লাতুর ট্রেন ও সমসু টিটিই
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:৩৯:১২ সকাল
লাতুর ট্রেনের স্মৃতি নিয়ে লিখছিলাম। আশি কিংবা নব্বুইর দশকে মৌলভীবাজারের উত্তরাঞ্চলের মানুষের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ছিলো এই ট্রেন। ওই সময়ে যারা নিয়মিত ট্রেনে চলাচল করতেন তাদের মধ্যে 'সমসু টিটি'র নাম শুনেননি এমন মানুষ বোধহয় খুব কমই পাওয়া যাবে। টিটিই মানে 'ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার'। যিনি যাত্রীদের টিকিট চেক করেন। টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠলে জরিমানা করেন।
তবে 'শাহবাজপুর-কুলাউড়া' ট্রেন রুটে টিটিইদেরকে যাত্রীরা তেমন পাত্তা দিতেন না। কারণ তাদের অধিকাংশই ছিলো ঘুষখোর। টিকিট না করে তাদেরকে টিকিটের অর্ধমূল্য ধরিয়ে দিলেই হতো। তবে এদের মধ্যে একজন টিটিই ছিলেন ব্যতিক্রম। তাঁর নাম সমসু টিটিই ।
সমসু টিটিই ছিলেন এই এলাকার ট্রেনযাত্রীদের জন্য এক আতংক। যাত্রীরা স্টেশনের প্লটফর্মে পৌছার পর সর্বাগ্রে খবর নিতেন আজ সমসু টিটিই ট্রেনে আছেন কি-না। সমসু টিটিই ডিউটিতে আছেন- জানার সাথে সাথে টিকিট কাউন্টারে মানুষের ঢল নামতো। দেখা যেতো কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের ভীড়। যেকোনো উপায়ে একটি টিকিট ক্রয়ের প্রাণপন চেষ্টা। কোনো কোনো সময় টিকিট শেষ হয়ে যেতো। এর কারণ, টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠলে সমসু টিটিই মোটা অংকের জরিমানা করতেন। টিকিট না থাকলে পরবর্তী স্টেশনে নামিয়ে দিতে পরোয়া করতেন না । তিনি ঘুষ নিতেন না। একজন সৎ কর্মকর্তা ছিলেন। জানিনা তিনি আজ বেঁচে আছেন কিনা। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে যেনো সততার প্রতিফল দেন- এই দোয়া করি।
ওই সময় 'শাহবাজপুর-বড়লেখা' ভাড়া ছিলো মাত্র দুই টাকা। শতশত মানুষ প্রতিদিন সকালে বড়লেখা যেতেন। বিকেলে আবার ট্রেনে করেই ফিরতেন। কিন্তু টিকিট কাউন্টার দেখা যেতো একেবারেই ফাঁকা । দু'চারজন ছাড়া টিকিট কেনার মতো কাউকে পাওয়া যেতো না।
এই টিকিটহীন ট্রেন চলাচলের একমাত্র কারণ ছিলো ঘুষখোর টিটিই। সকলেই কম-বেশি ঘুষ খেতো। দুই টাকার টিকিটমুল্যে এক টাকা পরিশোধ করলেই আর কোনো ঝামেলা থাকতো না। প্রায় দুই যুগ আগে এই ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী ছিলাম। আজ ভাবি, যদি সমসু টিটিইর মতো অন্যান্য টিটিইরাও সৎ হতেন তাহলে বাংলাদেশ রেলওয়েকে বছরের পর বছর লোকসান দিতে হতোনা।
আরো একটি বিষয় মনে পড়ছে আজ। মাঝে-মধ্যে ট্রেনে মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমান আদালত) আসতো। স্টেশনে পৌঁছলেই খবর হয়ে যেতো আজ মোবাইল কোর্ট এসেছে। তখন টিকিট কাউন্টারে ভীড় সামলায় কে। এতবেশি টিকিট বিক্রি হতো যে, শেষ দিকে আর কেনার মতো টিকিটই থকাতোনা। মানুষ মোবাইল কোর্টকে মফিল কোর্ট বলতো।
তাইসির মাহমুদ
বেথনাল গ্রীন
ইস্ট লন্ডন, যুক্তরাজ্য
১৬ নভেম্বর ২০১৭
বিষয়: বিবিধ
৮৫৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মানুষকে মজবুর বা বাধ্য করে রেলেরই লোকেরা ট্রেনের সিডিউলে ঘাপলা করে এবং টিকিট কম ছাপিয়ে বা কালোবাজারিদের হাতে তুলে দিয়ে ( নিজেদের সাধু বানাবার জন্য মাইকে ঘোষনা করে কালোবাজারি হতে টিকিট না কিনতে , ট্রেন আসতে দেরী করায় দুঃখ প্রকাশ করতে )।
যেখানে ১ ঘন্টায় ৩/৪ টা ট্রেন চলে আসার কথা সেখানে তারা ট্রেনগুলোকে লেট করিয়ে ১.৫ / ২ ঘন্টায়ও একটা ট্রেন আসে না । ফলে ৪/৫ ট্রেনের যাত্রী একটা ট্রেনে উঠতে বাধ্য হয় , টিকিটও সেরকম পর্যায়ের থাকে না বা লাইনে দাঁড়িয়ে কাঁটতে গেলে ট্রেন মিস হবে বলে অনেকে বাধ্য হয় না কেটেই ট্রেনে উঠতে ।
এ সুযোগ কাজে লাগায় ট্রেনের লোকেরা । যাত্রীদের কাজ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার কম টাকা যেটা তারা নেয় সেটা যায় নিজেদের পকেটে , রেলের কাছে না ।
প্রতিদিন এত এত লোক রেলে আসা যাওয়া করে তবুও বলা হয় যে রেলের লোকসান কেবল বেড়েই চলেছে । লোকসান হবেই বা না কেন ? রেলের লোকেরাই তো চায় না রেলের কোন উন্নয়ন হোক , রেলে মানুষ আরামসে আসা যাওয়া করুক।
বছর খানেক আগে প্রথম আলো পত্রিকায় জানতে পারলাম যে রেলের লোকেদের যা বেতন , ওভার টাইম মিলিয়ে সেটা হয় তার দ্বিগুন । মানে আপনি যদি ১০০০০ টাকা বেতন পান ওভার টাইমের কোটা পূরণ হলে সেটা ৩০০০০ টাকায় গিয়ে পৌছাবে । এই ওভার টাইম তারা ইজিলি করতে পারে সিডিউলে ঘাপলা করে ।
ফলে আমরা দেখতে পাই যে খুব কম ট্রেনই সঠিক সময় মেনে চলাচল করে । এতে যে কারোরই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে এটা এরা ইচ্ছে করেই করে।
রেলের উন্নতি হলে মার খাবে বাসের ব্যবসা । আমরা কে না জানি যে যে কোন বড় রাজনৈতিক দলের মারদাঙ্গা ক্যাডারদের ৯০% ই হলে বাসের মালিক - কমর্চারী সমিতির লোকেরা । এদেরকে কোন রাজনৈতিক দল চটাবে না , এরা ধর্মঘট করে সারা দেশ অচল করে দিতে খুবই পারদর্শী । সরকারও এদের কাছে অসহায় । তাই বাস মালিক ও শ্রমিকদের চটিয়ে দেয় এমন কোন কাজ সরকার কখনও কার্যকর করে না / করবেও না ।
তাই রেলেরও উন্নতি হয় না । কিন্তু এত লোকসানের পর রেলের লোকদেরকে দেখে তো খুব যে মন মরা হয়ে আছে সেটা মনে হয় না । তাই এটাও মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক যে বা এটা একেবারেই চিন্তা করা অসাড় নয় যে এসব রেলের লোকেরা ( টপ টু বটম) বসাওয়ালাদের কাছ থেকে মাসিক বা অন্যভাবে রেংক অনুযায়ী খাম পেয়ে থাকে।
আমাদের সরকার জনকল্যাণমুখী সরকার না । এরা চায় কিভাবে নিজেদের পজিশন ধরে রাখা যায় বা পজিশনে যাওয়া যায় এবং সেটার জন্য কাকে তার বেশী সেটিসফাই করা লাগবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন