প্রসংগ মাওলানা দেলওয়ার হোসেইন সাঈদী : একটি পর্যালোচনামুলক জবাব

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ২৫ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৩৯:২৬ সকাল



Click this linkআবু মকসুদ ভাই, সালাম।

আমার স্ট্যাটাসের বিপরীতে একটি লিংক পোস্ট করে নাগ সাপের অসুন্ধান দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সাপ আসলেই সাপই। সে হোক ঢোরা সাপ অথবা নাগ। আপনার কথা মতো আমি যা বুঝেছি-আপনি বুঝাতে চেয়েছেন মাওলানা মাসউদ সাহেবের ক্ষেত্রে কেঁচো খুড়তে যে সাপটি বেরিয়েছে তা হচ্ছে ঢোরা বা বিষহীন সাপ। আর দেলওয়ার হোসেইন সাঈদী সম্পর্কে কেঁচো খুড়তে যে তথ্যটি বেরিয়ে এসেছে তা হচ্ছে নাগ বা বিষধর সাপ। এটাই তো? যদি এটাই আপনি বুঝাতে চান-তাহলে বলতে হয়, সাপ সাপই। সাপের ঝাপি মাথায় নিয়ে ঘুরাফেরা নিরাপদ নয়।

আপনার পাঠানো ব্লগের লেখাগুলো আমি খুব ধীরস্থিরভাবে মনোযোগের সাথে পড়েছি। বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং দেখেছি। ভিডিও শুনেছি। অন্যান্য প্রমানাদী দেখেছি। ব্লগার প্রমাণাদীসহ অনেক তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তিনি অনেক সময় দিয়েছেন। এজন্য তাকেও ধন্যবাদ।

এখানে কয়েকটি বিষয় ফুটে ওঠেছে। আমি পর্যায়ক্রমে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছি।

এক.

ব্লগার বুঝাতে চেয়েছেন দেলওয়ার হোসেইন সাঈদী মাওলানা বা আল্লামা নয়। কারণ তাঁর সর্বোচ্চ একাডেমীক শিক্ষা আলেম বা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত।

এখানে একটি কথা বলতে হচ্ছে। বাংলাদেশে যারা টাইটেল পাশ করেন তাদেরকে মাওলানা বলা হয়। টাইটেল মানে দাখিল ও আলিমের পরে আরো দুই ক্লাস (ফাজিল ২ বছর ও কামেল ২ বছর) পাশ করতে হয়।

এটা হচ্ছে সরকারী মাদ্রাসা শিক্ষার একটি সর্বোচ্চ ডিগ্রী। কিন্তু টাইটেল পাশ করলেই তিনি যে মাওলানা এমন কোনো সার্টিফিকেট দেয়া হয়না। সার্টিফিকেটে কোথাও মাওলানা লেখাও থাকেনা। লেখা থাকে কামেল।

তাহলে প্রশ্ন জাগবে-মাওলানা শব্দটি কোথা থেকে এলো। মাওলানা আরবী শব্দ। 'মওলা' শব্দের আক্ষরিক অর্থ প্রভু, আর 'না' অর্থ আমাদের। সুতরাং মাওলানা শব্দের আক্ষরিক অর্থ দাড়ায় আমাদের প্রভু। তবে এখানে প্রভু না বলে আমাদের নেতা বলাটাই ভালো। অর্থাৎ, যার আগে মাওলানা শব্দটি ব্যবহার করা হয় তিনি হচ্ছেন ধর্মীয় বিষয়ে আমাদের নেতা। এই উপাধী আলেম সমাজে বহুল প্রচলিত। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কাউকে অফিশিয়ালী এই খেতাব দেয়না এবং দেয়ার কোনো নিয়মও প্রচলিত নেই।

এখানে একটি উদাহরন উপস্থাপন করা যেতে পারে। যেমন-কবি নজরুলের তেমন একাডেমীক লেখাপড়া ছিলোনা। কলেজ কিংবা মাদ্রাসার কোনো একাডেমিক ডিগ্রীও ছিলোনা । কিন্তু তাঁর মধ্যে জ্ঞানের ভান্ডার ছিলো। অসাধারণ লেখনী শক্তি ছিলো। তাই তিনি কবি। তাঁকে কবির খেতাবটি শুরুতে কে দিয়েছে? কোনো একাডেমীক বডি? নাহ, সেটা দিয়েছেন তাঁর অগণন পাঠক। পাঠকরাই তাঁকে কবি বলে ডাকতেন। আর এভাবেই তিনি একসময় খ্যাতনামা কবি হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে তিনি আমাদের জাতীয় কবি হিসেবে ভূষিত হন।

আর এভাবেই কারো কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে কিন্তু কেউ মাওলানা হননা। এটি একটি সম্মানজনক খেতাব। ইসলামী জ্ঞাপনসম্পন্ন ব্যাক্তিদেরকে এই সম্বোধনে ডাকা হয়ে থাকে। দেলওয়ার সাঈদীর হয়তো সেই পরিমান ইসলামী জ্ঞান ছিলো। আর তাই তাঁকে মাওলানা বলা হয়।

আর আল্লামা শব্দটিও ঠিক একই রকম। এটাও কোনো ব্যাক্তি কিংবা সংগঠন কাউকে দিতে পারেনা। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ মহাজ্ঞানী। আর জ্ঞানী ব্যাক্তিদেরকেই আল্লামা সম্বোধনে ডাকা হয়ে থাকে। তবে যারা ইসলামী জ্ঞানে জ্ঞানী শুধু তাদের জন্যই এই খেতাবটি ব্যবহার করা হয়। দেলওয়ার হোসেইন সাঈদী যেহেতু একজন ভালো মুফাসিসর হিসেবে খ্যাত- এজন্য হয়তো তাঁকে আল্লামা বলা হতে পারে। সুতরাং এখানে মাওলানা কিংবা আল্লামা শব্দের ব্যবহার অপাধের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

দুই.

নাম পরিবর্তনের বিষয়টি আমি দেখলাম। তিনি নাম পরিবর্তন করেছেন। বয়সও পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু কেন? এটা তাঁর একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার। তিনিই বলতে পারবেন কোন প্রয়োজনে পরিবর্তন করেছেন। প্রয়োজনে আপনি, আমি নাম পরিবর্তন করতে পারি। এতে কোনো ক্ষতি আছে বলে মনে করিনা। এতে কোনো গুনাহ হবে বলেও মনে হয়না।

তিন.

দাখিল এবং আলেমের সার্টিফিকেটে দেখলাম-তাঁর পিতার নামের শেষে সাঈদী শব্দটি লেখা রয়েছে। তিনি যদি প্রথমদিকে নবশ্রেনীর রেজিস্ট্রেশনের সময় সাঈদী শব্দটি যোগ না করে থাকেন তাহলে হয়তো দাখিল এবং আলেমের সার্টিফিকেটে শব্দটি নাও থাকতে পারে। এটা স্বাভাবিক। পরবর্তীতে হয়তো পিতার নামের আলোকে নিজের নামের শেষেও সাঈদী যোগ করতে চেয়েছেন বলেই এফিডেভিট করে আবু নাঈম মো: দেলওয়ার হোসেইনের স্থলে সংক্ষেপ করে দেলওয়ার হোসেইন সাঈদী রেখেছেন। কিন্তু এখানে কোথাও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে তাঁর নাম দেলু শিকদার ছিলো।

চার.

নির্বাচনী নমিনেশনে সম্পদের প্রকৃত তথ্য না দেয়াটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। প্রায় সকল রাজনীতিই এটা করে থাকেন। তবে মাওলানা দেলওয়ার হোসেইন সাঈদী আর অন্য রাজনীতিক যেহেতু সমান নয়, তাই তিনি এটি করে থাকলে ঠিক করেছেন বলে মনে করিনা।

পাঁচ.

বিভিন্ন সংবাদপত্রের কাটিংয়ে যা বলা হয়েছে তা আমরা জানি। তিনি সিলেটের প্রবাসীদের সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্য করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদপত্রে সংবাদ ছাপা হয়। তবে তিনি এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, তাঁর বক্তব্য খন্ডিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রসংগ উল্লেখপুর্ব পুরো বক্তব্য ছাপা হলে আপত্তিকর কিছু পাওয়া যাবেনা। আমি তাঁর মুল বক্তব্য শুনিনি। সুতরাং না শুনে সত্য-মিথ্যা মন্তব্য করা সমীচিন হবেনা। তাছাড়া ব্রিটেন ও আমেরিকা সম্পর্কে যে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে-এ সম্পর্কেও আমি সম্পুর্ণ ওয়াকেফহাল নয়। বিভিন্ন ইংলিশ নিউজ পেপারের সংবাদ কাটিং দেখলাম। এখানে সাঈদীর বক্তব্যের একটি ভিডিও সংযোজন করা গেলে ভালো হতো। সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্তাপনের আর সুযোগ থাকতো না। তবে এ ধরনের কোনো বেফাস মন্তব্য করে থাকলে তা কিছুতেই সমর্থন যোগ্য নয়। আমার অনেক বন্ধু সাঈদীর তাফসীরের খুব্ই ক্ত। তাঁরা সাঈদীর ওয়াজ শুনেন। তাঁদের মন্তব্য, মাওলানা দেলওয়ার হোসেইন সাঈদী বক্তৃতাকালে অনেক সময় রেগে যান। এতে অনেকেই ভুল বুঝেন।

ছয়.

এফিডেভিটের মাধ্যমে নামের শেষে সাঈদী শব্দ সংযোজন, নামের আগে মাওলানা ও আল্লামা খেতাব ব্যবহার, নির্বাচনী নমিনেশনে সম্পদের প্রকৃত তথ্য না দেয়া, সিলেটী এবং বৃটেন ও আমেরিকা সম্পর্কে বেঁফাস মন্তব্য-ইত্যাদি কারণে তাঁর বিচার হতে পারে। তবে এজন্য তাঁর উপর রাজাকারী ও নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের অভিযোগ চাপিয়ে ফাঁসির রায় দেয়া কি সমীচিন হবে বলে আপনী মনে করেন?

বিষয়: বিবিধ

৩৭১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File