মর্নিং তাফসীর-(ছয়)

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৫:২৫:৩৯ বিকাল

রাসুল (সাঃ) অসুস্থ। মাথায় ধরা। সারা শরীরে ব্যাথা। বিছানা থেকে উঠতে পারেননা। কী হয়েছে- তাও বলতে পারেননা।

অসুস্থতা নিয়ে রাতে ঘুমালেন । স্বপ্নে দেখলেন, দুজন লোক তাঁর সাথে দেখা করতে এসেছেন। প্রথম ব্যক্তি তাঁর শিয়রের কাছে বসলেন। দ্বিতীয়জন বসলেন পায়ের কাছে। প্রথমজন রাসুল (সাঃ) এর প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, ওর কী হয়েছে? জবাবে দ্বিতীয়জন বললেন, তাঁকে যাদু করা হয়েছে।

এবার প্রথমজন জানতে চাইলেন, কীভাবে যাদু করা হয়েছে? জবাবে দ্বিতীয় ব্যক্তি বললেন, মাথার চুল ও চিরুনীতে যাদু করা হয়েছে। এবার প্রথম ব্যক্তি বললেন, কোথায় যাদু করা হয়েছে স্থানটি দেখিয়ে দাও। দ্বিতীয়জন উত্তর দিলেন খেজুর গাছের শুকনো ছালে (বাকলে) এবং যারওয়ান কূপের ভেতরে পাথরের নিচে।

ভোরে ঘুম থেকে জেগে রাসুল (সাঃ) স্ত্রী আয়শা (রাঃ) কে বললেন, আমাকে যাদু করা হয়েছে। এরপর তিনি স্বপ্নের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই কূপের কাছে গেলেন। দেখলেন কূপের মানি যাদুর প্রভাবে মেহেদীর মতো লাল হয়ে আছে। আশাপাশের খেজুর গাছগুলো যাদুর প্রভাবে শুকিয়ে এক ভিন্নরূপ ধারণ করেছে । দেখে মনে হচ্ছে যেনো একেকটি শয়তানের মাথা।

কূপের ভেতরে ঢুকে যাদুর জিনিসপত্র বের করে আনা হলো। স্বপ্নের বর্ণণার মতো সবকিছু পাওয়া গেলো। রাসুল (সাঃ) এর ব্যবহৃত একটি চিরুনীতে এগারোটি গিরা দিয়ে তা কূপের মধ্যে ইটচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিলো। সেটি তুলে আনা হলে রাসুল (সাঃ) সুরা ফালাক ও এখলাসের এগারোটি আয়াত থেকে একটি করে পড়ে পড়ে ফুঁ দিয়ে গিরাগুলো খুলে নিলেন । গিরা খুলে নেয়া হয়ে গেলে রাসুল (সাঃ) স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, মনে হচ্ছে যেনো আমার উপর থেকে একটি মস্ত বড় বোঝা সরিয়ে নেয়া হলো।

এবার আয়শা (রাঃ) রাসুলকে জিজ্ঞেস করলেন, এই যাদু কে করেছে আপনাকে কি তা জানানো হয়নি? জবাবে রাসুল (সাঃ) বললেন, ইহুদীদের বন্ধু মুনাফিক লবীদ ইবনে আ'সাম। ফের আয়শার (রাঃ) প্রশ্নঃ তাহলে আমরা কি তার প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণ করবো না। জবাবে রাসুল (সাঃ) বললেন, আল্লাহ আমাকে নিরাময় করে সুস্থ করে তুলেছেন। আমি মানুষের মধ্যে মন্দ ছড়ানো পছন্দ করিনা।

উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতেই পবিত্র কুরআনের ১১৪টি সুরার সর্বশেষ দুটো সুরা "ফালাক" ও "নাস" নাজিল হয় । তাহলে চলুন সুরা ফালাকের বঙ্গানুবাদটুকু দেখে নিই।

বিসমিল্লাহ হির-রাহমানির রাহিম।

পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ তায়ালার নামে (শুরু করছি)।

এক) ক্বুল আ'উজুবি রাব্বিল ফালাক।

(হে নবী) আপনি বলুন, আমি উজ্জ্বল সকালের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই।

দুই) মিন শার্রি মা-খালাক।

আশ্রয় চাই তাঁর সৃষ্টি করা (প্রতিটি জিনিসের) অনিষ্ট থেকে।

তিন) ওয়ামিন শার্রি গা-সিকিন ইজা ওয়াক্বাব।

(আশ্রয় চাই) রাতের (অন্ধকারে সংঘটিত) অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

চার) ওয়ামিন শার্রিন নাফফা-সা-তিফিল উক্বাদ।

(আমি আশ্রয় চাই) গিরা বা গাইটে ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারীদের অনিষ্ট থেকে।

পাঁচ) ওয়ামিন শার্রিন হা-সিদিন ইজা হাসাদ।

হিংসুক ব্যক্তির (সবধরনের হিংসার) অনিষ্ট থেকেও (আমি আশ্রয় চাই), যখন সে হিংসা করে।

সুরাটিতে উল্লেখযোগ্য দুটো ম্যাসেজ রয়েছে।

এক). যাদুটোনা আছে, এটা সত্য। শুধু সাধারণ মানুষকেই যাদুটোনা করা হয়না, নবী-রাসুলগণও যাদুটোনা থেকে মুক্ত নন।

কেউ ক্ষতি করলেও প্রতিশোধ নিতে না যাওয়া। তাছাড়া মানুষের সাফল্য দেখলে হিংসাকাতর না হয়ে পড়া।

দুই). রাসুল (সাঃ) গায়েব বা অদৃশ্যের খবর জানতেন না। যা তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হতো, শুধুমাত্র তা-ই জানতেন। যদি তিনি গায়েব জানতেন তাহলে তাঁকে যে যাদু করা হয়েছিলো তা আগে জানলেন না কেন? কেন তাঁকে তা স্বপ্নে জানিয়ে দিতে হলো। সুতরাং, রাসুল (সাঃ) গায়েব জানতেন, তিনি হাজির-নাজির (সর্বত্র উপস্থিত) আছেন- এমন বিশ্বাস পোষন করা কিংবা প্রচার প্রচারণা চালানো- অজ্ঞতার পরিচয় দেওয়া ছাড়া কিছুই নয়।

তাইসির মাহমুদ

বেথনাল গ্রীন

লন্ডন, যুক্তরাজ্য

শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮

বিষয়: বিবিধ

৭৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File