টাকা কি রূপ বন্ধু আমাদের!
লিখেছেন লিখেছেন ফাহিম মুনতাসির ০৩ জুন, ২০১৪, ১২:১৫:৫৫ দুপুর
ইংরেজিতে বলা হয় Money is a must for human life in the society. মীর মশাররফ হোসেন বলেছিলেন অর্থই সকল অনর্থের মূল। কথা দুটোই সত্য । টাকার প্রয়োজনীয়তা আমরা সকলেই বুঝি । টাকা দিয়ে কেনা না গেলেও সুখের
সামগ্রী যা আছে তা কিন্তু টাকা ছাড়া মেলে না । হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টির জলের কথা বলেছিলেন, যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না, অথচ আমাদের সুখের অনুভূতি দেয় । হ্যাঁ, দেয় । ফুলের ঘ্রাণ সুখ দেয়, হঠাৎ হিমেল হাওয়াও সুখ দেয়, প্রেয়সীর উষ্ণ পরশও সুখ দেয়, কিন্তু এসব তখনই প্রযোজ্য হয়, যখন পেট সন্তুষ্ট থাকে । পেটে ক্ষুধা থাকলে পূর্ণিমার চাঁদকে যেমন ঝলসানো রুটি মনে হয়, তেমনি হাতের কাছের সুগ্ধি গোলাপ ফুলকেও নিতান্ত ভেজে খাওয়ার সবজি বলে মনে হবে । টাকা দরকার খাবার কিনতে । টাকা দরকারছবৌয়ের সম্ভ্রম ঢাকার জন্য একটি কাপড় কিনতে । টাকা দরকার ছেলের কলেজের বেতন দিতে, টাকা দরকার মেয়েকে একটি ভালো স্কুলে ভর্তি করাতে ।
টাকা দরকার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে । টাকা দরকার । টাকা দরকার । Money is the second God.
টাকা হলে ক্লিষ্টেরও বুকের ছাতি চওড়া হয়, মূর্খও গটগটিয়ে ইংরেজি ঝাড়তে শেখে, নিরীহও সিংসের হুঙ্কার ছাড়ে, বোকাও চতুর— কুচক্রী হয় । টাকা ছাড়া পুরুষ পথের মুমূর্ষু কুকুরের মতো । তার চেচাঁনোরও সাহসটুকু নেই, বুক ফুলিয়ে চলার কথা তো দূর । কত যে জ্ঞানী মহারথী টাকার অভাবে না খেয়ে রাস্তায় মিশেছে, চুরির দায়ে জেলের অন্তরালে হারিয়ে গেছে,এঅন্যের নামে বই লিখে নিজের জ্ঞান বিক্রি করে ঘরের ভাত কিনেছে; আর কত মেধাবী ছেলেই যে টাকার অভাবে স্কুলে পড়তে না পেরে শেষে কাগজ টোকানোর দলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে— সে পরিসংখ্যান ইতিহাস রাখেনি, রাখেও না ।
ইতিহাস কেবল সফল ব্যক্তিদের তোষামোদ করতে জানে । ইতিহাস সফলের আর বীরের স্তুতিনামা মাত্র । হোক গে, বলছিলাম অর্থের কথা । খেয়ে পরে বাঁচতে টাকার বিকল্প নেই । টাকা লাগবেই । এখন প্রশ্ন হল, কত টাকা লাগে আসলে ? এ উত্তর আসলে কখনও মিলবে না । কারো ছয়শো টাকার শাড়িতে হয়, আর কারও ষাট হাজার টাকার শাড়িতেও হয় না । আপেক্ষিক । ব্যাপারটা একেবারেই আপেক্ষিক । কে যে কী চায়, কতটা চায় এবং কিভাবে চায় তার ঠিক নেই কিছু । রাজনৈতিক নেতাদের অর্থলোভের কথা তুলে আর কাজ নেই । হলমার্কে চার হাজার কোটি টাকা খেয়ে সাবড়েছে এক বেচারা । কী করবে এত টাকা দিয়ে ? তিনবেলার জায়গায় চারবেলা খাবে ? পাঁচবেলা খাবে ? বিরাট আলিসান বাড়ি বানিয়ে শুয়ে থাকবে ? দেশবিদেশের বিখ্যাত সব রেস্তোরাঁর চেয়ারে নিজের নাম লেখাবে ? সহস্র নর্তকী নিয়ে রাত্রিবাস করবে ? কিন্তু কতক্ষণ ? কতক্ষণ খাওয়া যায় ? নারীর শরীর আর কতক্ষণই বা ভালো লাগে ? একটা নতুন তত্ত্ব বলি— যে চাহিদা যত তীব্র, সে চাহিদা ততই ক্ষণস্থায়ী । নারীর স্তন মানব শরীরের সবচেয়ে উপভোগ্য অঙ্গ, আর মৃত্যুর পর সেই স্তনই সবার আগে পঁচে, পোকা উতপাদন করে, দুর্গন্ধ ছড়ায় আর ঘৃণার্হ হয় । আমার কাছে দশ টাকার একটি নোটের মূল্য যা, আপনার কাছেও তা, আর একজন কোটিপতির কাছেও তা । কোটিপতি বলে সে কিন্তু দশ টাকাকে এক টাকা বিবেচনা করে না । রিকশাওয়ালাকে দশ টাকার জায়গায় বিশ টাকা দেয় না, বরং দেখা যায় দুই টাকা বেশি চাওয়ার কারণে বাড়ির সামনে রিকশাওয়ালা পেটায় । ওয়েটারকে বকশিস দেয় একশো টাকা আর রোস্তোরার বাইরের ভিক্ষুককে দেয়ার মতো ভাংতি এক টাকা খুঁজে পায় না পকেটে । হাশপাপিজ জুতো কেনে আটাশ হাজার টাকা দিয়ে । এই কি টাকার উপযোগিতা ? আমরা দরিদ্র মুচির গল্পও জানি । টাকা তার সুখের জীবনকে কিভাবে দুর্বিসহ করে তোলে সে অনেকেরই জানা আছে । যার ঘরে আট হাজার টাকা আছে সে খুব হিসেবী হয়ে ওঠে, ইশ কোনমতে আর দু' হাজার টাকা হলেই দশ হাজার টাকার মিল হয় ! আর যার ঘরে মাস শেষে দু' হাজার টাকা আছে, সে ভাবে ধুর এটা জমিয়ে আর কী এমন বড়োলোক হব ? এরচেয়ে একবেলা বাজার করে ভালোমন্দ খাই ! যার ব্যাংকে আশি লাখ আছে তার আর বিশ লাখের জন্য বড়ো তরাস ! এ একটা বড়ো নেশা । এ নেশা মানুষকে অহঙ্কারী, দাম্ভিক করে তোলে । নষ্ট করে, ধ্বংস করে, কত সম্পর্ক!
বিষয়: বিবিধ
১১১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন