মরফিল্ড আই হসপিটাল : করোনার ভয়ে যেভাবে পালালো ডাক্তারা, নার্স ও রোগীরা
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১৫ মার্চ, ২০২০, ০৫:৪৯:২৯ সকাল
বেলাল রাশিদ চৌধুরী । বৃটিশ-বাংলাদেশী আইনজীবী। প্রাকটিস করেন পূর্ব লন্ডনের একটি সলিসিটর্স ফার্মে । শনিবার সকালে গিয়েছিলেন সেন্ট্রাল লন্ডনের মরফিল্ড আই হসপিটালে । আগে থেকেই তাঁর অ্যাপোয়েন্টমেন্ট ছিলো। হাসপাতালের প্রধান প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতে উদ্যত হতেই একগাদা প্রশ্নের মুখোমুখী হতে হলো তাঁকে । "আপনার কি কোনো সর্দি, কাশি কিংবা জ্বর আছে? উত্তরে তিনি বললেন, "কিছু কাশি আছে । তবে সেটা ভেতরে । বাহ্যিক কিছু নেই। কর্তব্যরত ব্যক্তি বললেন, ঠিক আছে রিসেপশনে বসে অপেক্ষা করুন ।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর হাসপাতালের বারো নাম্বার ক্লিনিকে (চক্ষু বিশেষজ্ঞের চেম্বার) তাঁর ডাক পড়লো। সোজা গিয়ে ঢুকলেন রুমে । চেয়ারে বসতেই একই প্রশ্নমালার মুখোমুখী । সর্দি, জ্বর, কাশি কতদিন যাবত? তাঁর উত্তর একটাই- বুকে সামান্য একটু আধটু আছে, তবে বাহ্যিক কোনো কাশি নেই।
মুহূর্তের মধ্যে সার্জন সাহেবের চেহারা পালটে গেলো । চোখ মুখ যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। চটজলটি একটি মাস্ক এনে হাতে তুলে দিয়ে বললেন তাড়াতাড়ি লাগিয়ে নিন । সাথে সাথে নিয়ে যাওয়া হলো একটি নির্জন রুমে । বলা হলো, আপনি এখন আইসোলেশনে । এখানে থাকুন আর ন্যাশনাল হেলথ বিভাগে ১১১ নাম্বারে ফোন করে আপনার অবস্থা অবহিত করুন । এই বলে ডাক্তার বাইর থেকে দরজা বন্ধ করে নির্জন একাকী রুমে রেখে বেরিয়ে গেলেন।
বেলাল রশীদ যতটুকু না ভয় পেলেন মনে হলো ডাক্তার তারচেয়ে ভয় পেলেন আরো বেশি। প্রায় আধঘণ্টা নির্জন রুমে একাকী বসে ১১১ নাম্বারে ডায়াল করতে থাকেন । রিং হয় । কিন্তু ফোন বিজি। ওপাশ থেকে কেউ ফোন ধরে না । অটো ম্যাসেজ আসে- আপনার ওয়েটিং টাইম এক ঘণ্টা। অর্থাৎ জরুরী ১১১ বিভাগে কথা বলতে হলে তাকে একঘণ্টা ফোন হোল্ড করে অপেক্ষায় থাকতে হবে । আধঘণ্টা চেষ্টার পর ধর্য্যহারা হয়ে পড়লেন তিনি । ফোন ছেড়ে দিয়ে নির্জন রুম থেকে বেরিয়ে পড়েন।
কিন্তু বাইরের দৃশ্য দেখে অবাক হলেন তিনি। দেখলেন, বারো নাম্বার ক্লিনিকের আশপাশ জনশুন্য। যে ডাক্তার তাকে আইসোলশনে পাঠিয়েছিলেন তিনি সেখানে নেই। নেই কোনো ডাক্তার, নার্স এমনকি একটি পিয়নও । রিসেপশন এরিয়াও একদম ফাঁকা । কেমন যেন থমথমে পরিবেশ । করোনাভাইরাস ভেবে পালিয়েছে সবই।
কী করবেন তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না । কার সাহায্য নেবেন, কী করবেন? এমন সময় দেখতে পেলেন দূর থেকে আতংকমিশ্রিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছেন এক শ্বেতাঙ্গ ভদ্রলোক । চোখে চোখ পড়তেই উচ্চস্বরে বললেন, "হ্যায়, অ্যার ইউ স্টিল দেয়ার?" (অহে, তুমি কি এখনো সেখানে দাড়িয়ে আছো?) তিনি বললেন, তাহলে কী করবো? সাদা ব্যক্তিটি দরাজ গলায় বললো, "লিভ হসপিটাল শর্টলি । গো হোম । (তাড়াতাড়ি হাসপাতাল ত্যাগ করে ঘরে চলে যাও। এরপর তিনি দ্রুতপায়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে ট্রেনে চড়ে ঘরে ফিরলেন।
এই হলো করোনাভাইরাসের আতংক। কী ভয়ংকর অবস্থা । ভাইরাস ধরা পড়ার আগেই হাসপাতালের রিসেপশন জনশুন্য। অথচ সেখানে সবসময়ই ৭/৮জন নার্স থাকেন । অপেক্ষায় থাকেন ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী।
তাই সাধারণ জ্বর, সর্দি কাশি হলেও এখন আর রক্ষা নেই। ডাক্তারকে জানালে আরো বড় বিপদ । ভাগে্য জুটবে বাধ্যতামুলক কোয়ারেন্টিন। চৌদ্দ দিনের বন্দীজীবন। একা নয়, ভাগ্য খারাফ হলে পরিবার পরিজনসহ।
তাই জ্বর সর্দি কাশিতে ভয় না পেয়ে ঘরেই থাকা উত্তম। প্রয়োজনে সেলফ আইসোলেশনে থাকুন । মনকে শক্ত রাখুন। ভয়ভীতি দূরে সরিয়ে দিন । বন্ধু-বান্ধবদের সাথে টেলিফোনে জমিয়ে কথা বলুন । মনকে সতেজ ও চাঙ্গা রাখুন। সকালে যত বেশি হাঁটেন । শরীর র্চচা করুন । প্রয়োজনে প্যারাসাসিটামল খান । অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন । আর সর্বোপরি আল্লাহর সাহায্য চাইতে থাকুন । বিপদ-আপদে তিনিই তো একমাত্র ভরসাস্থল ।
তাইসির মাহমুদ
লন্ডন, যুক্তরাজ্য।
শনিবার, ১৪ মার্চ ২০২০।
বিষয়: বিবিধ
৮১৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন