মনির্ং তাফসীর : সুরা ইউসুফ : দ্বিতীয়পর্ব চলমান মানুষ স্বপ্ন কেন দেখে, স্বপ্ন কি সত্য হয়?
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ০৭ নভেম্বর, ২০১৮, ০২:৪১:২৭ দুপুর
গতকালের স্ট্যাটাসে অনেকেই লাইক, শেয়ার দিয়েছেন। কমেন্ট করেছেন। নিয়মিত লিখতে অনুরোধ করেছেন। উৎসাহ দিয়েছেন। সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনারা 'মনির্ং তাফসীর' এর সাথে আছেন দেখে উৎসাহ পেলাম।
গত পর্বে বলেছিলাম আজকের পর্বে ইউসুফ নবীর স্বপ্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন এগারোটি নক্ষত্র এবং চাঁদ ও সুর্য তাঁকে সেজদা করছে । স্বপ্নটির ব্যাখা করেছিলেন তাঁর পিতা ইয়াকুব (আঃ) । তিনি নবী ছিলেন বলে পুত্রের স্বপ্নের প্রকৃত ব্যাখ্যা দিতে পেরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এগারোটি তারকা দেখার অর্থ হচ্ছে তোমার এগারো ভাই। আর চাঁদ-সুর্য হচ্ছে তোমার পিতা-মাতা।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন। তিনি তোমাকে নবী বানাবেন। তোমাকে স্বপ্নের প্রকৃত ব্যাখ্যা করার যোগ্যতা দান করবেন । তবে তুমি কখনো এই স্বপ্ন তোমার ভাইদের কাছে বলোনা । নতুবা তোমার কাছে ছোট হয়ে যাবে। তোমাকে হিংসা করবে। এতে তোমার ক্ষতি হতে পারে।
কিন্তু ইউসুফ (আঃ) পিতার উপদেশ রক্ষা করতে পারেননি।। তিনি তাঁর ভাইদের কাছে স্বপ্নের কথা বলে দিয়েছিলেন। এরপরই ভাইয়েরা তাঁকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র আঁটতে থাকে। ঘটে যায় লংকাকান্ড। কী ঘটেছিলো তাঁর জীবনে- বিষয়টি পরবর্তী আলোচনায় আসবে। তবে যেহেতু স্বপ্ন নিয়ে কথা ওঠেছে, তাই ইসলামের দৃষ্টিতে স্বপ্ন কী- তা নিয়ে কিছু আলোচনা প্রয়োজন।
প্রতিটি মানুষই ঘুমের ঘরে কমবেশি স্বপ্ন দেখে। এটা একেবারেই স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে আমরা খুব ভালো স্বপ্ন দেখি। যখন ভালো স্বপ্ন দেখি তখন আমাদের মন প্রাণ ভরে ওঠে। আক্ষেপ হয়, হায় কেন ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আরো কিছুক্ষণ কেন স্বপ্নে থাকলাম না।
কিছু কিছু স্বপ্ন আছে বড়ই বিরক্তিকর। আবার কিছু স্বপ্ন বড়ই ভয়ংকর । স্বপ্ন দেখে ভয়ে ঘুম থেকে ওঠে বলতে থাকি হায় হায়, একি দেখলাম। এসব ভালো মন্দ স্বপ্ন দেখার কারণ কী? এসবের ব্যাখ্যা কী? এ নিয়ে হাদীসে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে।
মানুষ তিন কারণে স্বপ্ন দেখে। এক. সারাদিন যে বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তা করে তা রাতে ঘুমের ঘরে স্বপ্নে দেখে। দুই. শয়তান ভয়ংকর ও কিরক্তিকর কিছু স্বপ্ন দেখিয়ে থাকে। ৩. ভালো স্বপ্ন, যেগুলো দেখার পর আক্ষেপ হয় কেন আরো কিছুক্ষন ঘুমে থাকলামনা- তা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে দেখানো হয়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ গিফট। (বোখারী)
নবী ও রাসুল ছাড়া স্বপ্নের শতভাগ ব্যাখা কেউ করে দিতে পারেন না । বলে দিতে পারবেনা এটাই সত্য। এটাই ঘটবে। কারণ কোনো স্বপ্নই সরাসরি দেখানো হয়না। আজকের সমাজে কিছু কিছু ইসলামি চিন্তাবিদ স্বপ্নের ব্যাখা করে থাকেন। এগুলো নিজের পড়াশোনা এবং জ্ঞানের আলোকেই করে থাকেন । তবে কেউ বলেননা যে, তাঁর ব্যাখ্যাটি সতভাগ সঠিক। এই নিশ্চয়তা কেউই দেননা, দিতে পারেন না। সুতরাং, স্বপের ব্যাখার উপর শতভাগ ভরসা করার কিছু নেই।
স্বপ্নের যথার্থ ব্যাখা করতে পারতেন একজন বিশিষ্ট আলেম। তিনি হচ্ছে আল্লামা ইবনে সিরিন (রাঃ) । রাসুল (সাঃ) এর ইন্তকাল পরবর্তী সময়ে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন প্রশিদ্ধ স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারক। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সেই জ্ঞান দিয়েছিলেন।
হাদীসে বলা হয়েছে, কেউ যদি ভালো স্বপ্ন দেখে তাহলে সেটা অন্যের কাছে বলতে পারে । কিন্তু খারাফ স্বপ্ন দেখলে তা কাউকে বলা উচিত নয়। কারণ স্বপ্ন যতক্ষন পর্যন্ত ব্যাখ্যা করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্তই সেটি পাখির পায়ের সাথে বাঁধা থাকে। অর্থাৎ আকাশে উড়োউড়ি করতে থাকে। কিন্তু যখনই ব্যাখ্যা করা হয়ে যায়, তখনই বাস্তবে রূপ নেয়। (আবু দাউদ ৫/২৮৩)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, মানুষ ঘুমের ঘরে যদি কোনো খারাফ স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠে তাহলে শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে যেনো আশ্রয় চায় এবং শয়ন অবস্থায় পাশ পরিবর্তন করে বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করে। তাহলে এই স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা। (মুসলিম ৪/১৭৭২)
ইউসুফ নবীর পিতা তাঁকে স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে নিষেধ করার কারণ হিসেবে বলেছিলেন যে, তারা হিংসার বশবর্তী হয়ে ক্ষতি করতে পারে। আর বাস্তবেও তাই হয়েছিলো। তাঁকে পরবর্তীতে এগারো ভাই মিলে হত্যার ষড়যন্ত্র আঁটে।
এখান থেকে এই শিক্ষা গ্রহন করা যায়, যে কেনো ভালো কাজ বাস্তবায়ন হওয়ার পূর্বে অন্যের কাছে প্রকাশ করা উচিত নয়। এতে করে মানুষের মনে হিংসার উদ্রেক হতে পারে। কারণ রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "প্রয়োজনসমুহ পুর্ণ করার ক্ষেত্রে সেগুলো গোপন করার মাধ্যমে সাহায্য নাও । কেননা যে ব্যক্তি কোনো নিয়ামত লাভ করে তার প্রতি অপরে হিংসা হয়ে থাকে। (তাবারী ২০/৯৪)।
যেমন কেউ একজন ভিসার জন্য আবেদন করেছে। ইন্টারভিউর জন্য ইন্টারভিউ সেন্টারে যাবে। ভিসা পেতে পারে, নাও পেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়ার আগে বিষয়টি কাউকে বলা উচিত নয়। এমনকি বন্ধু-স্বজনকেও না । কারণ এই প্রাপ্তির চেষ্টা মানুষের মনে হিংসার জন্ম দিতে পারে। তবে মা-বাবাকে বললে তাতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কারণ তাঁরা কখনো সন্তানের অমঙ্গল চাননা। বরং সন্তানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সর্বদা দোয়া করে থাকেন।
আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে থাকছে ইস্তেখারা কী? ইস্তেখারার নামে ব্যবসা। সঙ্গে থাকুন। সকলের প্রতি অনেক অনেক শুভকামনা।
তাইসির মাহমুদ
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
৭ নভেম্বর ২০১৮
সকাল ৮টা ৩০ মিনিট
বিষয়: বিবিধ
৯৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন