শুধু জন্মদিনে নয়, মুত্যুদিনেও যেন ভালোবাসা শুভকামনা পাই

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ০৩ মার্চ, ২০১৯, ০৭:১১:১৭ সকাল

পরিবারে জন্মদিন পালনের রেওয়াজ নেই। বাংলাদেশে ছিলোনা, এখানেও নয়। কিন্তু ইদানিং নিজের অজান্তেই জন্মদিন পালন হয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে- ফেসবুক। জন্মদিনটি শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ফেসবুক বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয়- "আজ তাইসির মাহমুদের জন্মদিন, আপনারা তাকে শুভেচ্ছা বর্ষন করুন । তাই শুভেচ্ছার ঝড় শুরু হয়ে যায়।

বিগত জন্মদিনগুলোর ব্যাপ্তি শুধু ফেসবুকের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু এবারের জন্মদিন ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো, খাওয়া-দাওয়া, কার্ড বিনিময়, আড্ডা ও কবিতা উৎসর্গকরণ পর্যন্ত পৌছলো ।

পয়লা মার্চ রাত বারোটার পর থেকেই আসতে থাকে শুভেচ্ছা। সকাল হওয়ার আগেই শুভেচ্ছা ঝড়ে ইনবক্স যেন উপচে পড়তে থাকলো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শুভচ্ছো আসতে থাকে। যেখানেই বন্ধু-বান্ধব আছেন শুভেচ্ছা জানাতে থাকেন প্রাণখুলে।

সকালে লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সর্বাগ্রে নিউজটি ছড়িয়ে দেন ব্রিটবাংলার নির্বাহী সম্পাদক আহাদ চৌধুরী বাবু। এরপর আর থামায় কে? গ্রুপের মধ্যেই ঝড়ো হাওয়া বহে গেল দীর্ঘক্ষণ । এরই মধ্যে আমাকে উৎসর্গ করে একটি দীর্ঘ কবিতা রচনা করে ফেললেন কবি-সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান নির্ঝর। আহাদ চৌধুরী বাবু জন্মদিনের খবরটি শুধু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, টেলিফোন করেও শুভেচ্ছা জানালেন।

বার্মিংহ্যাম থেকে আমার আরো এক প্রিয়জন সাংবাদিক আতিকুর রহমান টেলিফোন করলেন। প্রেস ক্লাবের সম্মানিত সদস্য প্রিয় আশরাফুল ওয়াহিদ দুলাল তাঁর ও আমার যুগল ছবি দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন। বাংলাদেশ থেকে সচিত্র ফেসবুক স্ট্যাটাস দিলেন আমার প্রিয়জন শাহজালাল ইসলামিক ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা ফারসানা তাহমিন লিপি। লিখলেন অনেক সুন্দর কথা। কাতার থেকে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে শুভেচ্ছা জানলেন আমাদের বড়লেখারই এক কৃতীজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শরিফুল হক সাজু। আরো অনেকেই শুভেচ্ছা জানালেন,

জানাতে থাকলেন।

তবে দুপুর গড়াতেই যা ঘটলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ইস্ট লন্ডন মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে বেরুতেই জুবায়ের ভাইয়ের (লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব সেক্রেটারী মুহাম্মদ জুবায়ের) সাথে দেখা। বললেন, আপনাকে বারবার ফোন দিয়ে পাচ্ছিনা। জানতে চাইলাম জরুরী কিছু? বললেন, চলুন বারাকা রেস্টুরেন্টে যাই। ওখানে গিয়ে বলবো।

এরই মধ্যে যোগ দিলেন প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য কবি কাইয়ূম আব্দুল্লাহ, ইউরোবাংলার সম্পাদক আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল ও নিউহ্যাম কাউন্সিলের ডেপুটি স্পীকার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ। আমি পিছু নিলাম তাঁদের। তাঁরা এবার রেস্টুরেন্টে না ঢোকে পার্শ্ববর্তী টেসকো সুপার স্টোরে ঢুকলেন। জুবায়ের ভাই টেসকো থেকে ফুল কিনলেন। এরপর ফিরে এলাম বারাকায়। পথিমধ্যে আমাদের সঙ্গ নিলেন এনটিভি ইউরোপের ডাইরেক্টর মোস্তফা সারওয়ার বাবু। একটি টেবিল নিয়ে গোল হয়ে বসলাম।

কিছুক্ষনের মধ্যেই এসে হাজির হলেন কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশা এবং জনমতের সহকারী সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন আহমদও। নাহাস ভাইয়ের হাতে জন্মদিনের একটি কার্ড। এবার সর্বশেষ এসে যোগ দিলেন সোসাইটি অব বাংলাদেশী সলিসিটর্স এর সাবেক প্রেসিডেন্ট সলিসিটর মোহাম্মদ আবুল কালাম। শুরু হলো আমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পালা। আমি সম্পুর্ণ অপ্রস্তুত। কারণ এই পরিস্থিতির মুখোমুখী আগে কখনো হইনি। জীবনে এই প্রথম জন্মদিন পালন। জুবায়ের ভাই যেন ধরে বেঁধে এনে বসিয়ে জন্মদিন পালন শুরু করলেন। জন্মদিনের কার্ডে টুকরো মন্তব্যসহ স্বাক্ষর দিলেন সকলেই। ব্যারিস্টার নাজির ভাইর সৌজন্যে খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা চললো দীর্ঘক্ষন। এরপর একে একে সকলকে বিদায় নিতে হলো নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশে।

জন্মদিনের শুভেচ্ছা একটি বিষয় নতুন করে ভাবতে সাহায্য করলো। তা হলো- শুভেচ্ছা, শুভকামনা জানানোর মধ্যে ক্ষতির কিছু নেই। বরং একজন মানুষকে শুভকামনা জানালে, তাঁর ভালো কাজের প্রসংশা করলে তিনি প্রফুল্ল হন। একটি দিনের জন্য হলেও ফুরফুরে মেজাজে তিনি কাজ করতে পারেন। একটি ভালো কথা মানুষের মন ভালো করে দেয়। একজন চিকিৎসক যেভাবে শুধু অভয় দিয়ে ভালো কথাবার্তা বলে একজন রোগীকে অনেকটা সুস্থ করে তুলতে পারেন, তেমনি ভালো কথা মানুষের মনকে ভালো করে দিতে পারে ।

তাই বলি। আমরা একে অপরের উদ্দেশে ভালো কথা বলার চর্চা করি। ভালো কাজের প্রশংসা করি। কারো অলক্ষে অথবা সম্মুখে মন্দ বলা থেকে যেন বিরত থাকি। কারণ কটুকথা বা মন্দ বলা মানুষের মনকে দুমড়ে-মুছড়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে ফেলে। জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আর যদি ভালো বলতে না পারি তাহলে চুপ থাকলেও হয়।

লেখা আর দীর্ঘ করবোনা। শেষ করবো এখানেই। যারাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সকলের প্রতি হৃদয় উজাড় করা শুভেচ্ছা, শুভকামনা, ভালোবাসা। নিজের জন্য ভালো যা কিছু চাই, প্রিয়জনের জন্যও যেন তা চাইতে পারি ।

যে প্রিয়জন আজ জন্মদিনে শুভচ্ছো জানালেন তারা যদি আমার মৃতু্যদিনেও পাশে থাকেন। শুভকামনা জানান। মৃতু্য সংবাদ শুনলেই যদি বলে ওঠেন ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন। জানাজা ও দাফন কখন-কোথায় জানতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। শেষবারের মতো একটিবারের জন্য দেখতে যদি মন আনচান করে। জীবনের হাজারো ব্যস্ততা ফেলে যদি জানাজা দাফনে আসতে পারেন । রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করেন। তাহলেই এ জন্মদিন পালন স্বার্থক হবে। আমরা প্রত্যেকেই যেন একে অপরকে এমন করে ভালোবাসতে পারি। বিশ্বজাহানের মালিক যেনো আমাদেরকে সেই সুযোগ দেন।

তাইসির মাহমুদ

লন্ডন, যুক্তরাজ্য

রোববার, ৩ মার্চ

ভোর ১২ টা ৩০ মিনিট

বিষয়: বিবিধ

৮৮১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386563
১২ মার্চ ২০১৯ সকাল ১১:১০
মোস্তফা সোহলে লিখেছেন : মুসলিমদের জন্য যে কোন দিবস পালন করা হারাম।
কিন্তু আজকাল ইচ্ছা না থাকা সত্তেও অনেকে অনেক দিবস পালন করে ফেলেন।
এ জন্য আমি ফেসবুকে জন্ম তারিখ হাইড করে রাখছি।
১৬ মার্চ ২০১৯ রাত ০১:৪৩
318357
তাইছির মাহমুদ লিখেছেন : Good Idea.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File