মর্নিং তাফসীর (পর্ব-এগারো) **********************

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৫:০৬:৪৩ বিকাল

একদিন রাসুল (সাঃ) এর ক'জন সঙ্গী সেখানে অনুপস্থিত অপর এক সঙ্গীর সমালোচনা করছিলেন । রাসুল (সাঃ) তাঁদের কথাগুলো শুনে খুবই মনকষ্ট পেলেন। কিন্তু কিছু বললেন না। তিনি সঙ্গীদেরকে নিয়ে উটে চড়ে কোনো এক রাস্তা ধরে যাত্রা করছিলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার পাশে একটি মৃত জন্তু (সম্ভবত গাধা বা উট) দেখতে পেলেন। যে জন্তুটি মরে পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আশপাশের বাতাস দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে। চারদিকে মাছি ভ্যান ভ্যান করছে। রাসুল (সাঃ) সেখানে থামলেন। এবার ওই সঙ্গীদের বললেন, তোমরা উট থেকে নেমে ওই পঁচা গলা জন্তুর মাংস ভক্ষন করো।

রাসুল (সাঃ) এর এমন কথা শুনে সঙ্গীরা অবাক হয়ে গেলেন। হায় হায়! আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কীভাবে আমাদেরকে এমন কথা বলতে পারলেন? তাঁরা কারণ জানতে চাইলেন। বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ), এমন কঠিন কথা কেন আমাদেরকে বললেন। আমরা কীভাবে এই পঁচা-গলা জন্তুর মাংস খাবো। এটা তো কিছুতেই সম্ভব নয়। জবাবে রাসুল (সাঃ) বললেন, খানিক্ষণ আগে তোমরা তোমাদের অপর সঙ্গী সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছো তা ওই পঁচা-গলা জন্তুর মাংস খাওয়ার চেয়েও আরো জঘন্য কাজ ।

পবিত্র কুরআনে আরো কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলছেন, "তুমি কি তোমার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে। নাহ! অবশ্যই না । কারো অনুপস্থিতিতে তার সমালোচনা করা মৃত ভাইরে মাংস খাওয়ার সমতুল্য।

আমাদের মধ্যে যখন দুই বন্ধু, সহকর্মী, সহপাঠী একসঙ্গে বসেন তখন আলোচনার বিষয়বস্তুতে কী থাকে? থাকে নানা বিষয় । তবে একটি আলোচনা আমরা নির্বিঘ্নে করি, সেটি হচ্ছে সেখানে অনুপস্থিত তৃতীয় ব্যক্তির সমালোচনা । এটা একেবারেই স্বাভাবিক একটি চর্চা । যখনই তৃতীয় ব্যক্তি হন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, তখনই আলোচনা জমে ওঠে । ঘণ্টার পর ঘণ্টা তা স্থায়ী হয়।

বিশেষ করে কোনো নির্বাচনের বিষয় হলেতো আর কথাই নেই। প্রতিপক্ষকে কীভাবে ঘায়েল করা যায়। তাঁর দোষত্রুটিগুলো কীভাবে বেশি করে জনসমক্ষে প্রচার করা যায়, সেটা একটি বড় কাজ হয়ে দাঁড়ায়। নির্বাচনে প্রতিপক্ষ বিজয়ী হলে সে কাজটি আরো বেড়ে যায়। তাঁকে ঘায়েল করতে দিবারাত্রি নানা ফন্দি-ফিকির করতে হয়। হিংসা বিদ্বেষ বেড়ে যায়। বিষয়টি আমরা বুঝতেই পারিনা। অনায়াসেই করে যাই।

অথচ একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝতে পারবো, এই পৃথিবীতে যত হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি হয় এর সিংহভাগের মুল উৎসই হচ্ছে পরনিন্দা, পরচর্চা । মানুষ মানুষ সম্পর্কে নিন্দাচর্চা বা সমালোচনা বন্ধ করে দিলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতো।

আজ আমরা পবিত্র কুরআনের সুরা 'হুমাজা'র সংক্ষিপ্ত তাফসীর করবো। এই সুরায় তিনটি বড় পাপ কাজ ও এর পরকালীন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। প্রথম আয়াতে বলা হচ্ছে- দূর্ভোগ তাদের জন্য যারা সম্মুখে ও পেছনে মানুষের নিন্দা করে বেড়ায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে বলা হচ্ছে, যে শুধু সম্পদের পেছনে দৌঁড়াতে থাকে। মাল জমা করতে থাকে । কাড়ি-কাড়ি টাকা গুণে গুণে জমা করে। আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেনা। আর মনে করে, এই অর্থ প্রাচুর্য তাঁকে সবধরনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবে।

কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলেন, নাহ এই সম্পদ তাকে রক্ষা করতে পারবে না। সে 'হুতামা' জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। হুতামা হচ্ছে এমন একটি প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ড, যার আগুন মানুষের হৃদয়কে গ্রাস করে ছারখার করে দেবে ।

প্রশ্ন জাগতে পারে, আগুন তো আগুনই। আগুন সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্মিভূত করে ফেলে। তাহলে এখানে 'হুতামা'র আগুন মানুষের হৃদয় গ্রাস করবে এমন কথা বলা হলো কেন?

মুফাসিসরগন এর জবাবে বলেন, দুনিয়ার আগুন আমাদের গায়ে লাগার সাথে সাথে আমরা মারা যাই। আমাদের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছেনা। কিন্তু পরকালে যখন মানুষের মৃতু্য নাই, তাই জাহান্নামের আগুন মানুষের হৃদয় পর্যন্ত পৌছবে, অন্তর-আত্মা সব পুড়ে ছারখার করে দেবে।

তাহলে চলুন সুরা 'হুমাজা'র বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ দেখে নিই।

বিসমিল্লাহ হির-রাহমানির রাহিম। পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ তায়ালার নামে (শুরু করছি)।

এক). ওয়াইলুল্লি কুল্লি হুমাজাতিল লুমাজাহ।

দুর্ভোগ রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য, যারা মানুষের পেছনে ও সামনে নিন্দা করে।

দুই) আল্লাজি জামায়া মালাউ ওয়া আদ্দাদাহ।

যে (কাড়ি কাড়ি) অর্থ জমা করে এবং তা গুণে গুণে রাখে।

তিন). ইয়াহসাবু আন্না মা-লাহু আখলাদা।

সে মনে করে (তার এই) অর্থ তাকে (এই দুনিয়ায়) স্থায়ী করে রাখবে।

চার). কাল্লা লাইউম বাজান্না ফিল হুতামাহ।

বরং নির্ঘাত, অল্পদিনের মধ্যেই সে ভুস্মিভুতকারী আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।

পাঁচ). ওমা আদরাকা মাল হুতামা।

তুমি কি জানো, ভুস্মিভুতকারী আগুন কেমন হবে?

ছয়). না-রুল্লাহিল মোক্বাদাহ।

(এ হচ্ছে সম্পদলোভীদের জন্যে) আল্লাহ তায়ালার প্রজ্জ্বলিত এক অগ্নিকুণ্ড ।

সাত). আল্লাতি তাত্তালিউ আলাল আফইদাহ।

যার দহন বা পুড়ানো এতো মারাত্মক যে, মানুষের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।

আট). ইন্নাহা আলাইহিম মুহসাদাহ।

(অগ্নিকুণ্ডের গর্ত বন্ধ করে) তাদের উপর ঢাকনা দিয়ে রাখা হবে।

নয়). ফি আমাদিম মুমাদ্দাদাহ।

লম্বা লম্বা খুঁটির সাথে (তাদের ঘাড়সমুহ শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হবে, যাতে তারা একদম নড়াচড়া করতে না পারে।)।

তাইসির মাহমুদ

লন্ডন, যুক্তরাজ্য

শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিষয়: বিবিধ

৮৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File