মনির্ং তাফসীর : সুরা ইউসুফ : প্রথমপর্ব চলমান নাজিল হওয়ার আগে কুরআন কোন ভাষায় সংরক্ষিত ছিলো?

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ০৩ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:০৪:৫১ বিকাল

সুরা ইউসুফের প্রথম তিনটি আয়াত বা বাক্যের সংক্ষিপ্ত আলোচনার আজ ইতি টানবো । এই সুরার দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, "ইন্না আনজালনাহু কুরআনান আরাবিয়য়ান লায়াল্লাকুম তা'য়ক্বিলুন।

নিঃসন্দেহে আমরা একে (এই কুরআনকে) আরবী কুরআন হিসেবে নাজিল করেছি যেনো তোমরা তা বুঝতে পারো।

আল্লাহ তায়ালা বললেন, মানুষের বুঝার সুবিধার্থে কুরআন আরবীতে নাজিল করেছেন। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, আমরা যারা বাংলা ভাষাভাষী তাদের জন্য কুরআন বুঝা তো সহজ নয় হয়নি। কারণ আমাদের ভাষা আরবী নয়। কিংবা চাইনিজ, জাপানিজ, আমেরিকানদের জন্যও তো কুরআন বুঝা সহজ নয়। কারণ তাদের ভাষাও আরবী নয়। তাহলে আল্লাহ তায়ালা কেন বললেন, কুরআন আরবীতে নাজিল করেছেন, যাতে মানুষ সহজে বুঝতে পারে।

এর অর্থ হচ্ছে, কুরআন নাজিল করার জন্য আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (সাঃ) কে তাঁর দূত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। যার ভাষা ছিলো আরবী। আর ওই সময় যাদের জন্য কুরআন নাজিল হয়েছিলো সেই আরব অঞ্চলের মানুষের ভাষাও ছিলো আরবী । তাই আল্লাহ তায়ালা কুরআনকে আরবীতে নাজিল করেন, যাতে আরববাসীর জন্য তা বুঝতে সহায়ক হয়। তখন যদি কুরআনকে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় নাজিল হতো তাহলে মক্কার লোকজন বলতো এটা তো অন্য ভাষায় নাজিল হয়েছে, আমরা তা বুঝবো কীভাবে। তারা তা না মানতে নানা অজুহাত দাড় করতো।

এখন এখানে অরো একটা প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা বললেন আমি কুরআনকে আরবী ভাষায় নাজিল করেছি তোমাদের বুঝার সুবিধার্থে, তাহলে কুরআন কি অন্য কোনো ভাষায় লওয়ে মাহফুজে সংরক্ষিত ছিলো?

কুরআন যদিও এক আয়াত, দুই আয়াত করে দীর্ঘ তেইশ বছরে নাজিল হয়েছে কিন্তু এই কুরআনকে আল্লাহ তায়ালা হাজার-হাজার বছর আগেই একসঙ্গে সৃষ্টি করে লওহে মাহফুজে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন । হাদীস অনুসারে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টির পরেই আল্লাহ তায়ালা ত্রিশ পারা কুরআন সৃষ্টি করেন। সেখান থেকে কোনো এক শবে ক্বদরের রাতে পুর্ণ কুরআন প্রথম জান্নাতে রাখেন। এরপর সেখান থেকে প্রয়োজন অনুসারে এক ও একাধিক বাক্য করে দীর্ঘ তেইশ বছরে মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর নাজিল করেন।

তাহলে লওহে মাহফুজে কুরআন কি আরবী ভাষায় সংরক্ষিত ছিলো? অর্থাৎ সৃষ্টির সময় কি কুরআন আরবীতে সৃষ্টি করা হয়েছিলো? আসলে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না । হতে পারে শুরুতেই আল্লাহ তায়ালা কুরআনকে আরবী ভাষায় সৃজন করেছিলেন । কারণ আল্লাহ তায়ালা তো জানতেন তিনি তা তাঁর আরবী ভাষাভাষী নবীর কাছে কুরআন পাঠাবেন।

কিন্তু যেহেতু আল্লাহ তায়ালা বলছেন, আমি কুরআন আরবী ভাষায় নাজিল করেছি তোমাদের বুঝার সুবিধার্থে- তাহলে বুঝা যায়, কুরআন অন্য কোনো ভাষায় ছিলো। আর আরবের মানুষের ভাষা যেহেতু আরবী ছিলো তাই পরবর্তীতে আরবীতে অবতীর্ণ করেন। তাহলে অন্য ভাষা বলতে কোন ভাষায় ছিলো?

তাও আমরা জানিনা, আল্লাহ তায়ালা কুরআন কোন ভাষায় সৃজন করেছিলেন? তবে একটি ধারণা অমুলক হবেনা । যেমন, কুরআন কোনো ভাষায়ই ছিলো না। আল্লাহ তায়ালার কাছে ত্রিশপারা কুরআনের জ্ঞান ছিলো। সেই জ্ঞানকেই আরবী ভাষায় নাজিল করেছেন । বিষয়টি একটি উদারহন দিয়ে বুঝালে বুঝতে সহজ হতে পারে । যেমন : আমি রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছি। এক গ্লাস পানি পান করতে চাই। তাহলে রেস্টুরেন্টের ওয়েটার যদি বাংলা ভাষাভাষী হন তাহলে তাকে বলবো, "আমাকে এক গ্লাস পানি দিন"। যদি ওই ওয়েটার ইংলিশ ভাষাভাষী হন তাহলে বলবো, "ক্যান ইউ গিভ মি অ্যা গ্লাস অব ওয়াটার"।

তাহলে এখানে মূল জ্ঞান বা নলেজ হচ্ছে- এক গ্লাস পানি চাওয়া। ওয়েটার বাংলাভাষী হওয়াতে তাকে আমরা বাংলায় বলছি, ইংলিশ হওয়ার কারণে ইংরেজিতে বলছি। উর্দূভাষী হলে উর্দূতেই বলতাম, কিংবা আরবী ভাষী হলে তাকে আরবীতে বলতাম।

তাহলে বলা যেতে পারে, কুরআন শরীফ জ্ঞান হিসেবে আল্লাহ তায়ালার কাছে সংরক্ষিত ছিলো। নবীর (সাঃ) ভাষা যেহেতু আরবী তাই তিনি আরবীতে নাজিল করেছেন। আশাকরি বিষয়টি বুঝা সহজ হয়েছে। তবে আল্লাহ তায়ালাই এসব ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো জানেন। (চলমান)

বিষয়: বিবিধ

৬৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File