শুধু ইসলাম নয় অন্যান্য ধর্মেও পর্দার কথা বলে
লিখেছেন লিখেছেন ফাহিম মুনতাসির ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:৩৮:১৫ বিকাল
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় গত ১২ সেপ্টেম্বর ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী হাফসাকে বহিষ্কার করে। লিখিত ওই আদেশে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেসকোড না মানার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তার পর হতে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন দেখছি বোকারার পক্ষে বিপক্ষে ব্লগ এবং ফেইসবুকে তর্কবিতর্ক হচ্ছে।
প্রতিটা ধর্মের পর্দার কথা বলা আছে কিন্তু মুশকিল হচ্ছে ইসলাম ধর্মে পর্দার কথা বলেই যতসব আপত্তিকর কথা শুনা যায়! ইসলাম ধর্ম ছাড়াও প্রতিটি ধর্মেই পর্দার ব্যপারে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে যে তা ইকটুখানি খেয়াল করে দেখুন।
বাইবেলের নতুন নিয়ম পাঠ করলে পর্দা সম্বন্ধে কিছু কিছু বিবরণ দেখতে পাওয়া যায়। যেমন -
"কিন্তু যে কোন স্ত্রী অনাবৃত মস্তকে প্রার্থনা করে, কিংবা ভাববাণী বলে, সে আপন মস্তকের অপমান করে, কারণ সে নির্বিশেষে মুন্ডিতার সমান হইয়া পড়ে। ভাল স্ত্রী যদি মস্তক আবৃত না রাখে, সে চুলও কাটিয়ে ফেলুক, কিন্তু চুল কাটিয়ে ফেলা কি মুন্ডন করা যদি স্ত্রীর লজ্জার বিষয় হয়, তবে মস্তক আবৃত রাখুক। " (১ করিন্থীয় ১১:৫,৬ পদ)
বাইবেলের পুরাতন অংশ পাঠে জানা যায় যে ঐ সময়ও পর্দার প্রচলন ছিল। যেমন -
"আর বিবিকা চক্ষু তুলিয়া যখন ইসহাককে দেখিলেন, তখন উষ্ট হইতে নামিয়া সেই দাসকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে ক্ষেত্রের মধ্য দিয়া আসিতেছেন, ঐ পুরুষ কে? দাস কহিলেন, উনি আমার কর্তা। তখন বিবিকা আবরকে লইয়া আপনাকে আচ্ছাদন করিলেন। " (আদি পুস্তক ২৪:৬৪, ৬৫ পদ)
এবার দেখুন হিন্দু ধর্মে পর্দা প্রথা সম্পর্কে কী বলছে,
ঋগ্বেদে আছে, "হে নারী! তুই নিচে দৃষ্টি রাখ, উর্ধ্বে দৃষ্টি করিস না। আপন পদযুগল একত্রে মিলিয়া রাখ। তোর নাক যেন কেউ দেখতে না পায়, যদি এমন লজ্জাবতী হতে পারিস, তাহলে নারী হয়েও তুই সম্মেলনের পাত্রী হতে পারবি। "
এছাড়াও বলা হইছে, "কি বালিকা, কি যুবতী, কি বৃদ্ধা, কোন স্ত্রীলোককেই নিজ গৃহেও স্বাধীনভাবে কোন কার্য করা উচিত নয়। "(স্ত্রী ধর্ম :১৪৭)
পর্দা বিদ্বেষী লেখক মাহমুদ শামসুল হক তার 'নারী কোষ' বই এর ১৭৭-১৭৮ পৃষ্টায় লিখেছেন -
এক সময় হিন্দু নারীরাও মসারীর ভেতর বসে গঙ্গাস্নানে যেত। ভারত বর্ষীয় হিন্দু -মুসলিম রমনীরা অসুখেও ডাক্তার দেখাতো ঘেরা টোপের আড়াল থেকে। প্রচীনকাল হতে হিন্দু সমাজে 'অসূর্যম্পশ্যা' নামক একটি শাস্ত্রীয় শব্দ চালু আছে। অথাৎ সূর্যালোকও নারীদের ছোবেনা।
এবার দেখুন বৌদ্ধ ধর্মে এই বিষয়ে কী বলছে, -
"যাহাতে স্বামীর কোন প্রকার কষ্ট না হয় তদ্বিষয়ে সর্বদা লক্ষ রাখিবে। পর -পুরুষের প্রতি ভ্রমেও খারাপ মনোভাব নিয়া দৃষ্টিপাত করিবে না। পতিব্রতা ধর্ম উত্তম রূপে রক্ষা করিবে। স্বামী প্রমুখ বাড়িস্থ সুখ -অসুখ সর্বদা জিজ্ঞেসা করিবে।…"
"যাহাতে উদর, পেট ও স্তন দেখা না যায় সেইরূপভাবে বস্ত্র পরিধান করিবে ও গায়ে দিবে। সর্বদা পরিষ্কার বস্ত্র ব্যবহার করিবে। পুরুষ সম্মুখে চুল আঁচড়াইবেনা, এবং উকুন ধরিবেনা। …"
(গৃহীনীতি পর্ব :নারীদের কর্তব্য :২৫২,২৫৩,২৫৪ পৃষ্ঠা)
গ্রিকদের পর্দা প্রথার ব্যপারে জানতে পারি যে, ফরাসি লেখক লারুস তাঁর Encyclopedia- তে লিখেছেন যে গ্রিক মেয়েরা ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় এক প্রকার আবরণী দ্বারা নিজেদের মুখকে ঢেকে নিত। Shamam antiquite Grecquest বই এর ৫৮৩ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে যে, এথেন্সের মেয়েরাও পর্দা পালন করে চলত।
ইহুদি ধর্মে পর্দা সম্পর্কে বলা হইছে যে, -
"ইনসাইক্লোপিডিয়া বিবলিকার "-র ৫২৪৭পৃষ্টায় আছে :হিব্রু নারীদের সাধারণ পোশাকের একটা অংশ ছিল 'নেকাব '।এই নেকাব মাথা থেকে কাঁধ ঢেকে কোন কোন সময় পা পর্যন্ত চলে যেত। এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ইহুদি ধর্মগ্রন্থ 'তালমুদ ' থেকে।
এবার আসুন দেখি ইসলাম কেন পর্দা প্রথা এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে এবং কিছু যৌক্তিক কারণ তুলে ধরলাম-
মনোবিজ্ঞানে একটি সূত্র আছে, সেটি হচ্ছে -Stimulus and Response অর্থাৎ
'উদ্দীপনা ' এবং 'প্রতিক্রিয়া'।
যেখানে উদ্দীপনা আছে সেখানে প্রতিক্রিয়া হবেই।
মনোবিজ্ঞানের মতে, বস্ত্রহীন কোন নারীর প্রতি যদি কোন পুরুষ দৃষ্টিপাত করে, তবে ঐ নারী একধরনের যৌন সুড়সুড়ি অনুভব করবে। ফলে ঐ নারীর দেহে যৌন উত্তেজনা জন্ম নেয়। এই অবস্থায় নারী পুরুষ উভয়ের দৈহিক হরমোনের তারতম্য
ঘটে। যা নারী পুরুষ উভয়ের জন্য ক্ষতিকর৷ তাই ইসলাম তথাকথিত বিবস্ত্র প্রথাকে পরিহার করে পর্দা প্রথার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।
আল্লাহ বলেন "আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমারা হৃদয়ঙ্গম করতে পার
"(সূরা জারিয়া :৪৯)
তাই পজেটিভ ও নেগেটিভ ছাড়া কোন বস্তুই কল্পনা করা যায় না। বিদ্যুৎ এর ক্ষেত্রও আমরা তাই দেখতে পাই পজেটিভ ও নেগেটিভ তার একত্রিত না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় না। যে কোন পদার্থের পরমাণু মূলত পজিটিভ প্রোটন ও নেগেটিভ ইলেকট্রনের সমষ্টি। এরা পরষ্পরের প্রতি আকর্ষিত হয়, মানুষও তাই। স্বাভাবিকভাবেই নর ও নারী (যা পজিটিভ ও নেগেটিভ) পরষ্পর দর্শনে যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি হয় না-এ কথা মানুষ অস্বীকার করলেও পদার্থ বিজ্ঞান তা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। একমাত্র পর্দা প্রথার মাধ্যমেই যৌন আকর্ষণ মূলক দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।ফটোগ্রাফার্সগণ ছবি উঠানোর জন্য কনভেক্স লেন্স এর সাহায্যে প্রতিবিম্বের সৃষ্টি করে নেগেটিভ ছবির আবির্ভাব ঘটান। এর পর তা বিশেষ পদ্ধতিতে পজিটিভ ছবির রূপ নেয়। আমাদের চোখের ভিতর রয়েছে কনভেক্স নামক লেন্স যার ফলে আমরা আমাদের বিশেষ দৃষ্টিকে ইচ্ছে করলে স্পষ্ট দৃশ্যের মত দেখতে পারি।
পদার্থ বিজ্ঞানে আলোর প্রতিফলন (Reflection of light) বলতে একটা ব্যপার আছে। এর ক্রিয়া যে কত সুক্ষ্ম এবং অন্তর্ভেদী, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। মানব দেহ হচ্ছে কত গুলো call বা কোষের সমন্বয়।
মেয়েদের শরীরের কোষগুলো সাধারণত দুর্বল। গর্ভধারণকালে এগুলো অত্যান্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে পুরুষ শরীরের প্রতিফলন-ক্রিয়া রোধ করার ক্রিয়াশক্তি একেবারে হারিয়ে ফেলে। এর ফলে গর্ভাবস্থায় পর -পুরুষের দৃষ্টি নিক্ষেপর ফলে প্রতিফলন আলোক রশ্মি গর্ভস্থ ভ্রুণের গঠন (Configuration) বিকৃত করতে পারে। এই জন্যই কোন কোন সময় দেখাযায় স্বামী স্ত্রী উভয়েই ধার্মিক, চরিত্রবান -চরিত্রবতী হওয়া সত্ত্বেও তাদের সন্তান বক -ধার্মিক দুশ্চরিত্রবান কিংবা অন্য পুরুষের চেহারার মত হয়। তবে সর্বক্ষেত্রে এই ব্যপারটি যে ঘটবে তা নিশ্চিত বলা কঠিন কারণ জ্বীনের বংশগত ব্যপার বলে একটি কথা আছে!
শক্তির অবিনশ্বরতা (Conservation of energy) সূত্রে আমরা জানি-পৃথিবীর কোন শক্তি বা বস্তুরই বিনাশ নেই। শুধু রূপান্তর হয় মাত্র, বস্তু শক্তির একটা ফসল। চিন্তারও বিনাশ নেই। কুচিন্তা মানুষের মনের অজান্তেই জমা বাঁধতে থাকে। ফলে মন অজান্তেই সচেতন মনের অন্তরালে থেকে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে।
মাঝি যেমন নৌকাকে নিয়ন্ত্রণ করে অবচেতন মনও তেমনি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে।
অবশেষে কুচিন্তা ভাবনা মানুষের শরীরের কোষ গুলোকে বিকৃত ও বিষাক্ত করে। আর তাই ইসলামও পর্দা প্রথার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
৫৭৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন