'শিটহোল কান্ট্রিজ' সমাচার

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ২১ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৪:৪৭:৪৯ রাত

'শিটহোল কান্ট্রিজ' । বিভিন্ন বাংলা সংবাদপত্র এই শব্দযুগলের অনুবাদ করেছে 'গুহ্যদ্বার দেশসমুহ' বা গুহ্যদ্বার সমতুল্য দেশসমুহ। লজ্জা ভেঙ্গে যদি আরো একটু সহজ বাংলায় তরজমা করা যায় তাহলে 'শিটহোল কান্ট্রিজ' এর অর্থ দাঁড়ায় "পায়খানার রাস্তা সমতুল্য দেশসমুহ"।

অনেকেই হয়তো আমার এই সহজ বাংলার তরজমা দেখে বিব্রত হচ্ছেন। কিন্তু আমি সবসময়ই আমার সাংবাদিক প্রশিক্ষকদের উপদেশ মেনে চলার চেষ্টা করি। তাঁরা বলেছেন, সংবাদপত্রে কখনো কঠিন ও দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করা ঠিক না । কারণ দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিটি যেমন একটি সংবাদপত্রের পাঠক, তেমনি ফুটপাতে বসে যে ব্যক্তি জুতা সেলাই করে সেও একজন পাঠক। খুব দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করার অর্থ হচ্ছে, ওই মুচি ব্যক্তিকে পত্রিকার পাঠ থেকে বঞ্চিত করা। তাই আমি আমার লেখায় সবসময়ই সহজ-সাবলীল ভাষা ব্যবহারের চেষ্টা করি।

সিলেটে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে। "আগলো বেটির লাজ নাই, দেখলো বেটির লাজ"। অর্থাৎ যে মহিলা নদী কিংবা খালের কিনারে বসে প্রকাশে পায়খানা করেন তার লজ্জা হয়না, কিন্তু লজ্জা হয় তার, যিনি দূর থেকে তাকে দেখে ফেলেন।

আমাদের অবস্থাও তেমন । বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফ্রিকার দেশগুলোকে বলেছেন, শিটহোল কান্ট্রিজ। এতে তার কোনো লজ্জা হয়নি । কিন্তু লজ্জা পাচ্ছি আমরা এর সহজ অনুবাদ করতে।

ডেনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা নোংরা, জঘন্য কথাবার্তা বলেই চলেছেন। তবে সর্বশেষ ১১ জানুয়ারি দরিদ্র দেশগুলোর অভিবাসীদের উদ্দেশ্য করে যা বলেছেন, তা সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট ভবন হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট সিনেটরদের সঙ্গে অভিবাসন নীতি নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে হাইতি ও আফ্রিকার দেশসমুহ থেকে মানুষ আনার বিরোধীতা করে বলেন, এসব "পায়খানা সমতুল্য দেশসমুহ" থেকে আমাদেরকে কেন লোক নিতে হবে? তার চেয়ে আমরা নরওয়ের মতো দেশ থেকে লোক (সাদা) নিই না কেন?

ট্রাম্পের এমন বর্ণবাদী বক্তব্যের পর তার ব্যক্তি মালিকানাধীন ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে শতশত শ্বেতাঙ্গ-আমেরিকান দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছেন। বিভিন্ন ধরনের সাইনবোর্ড ও প্লেকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প্রের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছেন।

"Behind me the Shithole home of the Shithead"

ইংরেজি লেখা এই সাইবোর্ডটি নিয়ে ট্রাম্প টাওয়ারের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছেন এক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান । সাইবোর্ডে লেখা ইংরেজি বাক্যগুলোর সরল অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায়: "আমার পেছনে রয়েছে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তির ঘর (ট্রাম্প টাওয়ার), যা পায়খানার সমতুল্য।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলেই লজ্জাহীন একজন মানুষ। তার লজ্জার কোনো বালাই নেই। তিনি তার নির্বাচনকালীন সময়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তার মেয়ের সৌন্দর্যের প্রশংসা করে বলেছিলেন, মেয়েটি খুবই সুন্দর। মেয়ে না হলে তিনি তাকে বিয়ে করতেন । যারা এ ধরনের কথা বলতে পারে তাদের ব্যাপারে মন্তব্য করার মতো বাক্য কিংবা শব্দ আমার জানা নেই।

তিনি যে শুধু হাইতি আর আফ্রিকার দেশসমুহকে "শিটহোল কান্ট্রিজ" বলেছেন, তা কিন্তু নয়। তার এই মন্তব্য তৃতীয় বিশ্বের সকল দেশের উপরই বর্তায় । যেকোনো সময় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ এশিয়ার দেশগুলোকেও শিটহোল কান্ট্রিজ বলা তার জন্য কোনো বিষয় নয়।

ভাবতে অবাক লাগে, আজ থেকে মাত্র শ'খানেক বছর আগে অভিবাসী হয়ে আয়ারল্যান্ডের যে হতদরিদ্র পরিবার উন্নত জীবনের আশায় আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলো, সেই পরিবারেরই সন্তান ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ অভিবাসীদের ঘৃণা করে তাদের দেশকে 'শিটহোল কান্ট্রিজ' আখ্যা দিলেন। সে লজ্জা কোথায় রাখি।

বিষয়: বিবিধ

৮৫১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384716
২১ জানুয়ারি ২০১৮ রাত ০৮:০৮
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : চমৎকার লেখা, চালিয়ে যান। ডোনাল্ড ট্রাম্প মানষিক রোগী।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File