মর্নিং তাফসির-(আট). রোগীর সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করা কি ঠিক?
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৩:২৬:৫০ দুপুর
কেউ অসুস্থ হলে আমরা তাকে দেখতে যাই। চিকিৎসার খোঁজখবর নেই। যতদূর সম্ভব সেবা শুশ্রুষাও করার চেষ্টা করি। এই কাজটিকে আমরা সামাজিকতার অংশ হিসেবেই বিবেচনা করে থাকি । কিন্তু এটা শুধু সামাজিকতাই নয়, রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশও বটে। তিনি এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের যে কয়টি অধিকার বেঁধে দিয়েছেন তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে- অসুস্থ হলে তাঁকে দেখতে যাওয়া, চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়া। এটি অনেক বড় পুণ্যের কাজ।
বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়া ও আইফোনের যুগে রোগী দেখতে যাওয়াটা ডিজিটাল হয়ে গেছে। যখনই আমরা কাউকে হাসপাতাল কিংবা ঘরে দেখতে যাই তখন অসুস্থ, মৃতু্যপথযাত্রী ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়ে টাসটাস করে কয়েকটি ছবি তুলে সেগুলো ফেসবুকে আপলোড করে দিই।
এই ছবি তোলা ও ফেসবুকে আপলোড করে দেয়ার একটি সুবিধা আছে, তাহলো মানুষ অসুস্থতার খবর জানতে পারে। অনেকেই দেখতে আসার সুযোগ পায়। না আসতে পারলেও তার সুস্থতা কামনায় দোয়া করতে পারে।
কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। এতে করে মানুষকে ব্যক্তির অসুস্থতার খবর জানানোর চেয়ে নিজে যে হাসপাতালে তাকে দেখতে গেলাম সেই খবরটির প্রচার চালানোই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের অনেকেরই মনে এমন একটি ভাবনার উদ্রেক হতেই পারে। যেমন: "হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ ব্যক্তির সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে দেবো। মানুষ জানবে আমি তাঁকে দেখতে গেছি। ফেসবুকে হাজার হাজার লাইক ও শেয়ার পড়বে। কারণ অসুস্থতা ও মৃতু্য সংবাদেই সবচেয়ে বেশি লাইক আছে। তাহলে এটা হবে মানুষের উদ্দেশ্যে করা একটি কাজ। আর কুরআন ও হাদীস নির্দেশিত কোনো কাজ যখন মানুষের উদ্দেশ্যে করা হয় তখন তাতে কোনো পুণ্য প্রাপ্তির সুযোগ থাকেনা, উপরন্তু এ কাজের জন্য দূর্ভোগ রয়েছে বলে পবিত্র কুরআনে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। সুরা মাউন এর পাঁচ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আল্লাজীনা হুম ইউরা-উন"- অর্থাৎ যারা লোক দেখানোর জন্য (শরীয়ত নির্দেশিত কোনো কাজ) করে (তাদের জন্য দুর্ভোগ) ।
তবে যে কাজে সওয়াব বা গুনাহ নেই, এমন কাজ ফেসবুকে প্রচারে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় । যেমন একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানের ছবি ফেসবুকে আপলোড করা হলো। এই ছবিটি কোনো সওয়াবের উদ্দেশ্যে দেয়া হয়না। দেয়া হয় মানুষকে জানানোর জন্য।
কিন্তু হাসপাতালে রোগী দেখতে যাওয়া একটি শরীয়ত নির্দেশিত কাজ এখানে সওয়াব জড়িত রয়েছে। সুতরাং ফেসবুকে ছবি দিয়ে ওই কাজের মার্কেটিং না করাটাই উত্তম।
আমরা নামাজ পড়ি। কিন্তু নামাজে মন বসেনা। মন বসানোরও চেষ্টা করিনা। কাক যেভাবে মুখ ঠোকরিয়ে খাবার খায় সেভাবেই রুকু সেজদা করি। নামাজে দাঁড়ানোর পর মোবাইলে রিং এলে সেটি রিসিভ করে বলি আমি এখন নামাজে। একটু পরে ফোন করবো । আসরের নামাজ পড়বো। আচ্ছা এখনও সূর্যাস্তের অনেক সময় বাকি আছে। এই জরুরী কাজটা করে নিই । সাড়ে ৫টায় পোস্ট অফিস বন্ধ হয়ে যাবে। এক জরুরী ডকুমেন্ট পাঠাতে হবে। এই ফাইলের কাজটি সেরে ওঠে যাবো। এভাবে করতে করতে যখন তাড়াহুড়ো করে অজু সেরে নামাজে দাঁড়ালাম তখন দেখা গেলো সময় চলেই গেছে। এক মিনিটি কিংবা দুই মিনিট আছে। নামাজে দাঁড়ানোর পর সুর্যাস্ত হয়ে গেলো। এই নামাজীদের জন্য আল্লাহ তায়ালা কঠোরতা করেছেন । বলেছেন, নামাজে যারা অমনযোগী থাকে। সময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকেনা। তাদের জন্য মহাদুর্ভোগ। আল্লাহ তায়ালার কাছে তার নামাজের কোনো গুরুত্ব নেই ।
আরেকদল নামাজি আছেন বাধ্য হয়ে, বা লোক দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে থাকেন। দশজন পড়ছে, না পড়লে কেমন দেখায়। আসছিলাম, লন্ডন মুসলিম সেন্টারে একটি অনুষ্ঠানে। আজান হওয়ার পর সকলই নামাজে যাচ্ছেন। আমিও গেলাম। গেলাম এই কারণে যে, সকল যাচ্ছে না গেলে কেমন দেখা যায়। অন্যরা মন্দ বলবে।
তাহলে তো আমি আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ছিনা। নামাজ পড়ছি মানুষকে দেখানোর জন্য। নামাজে না গেলে মানুষ কী বলবে- এই জন্য নামাজ পড়ছি। এসব নামাজির জন্য কঠোরতা করে বলা হয়েছে, দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা লোক দেখানো নামাজ পড়ে।
উপরের আলোচনা পবিত্র কুরআনের ১০৭নং সুরা মাউন এর বিষয়বস্তুর আলোকে উপস্থাপন করলাম । নিচে আমরা সুরাটি বাংলা অনুবাদ দেখে নেবো।
বিসমিল্লাহ হির-রাহমানির রাহিম।
পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ তায়ালার নামে (শুরু করছি)।
এক) আরাআইতাল্লাজী ইউকাযযিবু বিদ্দীন।
আপনি কি দেখেছেন তাকে (অর্থাৎ ওই ব্যক্তি সম্পর্কে জানেন), যে বিচারদিবসকে মিথ্যা বলে?
দুই) ফাযালিকাল্লাযী ইয়াদু’উল ইয়াতীম।
সে তো ওই ব্যক্তি, যে এতীমকে গলা ধাক্কা দিয়ে ঠেলে দেয়।
তিন) ওয়ালা ইয়াহুদ্দু আলা ত্বোয়ামিল মিসকিন।
এবং মিসকীনকে খাবার দিতে উৎসাহিত করে না।
চার) ফাওয়াইলুল লিল মুসাল্লিন
অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজীদের জন্য।
পাঁচ) আল্লাযিনা হুম আন্ সালা-তিহীম সাহুন।
যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে অলস ও অমনযোগী থাকে।
পাঁচ). আল্লাজীনা হুম ইউরা-উন।
যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে।
পাঁচ). ওয়া ইয়ামনাউনাল মা’ঊন।
এবং নিত্য ব্যবহার্য্য বস্তু অন্যকে দেয় না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের যেনো তাঁর প্রকৃত ইবাদত করার তাওফিক দান করেন। আমিন।
তাইসির মাহমুদ
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
২৭ জানুয়ারি ২০১৮
বিষয়: বিবিধ
৮৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন