মর্নিং তাফসীর : সুরা বাকারা : আয়াত ২৪৩ দারওয়ারদান গ্রামের ১০ হাজার লাশের জেগে ওঠার বিস্ময়কর কাহিনী *******************************
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১৬ মার্চ, ২০১৯, ০২:০১:১৪ দুপুর
'দারওয়ারদান' । ইরাকের একটি নিভৃত পল্লীর নাম । সেখানে বাস করতেন প্রায় দশ হাজার মানুষ । একবার গ্রামে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলো এবং আস্তে আস্তে তা ছড়িয়ে পড়লো গ্রামজুড়ে। আক্রান্ত হতে থাকেন আবালবৃদ্ধ বনিতা। গ্রামজুড়ে দেখা দিলো চরম আতংক। মৃতু্যর বিভীষিকা। প্লেগ থেকে রক্ষা পেতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়লেন ।
একসময় প্লেগের ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে পালাতে লাগলো গ্রামবাসী। তারা গ্রাম থেকে বেরিয়ে অনেকদূরে হেঁটে দুটো পাহাড়ের মধ্যখানে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিলো । ভাবলো, আপাতত তারা নিরাপদ।
কিন্তু নাহ, বিপদ তাঁদের পিছু ছাড়লো না। সেখানে উপস্থিত হলেন দু'জন ফেরেশতা। দুই ফেরেশতা এমন এক বিকট আওয়াজ করলেন যে, আওয়াজের ভয়াবহতায় ঘটনাস্থলে হামাগুড়ি দিতে দিতে সকলেই মারা গেলেন। পার্শ্ববতী গ্রামের মানুষ ছুটে এসে দেখলো সেখানে শুধু লাশ আর লাশ। ১০ হাজার মানুষের লাশ। তারা কীভাবে এত লাশের দাফন-কাফন করবে ভেবে পাচ্ছিল না। উপায়ন্তর না দেখে লাশগুলো এক জায়গায় জড়ো করে রেখে চারদিকে তারা ওয়াল নির্মাণ করে দিলো। লাশগুলোর শরীর থেকে মাংস ঝরে পঁচে গলে গেলো । শুধু পড়ে থাকলো কংকালগুলো।
এরপর কেটে গেলো আরো বহু বছর । হঠাৎ একদিন ওই স্থানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আল্লাহর নবী হযরত হিজকিল (আঃ) । তিনি মানুষের হাড়গোড় দেখে অবাক হয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে কারণ চাইলেন । আল্লাহ তায়ালা বিস্তারিত কাহিনী তাঁকে জানিয়ে দিলেন। এবার আল্লাহ তায়ালার নির্দেশেই নবী হিজকিল (আঃ) প্রতিটি কংকালকে স্বস্বস্থানে একীভূত হতে নির্দেশ দিলেন । সাথে সাথেই হাড়গুলো নিজনিজ দেহে একীভূত হয়ে গেলো। এরপর তিনি প্রতিটি হাড়ে মাংস সংযোজিত হতে নির্দেশ দিলেন। তাও হয়ে গেলো। এখন দেখা গেলো সেখানে শুধু লাশ আর লাশ। হাজার হাজার মানুষের লাশ পড়ে আছে।
এরপর তিনি আল্লাহর নির্দেশে প্রত্যেক মানুষের রুহকে নিজ নিজ দেহে প্রবেশের নির্দেশ দিলেন । সাথে সাথে তাও হয়ে গেলো। রুহগুলো ভেতরে ঢুকতেই মৃত দেহগুলো জেগেওঠতে লাগলো। তৎক্ষনাত সবগুলো মৃতদেহ ওঠে দাঁড়ালো । জীবিত হওয়ার পর তারা একজন আরো একজনের দিকে তাকাচ্ছিলো। আর জীবন ফিরে পাওয়ার ফলে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করছিলো।
উপরোক্ত ঘটনাটি আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারা'র ১৪৩ নম্বর আয়তে বর্ণনা করেছেন। তিনি ওই আয়াতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে হাজার হাজার বছর আগে সংঘটিত একটি ঘটনা জানিয়ে দিলেন । আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
"আলাম তারা ইলাল লাজিনা খারাজু মিন দিয়ারিহিম, ওয়াহুম উলুফুন হাজারাল মাওউতি, ফাকালা লাহুমুল্লাহু মুতু, সুম্মা আহইয়াহুম । ইন্নাল্লাহা লাজু ফাদলিন আলান নাসি, ওয়ালা কিন্না আকসারান নাসি, লা ইয়াসকুরুন।
অর্থাৎ: (হে নবী) আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেননি, মৃতু্যর বিভীষিকা এড়ানোর জন্য যারা নিজেদের গৃহ হতে বের হয়েছিলো। অথচ তারা ছিল হাজার হাজার। তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, তোমরা মরে যাও। পুনরায় তিনি তাদেরকে জীবন দান করলেন। নিশ্চয় মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহশীল । কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেনা।
এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, ইসলামে জেহাদে যাওয়ার নির্দেশ আসার পর যারা মৃতু্যর ভয়ে যুদ্ধে যেতে পিছপা হতো তাদের উদ্দেশে । আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত দ্বারা তাদেরকে সেই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, জীবন-মৃতু্য আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করে রেখে দিয়েছেন । মৃতু্য থেকে নিজে বাঁচার চেষ্টা করে বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। যুদ্ধে গেলে মৃতু্য হয়ে যেতে পারে। আর না গেলে মৃতু্য আসবে না, তা ভাবার কোনো কারণ নেই।
এখানে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার । কোনো এলাকায় মহামারী দেখা দিলে ওই স্থান ত্যাগ করে অন্য জায়গায় পালিয়ে যেতে নেই । একবার হযরত ওমর (রাঃ) ক'জন সাহাবাকে সাথে নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন । 'সারাগ' নামক স্থানে পৌঁছার পর জানতে পারলেন সিরিয়ায় প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তাই তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন- প্লেগের খবর শুনে ফিরে আসবেন না সিরিয়ায় যাত্রা অব্যাহত রাখবেন। এসময় আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) তাদের সাথে মিলিত হলেন। তখন তিনি ওমর (রাঃ) কে বললেন, "আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন "যখন এমন কোনো স্থানে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে তোমরা অবস্থান করছো, তাহলে তোমরা মৃতু্যর ভয়ে ওই স্থান ছেড়ে পালিয়ে যেও না। তবে যদি তোমরা সেখান থেকে যেখানে যাবে ওখানে প্লেগ রোগের খবর পাও তাহলে সেখানে যেয়ো না । ওমর (রাঃ) এ কথা শুনে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করলেন এবং সিরিয়ার দিকে না গিয়ে মদীনায় ফিরে আসলেন। (আহমদ ১/১৯৪, ফতহুল বারী ১০/১৮৯ ও মুসলিম ৪/১৭৪০)।
এই আয়াত ও ঘটনার আরো একটি শিক্ষা হচ্ছে, মৃতু্যর পর মানুষের দেহ ও কংকাল পঁচে গলে যাওয়ার পরও আল্লাহ তায়ালা বিচারের দিন মানুষকে যে জীবিত করবেন এটি তার একটি দৃষ্টান্ত। সুত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে মা'রেফুল কুরআন)।
বিষয়: বিবিধ
৯৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন