শেখ মুজিবের বাকশাল নীতি কি চাচ্ছে শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠিত করতে?

লিখেছেন লিখেছেন ফাহিম মুনতাসির ১১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৪৩:৩১ দুপুর

শেখ মুজিরেব হাতে সর্বময় ক্ষমতা তুলে দেওয়ার স্বার্থেই ১৯৭৫ সালের

২৫শে জানুযারিতে শাসনতন্ত্রে আনা হয় সংশোধনী। মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে ২৯৪জন পার্লামেন্ট সদস্যের

ভোটে “পার্লামেন্টারী কেবিনেট ফরম” রূপান্তরিত হয় প্রেসিডেন্সিয়াল ফরমে । শেখ মুজিব হন ৫ বৎসরের জন্য-

অর্থাৎ ১৯৮০ সাল অবধি-নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারি প্রেসিডেন্ট এবং সে সাথে একদলীয় রাজনীতির সর্বেসর্বা।

প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জন্য শেখ মুজিব জনতার আদালতে তথা ভোটে যাওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি।

প্রতিষ্ঠা করেন, দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল বাকশাল। তালা ঝুলিয়ে দেন অন্যান্য দলের দফতরগুলিতে। ফরমান

জারি করেন, ১৯৭৫ সালের ২৫শে মে’র মধ্যে সকল সংসদ সদস্যকে বাকশালে যোগ দান করতে হবে নইলে বাতিল

ঘোষিত হবে তাদের সংসদ সদস্যপদ। তার দলীয় সদ্স্যরা তাকে আজীবন প্রেসিডেন্ট করার পাকা বন্দোবস্তও

করছিল। ১৯৭৫এর ১৫ আগষ্ট মারা না গিলে সে রেকর্ডও যে তিনি প্রতিষ্ঠা করতেন তা নিয়েও কোন সন্দেহের

অবকাশ নেই। তার দলীয় নেতা ও কর্মীরা মাঠে ময়দানে এক নেতা-একদেশেরর ধারণা জোরেশোরে প্রচার করছিল।

যে দলের কর্মীরা শেখ মুজিবকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী রূপে প্রবল বিশ্বাস রাখে তারা সে সর্বশ্রেষ্ঠ

বাঙালীকে আজীবনের জন্য যে প্রেসিডেন্ট করতে চাইবে তাতেই বা বিস্ময়ের কি আছে?

দেশে কি গণতন্ত্র চর্চা বাড়াবে, গণতন্ত্র মৃত্যুবরণ করেছিল দলটির নিজের মধ্যেই। আওয়ামী লীগের কোন নেতাই

সেদিন শেখ মুজিবের একদলীয় স্বৈরাচারি রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনি। নেতা ও কর্মীগণ পরিণত হয়েছিল

বিবেকহীন চাটুকারে। গণতন্ত্রের নামে একটি দল কি ভাবে একদলীয় ফ্যাসীবাদের দিকে ধাবিত হতে পারে তারই

নমুনা পেশ করে আওয়ামী লীগ। মুজিব পরিণত হয় বাংলাদেশের *****। সেদিন একমাত্র জেনারেল ওসমানী ও

ব্যারিষ্টার মঈনুল হোসেন -এ দুই ব্যক্তি তার একদলীয় বাকশালী নীতির বিরোধীতা করে পদত্যাগ করেছিলেন।

লক্ষণীয় হল, এ দু’জনের কেউই আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা ছিলেন না। অথচ যারা ছিল আওয়ামী লীগের নিজ

ঘরানার পুরনো নেতা ও কর্মী, গণতন্ত্র নিয়ে যাদের ছিল প্রচন্ড গলাবাজি -তারা সেদিন কোন রূপ নৈতিক

মেরুদন্ডের প্রমাণ রাখতে পারেননি। সংসদের ২৯৪জন সদস্যের মাঝে দুইজন বাদে আর কোন ব্যক্তিই সেদিন

প্রতিবাদ করেনি। মনের ক্ষোভে দল থেকে পদত্যাগও করিনি। অথচ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সামান্যতম

অঙ্গিকার থাকলে কোন ব্যক্তি কি এমন একদলীয় শাসনকে সমর্থণ করতে পারে? কারণ এটি তো ছিল বহুদলীয়

গণতন্ত্রকে কবরে পাঠানোর মত অপরাধ। অথচ সেদিন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতা-কর্মীগণ স্বৈর-

শাসনের শুধু সমর্থণই করেনি, সেটির পক্ষে প্রচন্ড ওকালতিও করেছে। সেটি নিয়ে সামান্যতম অনুশোচনা দূরে থাক,

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আজও তা নিয়ে প্রচন্ড অহংকার। গণতান্ত্রিক চেতনা-বিবর্জিত মেরুদন্ডহীন

কর্মী ও নেতা উৎপাদনে এ দলটি যে কতটা সফল কারখানায় পরিণত হয়েছিল, সেটির প্রমানিত সেদিন হয়েছিল। এমন

মেরুদন্ডহীন নেতা-কর্মীরাই সেদিন দলে দলে এবং উৎসব-ভরে আত্মসমর্পণ করেছিল শেখ মুজিবের একদলীয় স্বৈর-

শাসনের কাছে। ছলে-বলে-কৌশলে ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতায় থাকায় ছাড়া এ দলটির আর যে কোন মহত্তর লক্ষ নেই

এবং স্বপ্নও নেই সেটি তারা সেদিন প্রমাণ করেছিল। গণতন্ত্রের বুলি পরিণত হয়েছিল ক্ষমতায় উঠার সিঁড়ি রূপে।

নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার সাথে সাথে সে সিঁড়িটাই দূঁরে ছুড়ে ফেলেছে। স্মরণযোগ্য, পাকিস্তানের ২৩ বছরের

ইতিহাসে কোনদিন এমন ফ্যাসীবাদের প্রবর্তন ঘটেনি। এমনকি জেনারেল আইউব ও জেনারেল ইয়াহিয়ার ন্যায়

জেনারেলগণও গণতন্ত্রের এতবড় শত্রুতে পরিণত হয়নি। তাদের আমলেও বহুদলীয় রাজনীতি ছিল, বহু বিরোধী দলীয়

পত্রিকাও ছিল। অথচ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৪ বছরের মধ্যেই বহুদলীয় রাজনীতির কবর রচিত হল

এবং সেটি আওয়ামী লীগ ও তার নেতা শেখ মুজিবের হাতে। দেশ পরিনত হয়েছিল পুলিশী রাষ্ট্রে। সেদিন নিষিদ্ধ

হয়েছিল সকল বিরোধী পত্রিকা। প্রকাশনের অধিকার পেয়েছিল একমাত্র সে সব পত্রিকাই যে গুলি মুজিব-

বন্দনাকে নিজেদের ব্রত রূপে গ্রহণ করেছিল।

আজও তার ব্যাতিক্রম ইচ্ছে না যে সকল পত্র-পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া এই সরকারের স্তুতি গাইতে পারে না তাদের খুলে আজ তালা ঝুলাইতে চাইছে সরকার তাঁরই ফসল হিসেবে আপনি আজ মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করলেন! শেখ হাসিনা যদি পিতার নীতি অনুসরণ করে বাকশালী রূপরেখা চালু করতে চান তাহলে হয়ত পিতার মতই আবারও ভুল করবেন, তিনি হয়ত ভাবছেন যে সমস্ত রাজশক্তি এখন তার হতে তাই তিনি এখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেন! কিন্তু ভুলে যাবেন না যে, শেখ মুজিবের শাসন আমলে ৯৮% রাজশক্তি ছিলো তার পক্ষে আর ২% ছিলো বিপক্ষে তাও লুকিয়ে কিন্তু এই ২% এর মধ্যে মাত্র দুজন ব্যক্তিই বাকশালী শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে ছিলেন অতএব চিন্তা করুন।

হিংস্র রাজনীতি করে হয়ত সাময়িক সময় গদি দখলে রাখতে পারবেন কিন্তু এই হিংস্রতার কারণে একবার যদি জনগণ আপনাকে পরিত্যাগ করে তাহলে হয়ত এরশাদ চাচার মত আপনাও পরিণতি হতে পারে।

বিষয়: রাজনীতি

১৩৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File