একজন জান্নাতি মানুষের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ০৩ জুলাই, ২০১৬, ১০:১০:৫৩ রাত
রাসুল (সাঃ) মসজিদে বসে আছেন। সঙ্গে বসে আছেন কয়েকজন সাহাবাও । কথা বলছেন বিভিন্ন বিষয়ে। হঠাৎ বলে উঠলেন, এখনই একজন মানুষ মসজিদে প্রবেশ করবেন যিনি হবেন জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা। রাসুলের (সাঃ) আচমকা এ কথা শুনে সাহাবারা বেশ কৌতুহলী হয়ে উঠলেন। তাকিয়ে থাকলেন মসজিদের প্রবেশ পথের দিকে। হঠাৎ মসজিদে প্রবেশ করতে দেখলেন একজন লোককে । তাঁর এক হাতে জুতা। এই মাত্র অজু করেছেন। মুখে তখনও অজুর পানি ঝরছে। সাহাবারা তাঁকে ভালো করে দেখলেন। তাহলে এই ব্যক্তিই জান্নাতি মানুষ। রাসুল (সাঃ) খানিক আগে যার কথা বললেন।
পরদিনও ঠিক একই ঘটনা ঘটলো । রাসুল (সাঃ) সাহাবাদেরকে একই কথা বললেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই দেখা গেলো সেই একই ব্যক্তির আবির্ভাব। সাহাবারা জান্নাতি মানুষটাকে আবার ভালো করে দেখলেন।
তৃতীয় দিনও ঘটলো সেই একই ঘটনা। রাসুল (সাঃ) একই কথা বললেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সেই একই ব্যক্তিকে মসজিদে প্রবেশ করতে দেখা গেলো।
এ ঘটনা উপস্থিত সাহাবাদেরকে অনসন্ধিৎসু করে তুললো। একজন সাহাবা রীতিমতো অনুসন্ধান শুরু করে দিলেন। তিনি জানতে চান ওই সাহাবা কেন আগে-ভাগেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে গেলেন? কী গুন তাঁর? কী আমল করেন তিনি? তিনি এই রহস্য উদঘাটন করতে একদিন ছদ্ম বেশে ওই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন।
রাতে ওই ব্যক্তির বাড়িতে থাকতে চান। তাই একটি কৌশল আঁটলেন। বললেন, বাড়িতে আমার বাবার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তিনি আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। আপনি কি আমাকে আপনার ঘরে কয়েক দিন থাকতে দেবেন। সানন্দে রাজি হয়ে তাকে থাকতে দিলেন ওই জান্নাতি ব্যক্তি।
তিনদিন তিনি তাঁর ঘরে থাকলেন। সার্বক্ষনিক অনুসরণ করতে থাকলেন তাকে। দেখতে চাইলেন ওই ব্যক্তির বাড়তি ইবাদত। রাতে কী বিশেষ ইবাদত করেন তিনি। কী কারণে রাসুল (সাঃ) তাঁর সম্পর্কে জান্নাতের সুসংবাদ দিলেন।
কিন্তু অনুসন্ধানে আশানুরূপ তেমন কিছু পেলেন না। জান্নাতি ওই ব্যক্তিকে রাতের বেলা তেমন বাড়তি কোনো কোনো ইবাদত করতেও দেখলেন না।
অবাক হলেন তিনি। তাহলে এই ব্যক্তির বিশেষ গুনটি কী? অনুসন্ধানে কিছু বেরিয়ে না আসায় তিনি বিষয়টি খুলে বললেন তাঁকে। বললেন, রাসুল (সাঃ) আপনাকে জান্নাতি মানুষ বলে ঘোষনা দিয়েছেন। আপনি কি দয়া করে আপনার বাড়তি ইবাদত সম্পর্কে কিছু বলবেন?
জবাবে ওই ব্যক্তি বললেন, আমার বাড়তি কোনো আমল নেই। আরো দশজনের মতোই আমি স্বাভাবিক জীবন যাপন করি।
এ কথা শুনে অনুসন্ধানকারী সাহাবী তাঁর ঘরে থেকে বেরিয়ে এলেন । হঠাৎ পেছন থেকে ডাকলেন জান্নাতি সাহাবি। বললেন, আমি জানিনা কোন কারণে (রাসুলঃ) আমাকে এত বড় সুসংবাদের কথা বলেছেন। তবে আমি একটি কাজ সব সময় করে থাকি। আর তা হলো:
কোনো মুসলমানের প্রতি আমি কখনো হিংসা-বিদ্বেষ পোষন করিনা। কোনো ধরনের ক্রোধ, ক্ষোভ, ঘৃণা মনে রাখিনা। রাতে ঘুমিয়ে যাওয়া আগেই সবকিছু ভুলে যাই। এমনকি কেউ আমাকে কোনোভাবে কষ্ট দিয়ে থাকলেও রাতে ঘুমানোর আগেই তাঁকে মাফ করে দিই। (সহিহ বোখারী)
বিষয়: বিবিধ
১১৬৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন