মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি : খরচ যোগাতে ১২৫ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ২১ জুন, ২০১৮, ০৯:১৪:২৯ রাত

লন্ডন, ২১ জুন ২০১৮: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতার পাশাপাশি সবচাইতে বেশি প্রয়োজন মিয়ানমারে মানুষ হত্যার নির্দেশদাতাদের বিচারের জন্যে ক্যাম্পেইন করা ।

গত ১৯ জুন মঙ্গলবার বিকেলে লন্ডন মুসলিম সেন্টারের গ্রাউন্ড ফ্লোরে নবগঠিত সংগঠন ‘জাস্টিস ফর রোহিঙ্গা মাইনরিটি’র উদ্যোগে আইনি লড়াইয়ের লক্ষ্যে আয়োজিত ফান্ডরেইজিং সমাবেশে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন বিশেষজ্ঞ বক্তারা । অনুষ্ঠানে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল ডক্টর মুহাম্মদ আবদুল বারীর লেখা গ্রন্থ "দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইস" এর আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচক করা হয়।মঙ্গলবার বিকেলে লন্ডন মুসলিম সেন্টারে এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে মাত্র আধঘণ্টা সময়ের মধ্যে ইমাম ও টিভি উপস্থাপক আজমাল মাসরুর এই লিগ্যাল ক্যাম্পেইন চ্যারিটির জন্য প্রায় ১ শ ৬ হাজার পাউন্ড সাহায্যের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন। জানা গেছে, ইতোপূর্বে আরো একটি ফান্ডরেইজিং সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই ফান্ডরেইজিং সমাবেশের মাধ্যমে ১২৫ হাজার পাউন্ডের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব বৃটেন এর শুরা সদস্য রাগআদ আলটিকরিতির উপস্থাপনায় ‘ইটস নাও টাইম ফর জাস্টিস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বেথনাল গ্রীন এন্ড বো আসনের এমপি রুশনারা আলী, এমসিবির সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী এমবিই, ম্যাককিউ এন্ড পার্টনার্স ল' ফার্মের পার্টনার ম্যাথিউ জুরি, কুইমেরী ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল স্টেইট ক্রাইম বিভাগের গবেষক ড. থমাস ম্যাকমানাস, মডার্ণ রোহিঙ্গা ল্যাগুয়েজ রাইটিং সিস্টেম এর প্রবর্তক ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ সিদ্দিক বাসু, চার্চ অব ইংল্যান্ডের পাদ্রী ও ইনাইটেড ন্যাশনের এন্টি জেনোসাইড কনফ্লিক্ট রেজুলেশনের ক্যাম্পেইনার বনি ইভানস-হিলস ও ইস্ট লন্ডন মস্ক ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের সিইও নজমুল হোসাইন।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ বক্তারা বলেন, যদিও কাজটি সহজ নয়-তারপরও এই কঠিন কাজেই সকলকে সক্রিয় হতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে। তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করতে হবে। জাস্টিস ফর রোহিঙ্গা মাইনরিটি সংক্ষেপে জেএফআরএম-এর লিগ্যাল এডভাজার তাঁর বক্তব্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।

ডক্টর মুহাম্মদ আবদুল বারী এমবিই বলেন, তাঁর লেখা গ্রন্থ বিক্রির সমুদয় অর্থ রোহিঙ্গা জাস্টিস চ্যারিটিতে প্রদান করা হবে। তিনি আরো বলেন, এই গ্রন্থের মাধ্যমে রোহিঙ্গা কমিউনিটির আলোকিত অধ্যায়টি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার পাশপাশি কীভাবে তাদেরকে নিঃশেষ করে দেয়া হচ্ছে তা-ই আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন তিনি।

রুশনারা আলী এমপি বলেন, প্রথম থেকেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেশ সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছেন তিনি । তাঁর উদ্যোগে ১০১ জন বৃটিশ এমপি ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে

স্বাক্ষর করেছেন।

ইন্টারন্যাশনাল স্টেইট ক্রাইম বিষয়ে কুইনম্যারী ইউনিভাসিটির রিসার্চ ফেলো ডক্টর থমাস তাঁর বক্তব্যে বলেন, মিডিয়া থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে মিয়ানমারের ঘটনা স্থলে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। তাহলে খুন, ধর্ষণ এবং আগুনে পুড়িয়ে হত্যাসহ সবকিছুর সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যাণ পাওয়া যাবে এবং নেয়া যাবে যথার্থ আইনী ব্যবস্থা।

উল্লেখ্য, ক্যাম্পেইন সংস্থা জাস্টিস ফর রোহিঙ্গা মাইনোরিটি সুত্রে জানা গেছে, মিয়ানমানের সামরিক জান্তাসহ রোহিঙ্গা হত্যায় জড়িত সকলকে বিচারের মুখোমুখী দাঁড় করতে ইতোমধ্যে আইনী লড়াই শুরু হয়ে গেছে। প্রথমে এটিকে একটি গণহত্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হবে। এ লক্ষ্যে তথ্য, উপাত্তসহ যাবতীয় প্রমানাদী সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ইন্টারন্যাশাল কোর্ট অব জাস্টিসে পূর্ণ মামলা দাখিল করা হবে। এই মামলা নিষপত্তি হতে বছরের পর বছর সময় লাগবে। মামলা পরিচালনায় প্রতি বছর ব্যয় হবে কমপক্ষে ২শ হাজার পাউন্ড । নিয়মিত ফান্ডরেইজিং ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মামলার খরচ যোগান দেয়া হবে। বিচারে রোহিঙ্গা হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িতদের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের যেকোনো দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারিসহ বিভিন্ন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মামলা পরিচালনা করছে বিখ্যাত ম্যাককিউ এন্ড পার্টনার ল'ফার্ম।

বিষয়: বিবিধ

৮০৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385570
২২ জুন ২০১৮ দুপুর ০৩:০৪
হতভাগা লিখেছেন : রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মাদার অব হিউম্যানিটি খেতাব পেয়েছেন হাসুবু । যার ফলে এখন রোহিঙ্গাদের না ফেরত পাঠিয়ে বরং নোয়াখালীর দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য ও টাকা পাঠাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ। এই লাভের জন্যই রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে।

এমন কিছু করা কি উচিত হবে যেখানে খেতাব ও টাকা দুটোই প্রশ্নের সন্মুখীন হয় ?
385579
২৩ জুন ২০১৮ রাত ০৯:৩১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাই।
মাশাআল্লাহ মহৎ উদ্যোগ। ভাল লাগলো লিখাটি। জাযাকাল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File