আজমাল মাসরুরের পিতার শেষ বিদায় ও মৃতু্য সম্পর্কে একটি কঠিন উপলব্ধি
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ০৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৪:১৫:২৯ বিকাল
শুক্রবার বাদ-জুমা ইস্ট লন্ডন মসজিদে আজমাল মাসরুর এর পিতা মকবুল হোসেইন এর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হলো। আজমাল মাসরুর নামাজে ইমামতি করলেন। নামাজের মধ্যে তিনি ডুঁকরে ডুঁকরে কেঁদে ওঠছিলেন । একজন বাবার জন্য এটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। ছেলে যখন বাবার নামাজ পড়াবে তখন তাঁর অনুভূতি হবে অন্যরকম । সে কাঁদবে। মনখুলে বাবার জন্য দোয়া করবে। যে দোয়ার মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকেনা। অর্থাৎ পিতা-মাতার জন্য সন্তানের দোয়া, সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়ার মধ্যখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকেনা। সরাসরি আল্লাহ তায়ালার কাছে পৌঁছে যায়। আমরা আশাবাদী, আজমাল মাসরুর এর চোখের পানি আল্লাহ তায়ালার কাছে খুব পছন্দ হয়েছে । তিনি তাঁর বাবাকে মাফ করে দিয়ে জান্নাতে সমাসীন করেছেন।
জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করলেন কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ। অধিকাংশই এসেছিলেন আজমাল মাসরুরকে ভালোবাসেন বলেই। এসেছিলেন বিলেতের বাংলা মিডিয়ার অনেক সাংবাদিক,সম্পাদকও। নামাজ শেষে এলএমসির গ্রাউন্ড ফ্লোরে রাখা হলো মরদেহ। শেষ দেখার জন্য লাইনে দাঁড়ালেন সকলেই। দাঁড়ালাম আমরাও। একে একে আমরা তাঁর নিথর মুখ দেখলাম আর শেষ বিদায় জানালাম। আজমাল মাসরুর ও স্বজনেরা চলে গেলেন গোরস্থানের উদ্দেশ্যে। আর আমরা, সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধব ছুটে গেলাম বারাকা রেস্টুরেন্টে। মেতে উঠলাম দুপুরের খাবার ও আনন্দ আড্ডায়। এরপর একসময় যে যার মতো করে চলে গেলাম ।
চলে আসি আমিও। হাঁটতে হাঁতে ভাবি। আমিও কাল মারা যেতে পারি।
এ দেশে মারা গেলে হয়তো এভাবেই সহকর্মীরা ছুটে আসবেন। নামাজ পড়বেন। লাইনে দাঁড়িয়ে আমার লাশ দেখবেন। কিছুক্ষণ আফসোস করবেন। এরপর আমার প্রাণহীন দেহ নিয়ে যাওয়া হবে গোরস্থানের উদ্দেশ্যে । আর বন্ধু-সহকর্মীরা ছুটে যাবে দুপুরের খাবারের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ, কিছুদিন তাঁরা আমার কথা বলাবলি করবেন । এরপর আস্তে আস্তে ভুলে যেতে বসবেন। একসময় একেবারেই ভুলে যাবেন। এরপর তারাও একে একে একসময় চলে যাবেন। তখন আর মনে করার মতো কেউ থাকবে না।
এই ইস্ট লন্ডন মসজিদ, হোয়াইটচ্যাপেল রোড, অল্ডগেইটে হাজারো স্মৃতি পড়ে থাকবে। কেউ জানবে না। আমি একজন যে সুদুর বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছিলাম। এখানে আমার সরব পদচারণা ছিলো। সবকিছুই তখন অজানা হয়ে যাবে। যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর, শতাব্দির পর শতাব্দি চলে যাবে। কেউ মনে রাখবেনা। মনে রাখার কেউই থাকবেনা। পড়ে থাকবো নির্জন একটি কবরে, একাকী সঙ্গীহিন। কী কঠিন উপলব্ধি। ভাবতে ভাবতে দুচোখে অশ্রু গড়িয়ে যায়।
তাইসির মাহমুদ
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
৬ জানুয়ারি ২০১৮
বিষয়: বিবিধ
৬১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন