একজন মাহবুব আহসান চৌধুরী যেকারণে আজ তাঁকে স্মরি

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৮:০৭:৪৬ সকাল

২০০৩ সালের মাঝামাঝি সময়ের কথা । বন্ধু-বান্ধব সব বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। তাই আমিও ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, কীভাবে বাইরে পাড়ি দেওয়া যায় । তবে বাইরে গেলে লন্ডনেই যাবো-এমন একটা চিন্তা আগে থেকেই ছিলো । যেই ভাবা, সেই কাজ। ভিজিট ভিসার জন্য হোমওয়ার্ক শুরু করে দিলাম । কাগজপত্র প্রস্তুত করতে লাগলাম । প্রায় ছয় মাস সময়ে মোটামুটি একটি প্রস্তুতি শেষ হয়ে এলো।

ভিসার জন্য ঢাকা হাইকমিশনে যাবো। তো কেউ একজন (নামটি ভুলে গেছি দুঃখিত) বললেন, কাগজপত্রগুলো একজন ইমিগ্রেশন এডভাইজারকে দেখিয়ে নিন, ভালো হবে ।

তিনি আমাকে একজন ইমিগ্রেশন এডভাইজারের নামও বললেন। বাসার টেলিফোন নাম্বারও যোগাড় করে দিলেন। আমি তাঁকে ফোন দিলাম। বললাম, আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাই, ইমিগ্রেশন বিষয়ে একটু পরামর্শ লাগবে। বললেন- আমি তো বাসায়ই আছি, কাল বিকেলেই চলে আসুননা?

কথামতো পরদিন বিকলে তাঁর সুবিদ বাজারস্থ বাসায় গেলাম। কুশল বিনিময়ের ফাঁকে চা-বিস্কিট চলে এলো । তিনি কথা বলছেন আর কাগজপত্রগুলো উল্টে-পালটে দেখছেন । দেখা শেষ হলে বললেন, এগুলো কি আপনি নিজেই প্রস্তুত করেছেন। বললাম- হ্যা, নিজে নিজেই। বললেন, "বেশ তো । খুব সুন্দর কম্পাইল করেছেন । আমার মনে হচ্ছে আপনি ভিসা পাবেন। তবে বসুন, আমি আপনাকে একটি কাভারিং লেটার লিখে দিই।" তিনি আমাকে সিটিং রুমে বসিয়ে রেখে কথা বলতে বলতে কম্পিউটারে একটি কাভারিং লেটার লিখে প্রিন্ট আউট দিয়ে বললেন, যান ইনশাল্লাহ ভিসা হবে।

তাঁর কথায় বেশ মনোবল পেলাম । সপ্তাহ দিনের মধ্যেই বৃটিশ হাইকমিশনে উঠলাম । ইন্টারভিউ দিলাম। ছয় মাসের ভিজিট ভিসা পেয়ে গেলাম ।

সিলেট ফিরে ফোন করে তাঁকে সুসংবাদটি জানালাম । আমার ভিসা প্রাপ্তির সংবাদে তিনি যতটুকু না আনন্দিত হলেন, তার চেয়ে বেশি খুশি হলেন আমার কৃতজ্ঞতাবোধ দেখে।

এই মহান ব্যক্তিটি হচ্ছেন মাহবুব আহসান চৌধুরী বাবর। আমি তাঁকে কেবল একজন ইমিগ্রেশন এডভাইজার হিসেবেই জানতাম । কিন্তু তিনি যে সিলেটের সাংস্কৃতিক জগতের এক উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন তা জানা ছিলো। হয়তো তাঁর সাংস্কৃতিক যৌবন সময়ে আমি সিলেটে ছিলাম না। সম্প্রতি তাঁর মৃতু্যর পর অনেক কিছুই জানলাম। আসলে তিনি ছিলেন বহুগুণে গুনান্বিত এক অসাধারণ মানুষ।

ছিলেন সিলেট প্রান্তিক কচিকাঁচার মেলা'র প্রতিষ্ঠাতা । জেলা শিল্পকলা একাডেমি সিলেট-এর সাধারণ সম্পাদক, ব্রিটিশ হাইকমিশন ঢাকার সাবেক কন্স্যুলার রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইমিগ্রেশন এডভাইজরি সার্ভিস এর বাংলাদেশ শাখার প্রধান, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট এর সাবেক সভাপতি, নাট্যসংগঠন 'নাট্যায়ন' সিলেট এর সভাপতি।

মাহবুব আহসান স্মরণে ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের 'পত্রিকা' অফিসে এক স্মরণ সভা আয়োজন করা হয়েছিলো। আয়োজক ছিলেন তাঁর কিছু বন্ধু, সহযোদ্ধা, স্বজন । সোশ্যাল মিডিয়ায় এই স্মরণসভা আয়োজনের সংবাদ দেখে মনস্থির করে রেখেছিলাম, যেভাবেই হোক একবার যেতে হবে। কারণ তাঁর কাছে আমার দায় আছে। সেটা শোধ করতে হবে।

শোকসভায় তাঁর অনেক গুণের কথা জানলাম। তাঁর সঙ্গে আমার মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের দেখা। এই দেখা থেকে মনে হয়েছিলো, তিনি ছিলেন কিছুটা আলাদা বৈশিষ্টের অধিকারী । ছিলেন একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। তার কথা বলার একটি নিজস্ব স্টাইল ছিলো। পোষাক পরিচ্ছদেও থাকতো ভিন্নতা। ছিলো রুচিশীলতা।

২০০৫ সালে তিনি লন্ডন এসেছিলেন। পূর্ব লন্ডনের সোনারগাঁ রেস্টুরেন্টে এক অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিলো। এরপর আর দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। এবার তাঁর সম্পর্কে কথা বললাম তাঁর স্মরণসভায়। এই যে তাঁর স্মরণসভায় গেলাম, এটা আমার একান্ত ইচ্ছা থেকে। আমাকে কেউ বলে-কয়ে অনুরোধ করে নিয়ে যায়নি। কারণ আমার প্রতি তাঁর একটা অবদান ছিলো এ জন্যই ।

বিষয়টি আমাকে ভাবায়। আমি আজ মাহবুব ভাইর স্মরণসভায় এ কারণেই গেলাম যে, তাঁর কাছ থেকে একটি বিষযে সহযোগিতা পেয়েছি। আমার প্রতি তাঁর একটি অবদান ছিলো । কিন্তু আমি কিংবা আমরা কি এমন কিছু করছি যে, আমরা মারা গেলে একজন শুভাকাঙ্খী সেই দায় থেকে আমাদের জন্য স্মরণ সভা আয়োজন করবে। স্মরণসভায় আসবে। আমাদের জন্য জান্নাত কামনা করবে।

আসলে মানুষের অন্তরের অনুভবটাই তো সবচেয়ে বড় দোয়া। শুধু দোয়া মাহফিল আয়োজন করে বড় শিরনী করে মানুষকে খাওয়ানোর অর্থ তো দোয়া নয়। এই যে কারো মৃতু্যর পর বন্ধুত্বের ফলে হোক, কিংবা কোনো অবদান থাকার কারণে হোক, আমরা একজন আরো একজনকে মনের গভীর থেকে স্মরণ করি। তাঁর কল্যাণ কামনা করি । এটাই তো খাঁটি দোয়া। এই দোয়া প্রাপ্তির জন্য আমরা কি কিছু করছি। মাহবুব ভাইর স্মরণসভা এটাই আমাকে ভাবতে শেখালো।

মাহবুব ভাইর প্রতি প্রাণভরে দোয়া করি, আল্লাহ তায়ালা যেনো তাঁকে জান্নাতের সর্বোত্তম স্থানে সমাসীন করেন। আমিন।

তাইসির মাহমুদ

সম্পাদক, সাপ্তাহিক দেশ

লন্ডন, যুক্তরাজ্য।

রোববার, ১১ ফ্রেবুয়ারি ২০১৮

বিষয়: বিবিধ

৬৮৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384786
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ দুপুর ০১:৩২
আবু জারীর লিখেছেন : ভাল লাগল। আল্লাহ মরহুমের নেক আমাল গুলো কবুল করুন আর তার ত্রুটি গুলো মাফ করে দিন। আমিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File