হিমাগারে তনু
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:৫১:১০ সকাল
তনু হত্যার বিচারের দাবী ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে। গণজাগরণ মঞ্চের প্রবক্তা ইমরান সরকার মাঠ থেকে অনেক আগেই সটকে পড়েছেন। প্রথম দিকে তার তর্জন গর্জন দেখে ভেবেছিলাম আবার শাপলা চত্তর বোধহয় জেগে উঠলো। কিন্তু হঠাৎ কোনো অজানা কারণে চুপসে গেলেন তিনি। দোষ কি-বা আর তার। এক বিষয়ে কত চিল্লাচিল্লি করা যায়। একটার পর একটা, নিত্য-নতুন ইসু্য। কোনটা বাদ দিয়ে কোনটা ধরি। শুধু ইমরান সরকারই নয়। সকলেরই তো একই অবস্থা।
সংবাদপত্রগুলোও মনে হচ্ছে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন কী আর লিখবে। সিআইডি আসছে, জিজ্ঞাসাবাদ করছে, ধর্ষনের আলামত নেই- এছাড়া তো আর কিছু লেখার নেই।
তবে লেখার আছে। কী লিখতে হবে এটাও সকলে জানেন। পুলিশ-সিআইডি শুধু যে সময় পার করছে-এটাও সকলে বুঝেন। কিন্তু কী আর করা। সকলের হাত-পা তো বাঁধা। লিখা যাবে না।
কে বাঁধলো সাংবাদিকদের হাত পা? এরও উত্তর দেয়া যাবেনা। কিছুই বলা যাবে না। মুখে কসটেপ দিয়ে শুধু দেখতে থাকুন, আর শুনুন।
নাহ, বেশি কিছু দেখতে পারবেন না। পারবেন না শুনতেও। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ভবিষ্যৎ বাণী দিয়ে বলেছেন, তনু হত্যার বিচার হবে না। তিনি মাঝে-মধ্যে দুই একটি ভালো কথা বলেন। ব্লগার নাজিমুদ্দিন হত্যার পর বিবৃতি দিয়েছেন। বলেছেন, ব্লগার হত্যা হলে নিন্দা জানানো হয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে। কিন্তু মসজিদের মুয়াজ্জিন খুন হলে সেটা নিয়ে কেউ কথা বলেনা, নিন্দা জানানোর তো প্রশ্নই আসেনা। তিনি বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক দেশ মানে কি? মানে কি কোনো সম্প্রদায় থাকবেনা। এটা কীভাবে হবে।
হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ মাঝে মধ্যে ভালো কথা বলেন। কিন্তু তাঁর কথায় মানুষের একিন নেই। কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রীর গৃহপালিত বিশেষ প্রতিনিধি। তাই কোনটি নিজে বলেন আর কোনটি প্রধানমন্ত্রীর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী- তা বুঝা মুশকিল।
তবে তিনি জানেন কারা খুন করেছে। কারণ তনু খুন হয়েছেন সোনানিবাস এলাকার ভেতরে। আর হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদও এক সময় সেনা প্রধান ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আপাতত কোনো কথা বলবেন না। তাঁর তো গদি রক্ষা করতে হবে। যারা তাঁর গদি রক্ষা করবে, তারা তো একটু আধটু ইয়ে মানে ইয়ে.. তো করতেই পারে। আর প্রধানমন্ত্রী জানেন, সংবাদপত্রওয়ালারা আর কতদিন লিখবে। কিছুদিন পরেই টায়ার্ড হয়ে পড়বে। নতুন নতুন কতকিছুই ঘটবে। ঘটনার ঠেলায় তনু হত্যা কত হাত মাটির নিচে চাপা পড়বে-কেউ খুঁজেও পাবেনা। আর দেশের প্রজাশ্রেনী নিজের খেয়ে কাজ নেই। কতদিন আর চিল্লাচিল্লি করবে। একটার পর একটা ইসু্য। একটা চাপা দিতে আরো একটি এমতিইতে ঘটছে। না ঘটলে ঘটানোই হচ্ছে। ঘটাতে হবে। এটাতো স্বাভাবিক।
ফালাফালি লাফালাফি করে লাভ নেই। সাংবাদিক-সাগর রুনি নিজ বেড রুমে খুন হলেছিলেন। কত চিল্লাইছেন। তো কী হইছে। ইকবাল সোবহান সাহেবকে মিডিয়া উপদেষ্টা করে কীভাবে সবকিছু সাইজ হয়ে গেলো-এগুলো দেখছেন না? নতুন করে তো বলার কিছু নেই। তাহলে কম কথা বলুন। দেখতে থাকুন। চিন্তার কোনো কারণ। তনু হত্যার বিচার হিমাগারে আছে, থাকবে। ইহকালে কোনো দিনও সেখান থেকে বের হবেনা।
বিষয়: বিবিধ
১০৬৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন