মর্নিং তাফসীর- (পাঁচ)
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৫:০৮:৫৫ বিকাল
বাংলাদেশে ভন্ড দেওয়ানবাগী আল্লাহ তায়ালার রূপ আবিস্কার করেছে। আল্লাহ তায়ালা নাকি দেওয়ানবাগীর রূপেই রয়েছেন । আরশে গেলে নাকি দেখা যাবে সেখানে তিনি দেওয়ানবাগীর রূপেই বসে আছেন। (নাউ--জুবিল্লাহ)।
কী ভয়ংকর কথাবার্তা । ইউটিউবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তার এসব ভিডিও শুনলে ভয়ে গা শিউরে ওঠে । শতশত সরলপ্রাণ মানুষের সমাবেশে এই কুফরি কথাগুলো সে অবলিলাক্রমে বলে যাচ্ছে । মানুষ তার কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে, মনে প্রাণে বিশ্বাসও করছে। তারা খানকায় বসে যেনো দেওয়ানবাগীর রূপেই আল্লাহ তায়ালাকে দেখছে ।
অথচ এ নিয়ে সরকার, বিরোধীদল, ওলামা-মাশায়েখ কিংবা সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আসলে দেওয়ানবাগী যেনো এ যুগেরই এক ফেরাউন । তফাত শুধু এটুকুই, ফেরাউন নিজেকে খোদা দাবী করেছিলো। আর দেওয়ানবাগী নিজেকে আল্লাহ তায়ালার রূপে আবিস্কার করেছে।
তবে শুধু দেওয়াবাগীই নয়। আল্লাহর রূপ নিয়ে বিভিন্ন সময় অনেকেই নানা কুফরি কথা বলেছে । রাসুল (সাঃ) এর সময়ে মুশরিকরা (আল্লাহর সাথে যারা শরীক করে) বিশ্বাস করতো আল্লাহ তায়ালা সোনা অথবা রূপার তৈরি হবেন। কারণ তিনি তো আল্লাহ। অবশ্যই তাকে সুন্দর গড়নের হতে হবে। অনেকেই রাসুল (সাঃ) এর নিকট আল্লাহ তায়ালার বংশ পরিচয়ও জানতে চাইতো।
ইয়াহুদীরা বলতো আমরা আল্লাহর পুত্র উযায়ের (আঃ) এর ইবাদত করি। খৃষ্টানরা বলতো আমরা আল্লাহর পুত্র ঈসার (আঃ) পূজা করি। মাজুসীরা বলতো- আমরা চন্দ্র সুর্যের উপাসনা করি, আর মুশরিকরা বলতো আমরা মুর্তিপূজা করি।
আমরা মুসলমানদের মনেও মাঝে মধ্যে প্রশ্ন জাগে, আসলে আল্লাহ তায়ালা দেখতে কেমন? কেমন হতে পারে তার রূপ? আমাদের কল্পনায় আল্লাহ তায়ালার নানা রূপও ভেসে ওঠে । অনেকেই আল্লাহকে মানুষের আকৃতিতে কল্পনা করে থাকি । শয়তানও এসব কল্পনা আরো ঘাঢ়ো করতে আমাদের নানাভাবে ইন্ধন যোগায়।
কিন্তু বাস্তবে আল্লাহ কেমন? তার রূপ কেমন? তা ধারণা করার
শক্তি আমাদের নেই। তাছাড়া তিনি কোথাও তার আকৃতির কোনো বর্ণনা দেননি। তাই আল্লাহ তায়ালা কেমন, তার রূপ কেমন- তা কল্পনা করা আমাদের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। শুধুমাত্র জান্নাতে যেতে পারলেই আল্লাহ তায়ালার প্রকৃত রূপ দর্শন সম্ভব হবে ।
যারা আল্লাহ তায়ালার রূপ নিয়ে নানা কথা বলতো, উদ্ভট কল্পনা করতো, রাসুল (সাঃ) কে যতসব আজগুবি প্রশ্ন করতো- তাদের সন্দেহ দূর করে দিতেই সুরা এখলাস নাজিল হয় । চলুন সুরাটির সরল বঙ্গানুবাদ দেখে নিই।
বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রাহিম।
পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহ তায়ালার নামে (শুরু করছি) ।
০১. ক্বুল হুয়াল্লাহু আহাদ।
(হে নবী আপনি প্রশ্নকারীদেরকে) বলে দিন, আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয় ।
০২) আল্লাহুস-সামাদ।
আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন
০৩) লাম-ইয়ালিদ ওলাম ইউলাদ।
তার কোনো ছেলে-মেয়ে নেই এবং তিনিও কারো ছেলে-মেয়ে নয়।
০৪) ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু, কুফুওয়ান আহাদ।
এবং তার সমতুল্য কেউই নেই।
সুরাটি খুবই মর্যাদাপুর্ণ । রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি রাতের বেলা সুরাটি তিনবার পড়তে পারবে? এই সুরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য। তাই আলেমরা বলেন, সুরাটি তিনবার পড়লে পুরো কুরআন শরীফ খতম করারই সওয়াব পাওয়া যায়।
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, একবার তিনি রাসুল (সাঃ) এর সাথে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছিলেন । হঠাৎ শুনতে পেলেন এক ব্যক্তি সুরা এখলাস পাঠ করছে। রাসুল (সাঃ) কুরআন পাঠ শুনে বললেন, ওয়াজিব (অপরিহার্য) হয়ে গেছে। আবু হোরায়রা (রাঃ) পরম কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলেন- কী ওয়াজিব হয়ে গেছে, জবাবে রাসুল (সাঃ) বললেন, জান্নাত। (নাসাঈ ৬/১৭৭)
বিষয়: বিবিধ
৬৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন