মর্নিং তাফসীর-(চার)

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৬:১৫:১৮ সন্ধ্যা

মর্নিং তাফসীর-(চার)

*****************

আজ সুরা লাহাবর সংক্ষিপ্ত তাফসীর উপস্থাপন করবো। ৫ আয়াত বিশিষ্ট সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এই সুরায় আল্লাহ তায়ালা ক্রোধান্বিত হয়ে রাসুল (সাঃ) এর চাচা আবু লাহাব ও তাঁর চাচী উম্মে জামিলকে অভিশাপ দিয়েছেন । ইসলাম বিরোধীতার কারণে জাহান্নামে তাদের কী ধরনের শাস্তি হবে তার বর্ণনা দিয়েছেন। তাহলে চলুন একনজরে সুরাটির সরল বঙ্গানুবাদ দেখে নিই। এরপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার চেষ্টা করবো ।

বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রাহিম।

পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহ তায়ালার নামে (শুরু করছি) ।

১). তাব্বাত ইদা আবি লাহাবিউ-ওয়াতাব।

আবু লাহাবের দুটো হাতই ধ্বংস হয়ে যাক। ধ্বংস হয়ে যাক সে নিজেও।

২). মা-আগনা আনহু মা-লুহু ওমা কাসাব।

তার ধন সম্পদ, আয়-উপার্জন কোনো কাজেই আসবে না।

৩). সাইয়াসলা-না-রান জা-তা লাহাব।

সে অচিরেই আগুনের লেলিহান শিখায় প্রবেশ করবে।

৪). ওয়ামরাআতুহু, হাম্মা লাতাল হাতাব।

(সঙ্গে থাকবে) জ্বালানী কাঠ বহনকারী তার স্ত্রীও।

৫). ফি-জি দিহা হাবলুম মিম মাসাদ।

(অবস্থা দেখে মনে হবে) তার গলায় যেনো খেজুর গাছের আশ দিয়ে পাকানো শক্ত রশি জড়িয়ে আছে।

রাসুল (সাঃ) এর মক্কী জীবন। তখন সবেমাত্র ইসলাম প্রচার শুরু করেছেন। একদিন তিনি কিছু একটা ঘোষণা দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্বাবা ঘরের নিকটবর্তী সাফা পর্বতের উপর গিয়ে দাঁড়ালেন। ওই সময় মক্কায় একটি প্রচলন ছিলো। কেউ কিছু ঘোষণা দিতে চাইলে সাফা পর্বতে গিয়ে দাঁড়িয়ে সকলকে আহবান করতেন । তো রাসুল (সাঃ) তাই করছিলেন। তিনি সাফা পর্বতে দাঁড়িয়ে "হে আবদে মনাফ, হে আবদে মুত্তালিব" (হে মনাফের বংশধর, হে মোত্তালিবের বংশধর) বলে আহবান করছিলেন । তার আহবান শুনে গোত্রের কুরাইশরা ছুটে এসে সাফা পর্বতের পাদদেশে জড়ো হলো।

তখন তিনি বললেন, "আমি যদি বলি একদল শত্রু তোমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। যেকোনো সময় তোমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে- তাহলে তোমরা কি বিশ্বাস করবে? এ কথা শুনে তার চাচা আবু লাহাব তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো, মুহাম্মদ তুমি ধ্বংস হও। তুমি কি আমাদের এ কথা বলার জন্য এখানে আহবান করেছো? নানা কটুক্তি ও গালমন্দ করতে শুরু করলো । এমনকি পাথর হাতে নিয়ে তাঁর প্রতি ঢিল ছুঁড়তে উদ্যত হলো । সে উপহাস করে বলতে লাগলো, "আমার ভাতিজার কথা যদি সত্যি হয়ে যায় তাহলে আমার অনেক ধন-সম্পদ আছে, সন্তান-সন্তনি আছে এগুলো আল্লাহকে ফিদিয়া হিসেবে দিয়ে আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি কামনা করবো। তখনই আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে সুরা লাহাব নাজিল করেন।

'আবু লাহাব' ছিলো রাসুল (সাঃ) এর চাচা। আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানদের মধ্যে একজন । লাহাব শব্দের অর্থ গৗরবর্ণ। সহজ বাংলায়- ফর্সা বাদামী রঙ। আবু লাহাবের চেহারা ফর্সা বাদামী রঙের হওয়ায় তাকে মানুষ এই নামে ডাকতো। তাঁর আসল নাম ছিলো আব্দুল উজ্জা। রাসুলের (সাঃ) প্রতি চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন ও বিরুদ্ধাচারণের কারণে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তার দুই হাতই ধ্বংস হয়ে যাক। আমরা অনেক সময় বলে থাকি, ওমুক ব্যক্তির হাত অনেক লম্বা। এর অর্থ অক্ষরিক অর্থে ওই ব্যক্তির হাত লম্বা নয়। ক্ষমতার দিক থেকে লম্বা। তেমনি আবু লাহাবের হাত দুটো ধ্বংস হওয়া বলতে আবু লাহাবের শক্তি বুঝানো হয়েছে । তাছাড়া সে উপহাস করে নিজের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি ফিদিয়া দিয়ে বেঁচে যাওয়ার কথা বলেছেন । তাই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, এগুলো তার কোনোই কাজে আসবে না। সে অচিরেই জাহান্নামের আগুনের লেলিহান শিখায় প্রবেশ করবে। আর বাস্তবে হয়েছিলোও তাই। সে অত্যন্ত করুনভাবে মৃতু্যবরণ করেছিলো। বদরের যুদ্ধের সাতদিন পর তার গলায় প্লেগ রুগের ফোঁড়া দেখা দেয়। রোগটি ছোঁয়াছে হওয়ায় মানুষ তার থেকে দূরে থাকে । পরিবার-পরিজন তাকে পরিত্যাগ করে নির্জনস্থানে ফেলে রাখে। এমতাবস্থায় তার মৃতু্য হয়। তিনদিন পর্যন্ত তার লাশ পড়ে থাকলেও কেউ দ্বারে কাছেও যাওয়ার সাহস করতে পারেনি। একসময় তার লাশে পঁচন ধরলে কিছু চাকর-বাকর দিয়ে লাশটি মাটিতে পুঁতে দেয়া হয়।

আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলও ছিলো রাসুলের (সাঃ) বড় শত্রু। সে সবসময়ই রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্ধে স্বামী আবু লাহাবকে ইন্ধন যোগাতো। বিভিন্ন ধরনের কাটাযুক্ত গাছ-গাছালি ও খড়কোটা কুড়িয়ে এনে রাসুল (সাঃ) এর চলাচলের রাস্তায় ফেলে রাখতো । তিনি যাতে পায়ে কাটাবিদ্ধ হয়ে কষ্ট পান । তাই কুরআনে তাকে জ্বালানী বা খড়কোটা বহনকারিনী বলে অভিহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সেও তার স্বামীর সঙ্গী হবে। অর্থাৎ স্বামীর সাথে জাহান্নামের আগুনের লেলিহান শিখায় চিরদিন জ্বলতে থাকবে । পাশাপাশি তার অরো একটি কাজ কবে। জাহান্নামে থাকা যাক্কুমসহ বিভিন্ন ধরনের গাছের ডালপালা কুড়াতে থাকবে।

ওইগুলো কুড়িয়ে এনে তার স্বামীর উপর দিবে, যাতে আগুন আরো প্রজ্জ্বলিত হয়।

এই সুরায় আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর প্রতি অভিশাপ ও শাস্তি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালা তার রসুলের প্রতি বিদ্বেষপোষনকারী ও কুরআনের অবমানকারীদের কী পরিনতি হতে পারে সেই সতর্কবানীই দিয়েছেন। যুগে যুগে ইসলাম বিদ্বেষীরা যে অত্যন্ত করুণ পরনতি ভোগ করেছে এর শতশত প্রমাণ রয়েছে । বর্তমান সময়েও এর শতশত প্রমাণ আছে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে যেনো মুক্তি দান করেন। আমিন।

তাইসির মাহমুদ

লন্ডন, যুক্তরাজ্য

১২ জানুয়ারি ২০১৮

বিষয়: বিবিধ

৭৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File