শেখ মুজিবের হিরো হয়ে উঠা ... কিভাবে এবং কেন?

লিখেছেন লিখেছেন চির উন্নত মম শির ১৫ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:২৪:৩০ সন্ধ্যা



রাতারাতি অবমৃশ্যতার তমশ্যা থেকে আগরতলা মামলা শেখ মুজিবকে বানিয়ে দেয় কিংবদন্তীর নায়কে। রাজনৈতিক সুবিধাবাদ মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট। তার রাজনৈতিক জিবনের দিকে তাকালে সে সত্যই স্পষ্ট হয়ে ওঠে । র্নিদ্বিধায় নিজের স্বার্থ উদ্বার করতে সবকিছুই তিনি করতে পারতেন। আগরতলা মামলা এর এক জ্বলন্ত উদাহরণ। উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে এটা বহুলভাবে প্রচারিত করা হয়েছে যে শেখ মুজিবই ছিলেন প্রথম নেতা যিনি বুঝতে পেরেছিলেন একমাত্র সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমেই পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করা সম্ভব। এবং তিনিই ছিলেন স্বাধীনতার মূল রূপকার। কিন্তু এর কোনটাই সত্য নয়।

সারা বাংলাদেশের মানুষকে জানানো হল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তথা বাঙ্গালী জাতিকে পাঞ্জাবী শোষণের হাত থেকে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে মুক্ত করার স্বপ্নদ্রষ্টা নাকি ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। কিন্তু সেটা ঐতিহাসিক সত্য নয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শেখ মুজিবকে রাতারাতি কিংবদন্তীর নায়ক করে তুলেছিল এতে কোন সন্দেহ না থাকলেও এর মূল রূপকার ছিলেন লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জাম হোসেন। এই অখ্যাত তরুণ নেভ্যাল অফিসারই প্রথম স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের। পাঞ্জাবী শোষকদের কবল থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে হবে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে; এটাও তিনিই উপলব্ধি করেছিলেন পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগদানের পরই। ১৯৫০ সালে তিনি মিডশিপম্যান হয়ে ইংল্যান্ডের রয়্যাল একাডেমীতে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরার পর কাজ আরম্ভ করেন। সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য প্রথমে মাত্র ২জন সহচর নিয়ে শুরু হয় তার বিপ্লবী কর্মকান্ড। কাজে হাত দিয়েই তিনি উপলব্ধি করলেন সবচেয়ে আগে দরকার একজন রাজনৈতিক নেতার। কারণ একজন সামরিক অফিসার হিসেবে চাকুরিতে থেকে ব্যাপকভাবে কাজ করার সুযোগ হবে না তার।

তাছাড়া শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীতে গোপন সংগঠন গড়ে তুললেই বিপ্লব করা সম্ভব হবে না। সংগঠন গড়ে তুলতে হবে দেশের জনগণের মধ্যে। তার জন্য প্রয়োজন বহুল পরিচিত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। সুপরিচিত নেতার ডাকেই অস্ত্র হাতে তুলে নেবে কর্মীরা। তিনি যোগাযোগ শুরু করলেন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের সাথে। কিন্তু বেশিরভাগ নেতারাই তার প্রস্তাবে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি। যারা দিয়েছেন তারা জুড়ে দিয়েছেন বিভিন্ন শর্ত। তাদের গদি দিতে হবে। অনেকে তাকে পাগলও বলেছেন প্রস্তাব শুনে। ভয়ে আতঁকে উঠেছেন অনেক নামিদামী নেতা। ১৯৬৪ সালে তিনি শেখ মুজিবর রহমানের সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করেন। শেখ মুজিব তার প্রস্তাব শুনে বলেছিলেন, যতটুকু সম্ভব পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করবেন। এতটুকু পর্যন্তই এর বেশি কিছু নয়। ১৯৬৬ সালে কমান্ডার মোয়াজ্জেম চট্টগ্রামে বদলি হয়ে আসেন। এতে তার তৎপরতা আরো জোরদার করার সুযোগ পান তিনি। ১৯৬৭ সালের জুন/জুলাই মাসে তিনি তার দুই প্রতিনিধি জনাব স্টুয়ার্ড মুজিবর রহমান এবং জনাব আলী রেজাকে আগরতলাতে পাঠান ভারতীয় সাহায্যের আশায়। তার প্রতিনিধিদের সাথে ভারতীয় সরকারের আলোচনা তেমন ফলপ্রসু হয়নি। বিপ্লবী জনাব স্টুয়ার্ড মুজিবর রহমানকে স্বাধীনতার মাত্র একমাসের মধ্যে গুম করে ফেলা হয়। মুজিব সরকার কিংবা তার দল এ বিষয়ে বরাবরই এক রহস্যজনক নিরবতা অবলম্বন করে এসেছে। ১৯৬৭ সালের নভেম্বর মাসে কমান্ডার মোয়াজ্জেমকে রাওয়ালপিন্ডি পাঠানো হয়। সেখানে পৌছে বিভিন্ন সূত্রে তিনি জানতে পারেন, পাকিস্তান ইনটেলিজেন্স সন্দেহ করছে যে কমান্ডার মোয়াজ্জেম রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এই খবর জানতে পেরে ছদ্মনামে ৭ই ডিসেম্বর ১৯৬৭ ঢাকায় চলে এসে তার ছোট ভাই এর সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িতে আত্মগোপন করে লুকিয়ে থাকেন। ৯তারিখ রাত প্রায় ১১টার দিকে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে চাকুরিরত ক্যাপ্টেন নূরুল ইসলাম শিশু (পরবর্তীতে ‘জেনারেল রাজপুটিন অফ বাংলাদেশ’) ও আরো কয়েকজন হঠাৎ করে বাড়িতে হানা দিয়ে কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি তখন শারীরিকভাবে অসুস্থ। নিয়ে যাবার সময় ক্যাপ্টেন নূরুল ইসলাম জনাব মোয়াজ্জেম হোসেনের স্ত্রী কোহিনূর হোসেনকে বলেছিলেন যে, বিশেষ প্রয়োজনে তাকে ঢাকা ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঘন্টা খানেকের জন্য। কিন্তু তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল ১৫ মাস পর। অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছিল তার উপর। দীর্ঘ ১৫ মাস অকথ্য অত্যাচার করেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ তার কাছ থেকে কোন কথাই বের করতে পারেনি। এর পরেই ১৯৬৮ সালের জুন মাসে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে শুরু হয় বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ১নং আসামী কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন। পরবর্তিকালে পাকিস্তানের অধিকর্তারা বুঝতে পারেন, কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রধান আসামী বানানোর ফলে সারা বিশ্বের কাছে মিলিটারী ইন্টেলিজেন্সের ভীষণ বদনাম হচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এক ঢিলে দুই পাখি মারার। জড়ানো হয় শেখ মুজিবর রহমানকে প্রধান আসামী হিসাবে। পাকিস্তান সরকার রাজনৈতিক মতলব হাসিলের লক্ষ্যে মামলা শুরু হওয়ার পর কমান্ডার মোয়াজ্জেমের নাম ১নং আসামী থেকে কেটে ২নং আসামীর জায়গায় সরিয়ে নেয়। আর এভাবেই ঐ মামলা সাপে বর হয়ে মুজিবকে গড়ে তুললো কিংবদন্তীর নায়ক হিসেবে। ’৬৯ এর ১৫ই ফেব্রুয়ারী সার্জেন্ট জহুরুল হককে গুলি করে মেরে ফেলা হল মিথ্যে অপবাদ দিয়ে। তিনি নাকি বন্দী অবস্থায় পালাবার চেষ্টা করেছিলেন। এই ঘটনারই পূর্ণরাবৃত্তি ঘটেছিল মুজিব শাসনকালে বিপ্লবী নেতা সিরাজ সিকদারের হত্যার মাধ্যমে। শেখ মুজিব সর্ম্পকে কমান্ডার মোয়াজ্জেম তেমন আকর্ষণ বোধ করেননি কখনোই। শেখ মুজিবের দলের উপরও তার আস্থা ছিল না। কমান্ডার মোয়াজ্জেমের স্পষ্টবাদিতাকে শেখ মুজিব কখনই পছন্দ করেননি। ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে ভোর ৬টার দিকে হানাদার বাহিনী তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। বাড়ির সামনে গুলি করলেও তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ক্যান্টনমেন্টে; যার হদিস আজ অব্দি তার পরিবার পরিজন পাননি।

ধর্মপ্রাণ কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না। নির্ভীক এই মুক্তিযোদ্ধা মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসে ছিলেন তার দেশ ও জাতিকে। সপেঁ দিয়ে গেলেন প্রাণ স্বাধীনতার জন্য। দেশ স্বাধীন হল। শেখ মুজিবর রহমান একচ্ছত্র নেতা বলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করলেন, কিন্তু কমান্ডার মোয়াজ্জেমের ত্যাগের প্রতি সম্মান দেখাতে পারেননি তিনি। কখনো সত্যকে তুলে ধরেননি জনগণের সম্মুখে। চুপটি মেরে থেকে সব কৃতিত্ব নিজেই হজম করে গেছেন নির্বিবাদে।

আপোষহীন প্রতিবাদী কন্ঠের অধিকারীদের চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্যই তাদের মেরে ফেলা হয় আর সুবিধাবাদী আপোষকামীদের সবসময় বাচিঁয়ে রাখা হয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। সে হিসেবেই ২৬শে মার্চ প্রাণ দিতে হয়েছিল কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে আর শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পাকিস্তানে। এমনটি ঘটেছে সর্বদা, ঘটবে ভবিষ্যতেও। ইতিহাসও তাই বলে।

সূত্র: Major Dalim bolsi ...

বিষয়: রাজনীতি

১৯৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File