পুলিশ হলেও আপনি একজন মানুষ
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ২৯ মার্চ, ২০১৩, ০৫:৫৩:১৩ সকাল
আজকাল টেলিভিশনে দেশের সংবাদ দেখা মানে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখী হওয়া। জ্বালাও পোড়াও, ভাংচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলি, আহত-নিহত ইত্যাদি চিত্রই এখনকার নিত্যনৈমিত্যিক সংবাদ। শুধু বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলই নয়, আল-জাজিরাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও এখন এই বীভ্স চিত্র হরহামেশা প্রাধান্য পাচ্চেছ। তাই সংবাদ দেখার উদ্দেশ্যে টিভি সেটের সম্মুখে বসলে বুকখানি কেমন দুরু দুরু করে কেঁপে উঠে।
এমনই ভয়ে ভয়ে শনিবার রাতে বাংলাভিশনে নিউজ দেখছিলাম। হরতাল, ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ ইত্যাদির ভয়াবহ দৃশ্য দেখে চলেছি; হঠ্ াএমনই এক মুহুর্তে লোমহর্ষক একটি সংবাদ গা শিউরে তুললো।
দুই যুবক হাসপাতালের পৃথক দুটো ওয়ার্ডে যন্ত্রনাকাতর অবস্থায় কাতরাচ্চেছ। দুজনেরই একটি করে পা নেই। সম্ভবত ডান পা খানি হাঁটুর উপরে কেটে ফেলা হয়েছে। এখন ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো।
টিভি রিপোর্টার যখন ইন্টারভিউ নিচ্চিছলেন তখন ওরা দুজনই কাঁদছিলো। চরম যন্ত্রনায় ছটফটরত একজন বলছিলেন, আমাকে কেউ বিষ খাইয়ে মেরে মেললে শান্তি পেতাম। আমাকে পুলিশ গুলি করবে কেন? আমার কী অপরাধ ছিলো? আমি তো কোনো দোষ করিনি। পুলিশের পায়ে পড়ে অনুনয় বিনয় করেছি যে আমি কোনো দল করিনা। আমি একজন পথচারী। কিন্তু এতে তাদের একটুও মন গলেনি। হঠ্ াগুলির শব্দে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। তীব্র যন্ত্রনা অনুভূত হয়। বুঝতে পারি পুলিশ আমার পায়ে গুলি ছুড়েছে।
টিভি সংবাদে যেহেতু বিস্তারিত জানার সুযোগ নেই তাই রাতে অনলাইনে প্রথম আলোসহ কয়েকটি নিউজ পেপার ঘাটলাম। কিন্তু কাংখিত নিউজটি পেলাম দৈনিক আমার দেশ-এ। নিউজটিতে চোখ বুলিয়ে যা বুঝলাম-২৮ ফেব্রুয়ারী হরতাল চলাকালে রাজপথ থেকে ওদের দুইজনকে পুলিশ ধরে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে গোসলখানায় ঢুকিয়ে হাত পা বেঁধে বাম পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। এরপর হাজত খানায় ফেলে রাখে। দীর্ঘ সময় রক্তক্ষরণ হওয়ায় তারা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। গুলিবিদ্ধ স্থানে ক্ষত হতে শুরু করে। এরপর একসময় তাদেরহাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
গুলিবিদ্ধ স্থানে গুরুতর জখম হওয়ায় ডাক্তার ওদের পা দুটো কেটে ফেলতে বাধ্য হন। এখন তাদের দুজনেরই এক পা নেই। পুলিশ প্রহরায় তারা চিক্সিাধীন। মিডিয়ার সাথে কথা বলতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
রিপোর্টে আরো দেখলাম, উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, পুলিশ আত“রক্ষার্থে গুলি করতে পারে। তবে মিছিল থেকে ধরে থানায় নিয়ে গুলি করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো থানার ব্যাপার। তারা কোন পরিস্থিতিতে গুলি করেছে না জেনে তো কিছু বলা যাবেনা। ওদিকে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি বললেন, ওরা পিকেটার। তারা নিজেদের গুলিতেই আহত হতে পারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মিছিলে আমরাও গুলি করতে বাধ্য হয়েছি। ঐ গুলি হয়তো পায়ে লাগতেও পারে।
এদিকে, টিভি রিপোর্টে যুবকদ্বয় বলছেন, তারা কোনো রাজনীতি করেন না। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততাও নেই। এদের একজন ব্যবসায়ী, অপরজন ছাত্র। ঘটনার দিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্চিছলেন। হঠ্ ামিছিলে পুলিশ গুলি করলে পিকেটাররা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। এসময় প্রাণ রক্ষার্থে তারাও দৌড় দেন। পুলিশ এসময় তাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
টিভি সংবাদটি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। আমার দেশের জনগণের টাকায় চাকুরী করে আবার দেশের জনগণের উপরই গুলি করে। ওরা কি চোর না ডাকাত? ওদের কী দোষ ছিলো। হরতাল চলাকালে রাস্তা দিয়ে ওরা কি হাঁটতে পারবেনা?
পুলিশ আত“রক্ষার্থে পায়ে গুলি করতে পারে। কিন্তু কখন, যখন পুলিশের প্রাণনাশের আশংকা থাকবে। তাহলে ঐ যুবককে থানায় ধরে নিয়ে হাত পা বেঁধে গোসল খানায় ঢুকানোর পর কি পুলিশ সদস্যরা বুঝলেন তাদের প্রাণনাশের আশংকা দেখা দিয়েছে। হাত-পা বাধা নিরস্ত্র নিরীহ ঐ যুবক কি তাদের উপর গুলি চালাতে পারে? এজন্যই কি তারা গুলি চালালেন? নাকি সাজাপ্রাপ্ত ঐ ওসি যেভাবে ইউনিভার্সিটি ছাত্র কাদেরের গাঁয়ে চাপাতি চালিয়ে চাপাতির ধার পরীক্ষা করেছিলেন ঠিক তেমনি ঐ পুলিশ সদস্যরা তাদের বন্দুক থেকে গুলি বের হয় কিনা তা পরীক্ষা করছিলেন? কারণ পুলিশের বন্দুক থেকে অনেক সময়ই গুলি বের হয়না। বিশেষ করে ডাকাত যখন ব্যাংকের বুথ ভেঙ্গে অর্থ লুটে নেয় তখন পুলিশ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে। বন্দুক থেকে তখন আর গুলি বের হয়না।
ছি! পুলিশ। ধিক্কার তোমাদের। তোমাদের ঘৃণা জানানোর ভাষা জানা নেই। জনগণের সেবায় নিয়োজিত পুলিশ ভাই, গুলি করার আগে একটি বার কি মনে হলোনা ওদের যে পায়ে আপনি গুলি করছেন তেমনি একটি পা আপনারও তো আছে। আপনার পায়ে গুলি করলে আপনি জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতেন। চাকুরী থেকে আপনাকে বিদায় নিতে হতো। ফিরে যেতে হতো মা-বাবা কিংবা স্ত্রী সন্তানের কাছে। সারাজীবন ক্রাচে ভর করে এক পা টেনে টেনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হতো আপনাকে। আপনি বোঝা হতেন একজন মায়ের জন্য, কিংবা একজন স্ত্রীর জন্য। ভাগ্য আরো খারাপ হলে ক্রাচ দিয়ে পা টেনে-টেনে এ বাড়ি ও বাড়ি ভিক্ষা করে বাকী জীবন চালাতে হতো? এক অভিশপ্ত জীবন যাপন করতে হতো আপনাকে।
নাহ আপনাদের এমন চিন্তা করতে হবে কেন? পুলিশের চাকুরী বলে কথা। আপনার হাতে অস্ত্র। আপনি কাকে তোয়াক্কা করবেন। আপনার ভয়ের কারণ কী। আপনার স্যার পুলিশ কমিশনার তো আপনাকে নির্দেশ দিয়েই রেখেছেন- দেখামাত্র গুলি। আপনাকে গুলির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।
কিন্তু আপনারও তো একটা বিবেকবোধ আছে। আপনার বুঝা উচিত। আপনি যার নির্দেশে গুলি করছেন সেই পুলিশ কমিশনার আপনাকে এই জগতে বাঁচাতে পারবেন। কিন্তু পরকালে আপনাকে জবাব দিতে হবে। অস্ত্র হাতে আছে, লাইসেন্স পেয়েছেন বলে গুলি করবেন না। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখুন। কারণ এটা ভুলে গেলে চলবেনা পুলিশ হলেও আপনি একজন মানুষ।
বিষয়: রাজনীতি
১০১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন