ হাদীস। আমরা আজ কোরআন বুঝে পড়ি না বিদায় আমাদের এই সমস্যা। কে কি বললো কিংবা করলো সেটা আপনার বিবেচ্য বিষয় নয়, আপনার কাছে কোরআন আছে, হাদীস আছে , সেটা আপনি দেখেন সেখান হতে সমাধান খুজেঁ পাবেন, যদি না পান তারপর আপনি ইজমা, কিয়াস কিংবা মাসহুর ইমামরা কি বলছেন ওটা দেখেন।
আপনি কোরআন এবং বিশুদ্ধ হাদিসে খোঁজে দেখুন রাসূল (সাঃ) নামাজের পর হাত তুলে দোআ করতেন কিনা? তারমানে কি রাসূল (সাঃ) কখনও হাত তুলে দোআ করতেন না? হ্যাঁ করতেন বিশেষ বিশেষ সময় যেমনঃ হাত তুলে দোআ করতেন বৃষ্টির জন্য, বৃষ্টি বন্ধের জন্যে, চাইলে আপনি প্রমাণ দেখতে পারেন : বুখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১২৭ , হা/৯৩৩ জুম’আর সালাত’ অধ্যায়)
একই বিষয় সম্পর্কিত আরও হাদীস দেখুন – বুখারী প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৪০ , হা/১০২৯ ‘ইস্তিস্কা’ অধ্যায় ।
বৃখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৩৭ ; মুসলিম , প্রথম খন্ড , পৃঃ ২৯৩-২৯৪ ।
মুসলিম , মিশকাত হা/১৪৯৮ ‘ইস্তিস্কা’ অনুচ্ছেদ ।
বুখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৪০ , হা/১০৩১ ; মিশকাত হা/১৪৯৯।
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহনের সময় হাত তুলে দোআ করতেন চাইলে প্রমাণ খুজতে পারেন : মুসলিম ১ম খন্ড , পৃঃ ২৯৯ হা/৯১৩ , চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সালাত অধ্যায়
উম্মতের নাজাতের জন্য দোআ করতেন, চাইলে প্রমাণ দেখতে পারেন : মুসলিম , ১ম খন্ড , পৃ১১৩ , হা/৩৪৬ ‘ঈমান’ অধ্যায়
কবর জিয়ারতের সময় দোআ করতেন, চাইলে প্রমাণ দেখতে পারেন : মুসলিম , ১ম খন্ড , পৃঃ ৩১৩ , হা/৯৭৪ ‘জানাযা’ অধ্যায় , অনুচ্ছেদ-৩৫।
এমন আরও বেশ কিছু বিশেষ মূহুর্তের কথা আমরা হাদিসে পেয়ে থাকি যেখানে রাসূল হাত তুলে দোআ করতেন। কিন্তু নামাজের পর হাত তুলে দোআ করতে আমি অন্তত কোথাও পাইনি বিশুদ্ধ হাদিসে কিংবা কোরআনে। আপনি পেলে সেটা আমাকে জানালে উপকৃত হব।
আরে ভাই, আপনি যে সূরা ফাতিহা পড়ছেন তার অর্থটা ইকটু বুঝে পড়ে দেখুন আপনি কি প্রার্থনা করছেন স্রষ্টার কাছে! আসলে এ সূরাটি হচ্ছে একটি দোয়া। যে কোন ব্যক্তি এ গ্রন্থটি পড়তে শুরু করলে আল্লাহ প্রথমে তাকে এ দোয়াটি শিখিয়ে দেন। গ্রন্থের শুরুতে এর স্থান দেয়ার অর্থই হচ্ছে এই যে, যদি যথার্থই এ গ্রন্থ থেকে তুমি লাভবান হতে চাও, তাহলে নিখিল বিশ্ব-জাহানের মালিক আল্লাহর কাছে দোয়া এবং সাহায্য প্রার্থনা করো। মানুষের মনে যে বস্তুটির আকাংখা ও চাহিদা থাকে স্বভাবত মানুষ সেটিই চায় এবং সে জন্য দোয়া করে। আবার এমন অবস্থায় সে এই দোয়া করে যখন অনুভব করে যে, যে সত্তার কাছে সে দোয়া করছে তার আকাংখিত বস্তুটি তারই কাছে আছে। কাজেই কুরআনের শুরুতে এই দোয়ার শিক্ষা দিয়ে যেন মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সত্য পথের সন্ধান লাভের জন্য এ গ্রন্থটি পড়, সত্য অনুসন্ধানের মানসিকতা নিয়ে এর পাতা ওলটাও এবং নিখিল বিশ্ব-জাহানের মালিক ও প্রভু আল্লাহ হচ্ছেন জ্ঞানের একমাত্র উৎস--- একথা জেনে নিয়ে একমাত্র তাঁর কাছেই পথনির্দেশনার আর্জি পেশ করেই এ গ্রন্থটি পাঠের সূচনা কর।
বাদ বাকি রুকু,সেজদা, শেষ বৈঠকে আপনি স্রষ্টার কাছে কি বলছেন ইকটুখানি অনুবাদ দেখে নেবেন।
তাই আসুন আমরা কোরআন নাজিলের মাসে কোরআন কে অর্থ সই বুঝে তেলাওয়াত করতে চেষ্টা করি, সবচেয়ে ভাল হয় তাফসীর সহ পড়লে। পাশাপাশি বিশুদ্ধ হাদীস পাঠের অভ্যাস করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞান অনুসারে চলার তৌফিক দান করুন (আমিন)।
বিষয়: বিবিধ
১৪১২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন