একজন ‘থাবা বাবা‘র জানাজা ও কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ১৪ মার্চ, ২০১৩, ০৯:২০:৪২ সকাল
(এটি থাবা বাবা হত্যার ২/৩দিন পরে লেখা তাই কিছু পুরনো মনে হতে পারে)
শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী রাজিব হায়দারের জানাজা হলো। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার নারী পুরুষ এক কাতারে দাড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ পড়লেন। একটি নয়, দুইটি নয় চারটি জানাজা হলো। সফেদ কাপড়ে মোড়ে কফিনে তুলে তাকে নিয়ে দাফন করা হলো। মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের দেয়া তথ্য মতে- শাহবাগ চত্তরে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশগ্রহনকারীদের অধিকাংশেরই অজু করার সুযোগ ছিলোনা। অজু ছাড়াই তারা জানাজা পড়েছেন। ইমাম নামাজ পড়িয়েছেন চার তাকবিরের স্থলে তিন তাকবিরে। একটি নোংরা জায়গায় তার জানাজা পড়ানো হয়েছে। যেখানে প্রায় ১২দিন যাবত চলছে গান-বাজনা।
সে যাক। নামাজ, অজু কিংবা দাফন আমার এ লেখার বিষয়বস্তু নয়। বিষয় হলো রাজিব হায়দার কি চেয়েছিলেন মৃত্যুর পর জানাজা হোক। নাহ ! তিনি সেটি চাননি। চাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। যিনি কোনো ধর্ম, আল্লাহ, রাসুলে বিশ্বাস করতেন না, তিনি তার জানাজা পড়তে চাইবেন কেন। জানাজা তো একজন মৃত মানুষের জন্য দোয়াসরূপ। আল্লাহ যেনো ঐ ব্যাক্তিকে মাফ করে দিয়ে জান্নাতে স্থান দেন-এই দোয়ার নিমিত্তে জানাজা পড়া হয়। কিন্তু রাজিব হায়দার যেখানে পরকালে বিশ্বাস করতেন না, সেখানে তার জন্য কিসের দোয়া? তার বিশ্বাস মতে- মৃত্যুর পর তিনি মাটির সাথে মিশে যাবেন। জীবনটা তো শুধুমাত্র উপভোগের জন্য। পরকাল বলতে তো কিছুই নেই। আর যারা পরকালে বিশ্বাস করে তারাতো বোকা-এটাই ছিলো রাজিবের বিশ্বাস। আর তাই বলে ইসলাম ধর্মের প্রতি ছিলো তার যত বিদ্বেষ।
ধর্মের প্রতি তার বিদ্বেষী মনোভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় তার লিখনীতে। তিনি মোহাম্মদ (সা কে নিয়ে অনেক লিখেছেন। সবগুলো লেখাতেই মোহাম্মদ না বলে মোহাম্মক (নাউজুবিল্লাহ) বলে সম্বোধন করেছেন। ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা কে তিনি উল্লেখ করেছেন আবু বকরী হিসেবে। তাঁর লেখার শিরোনাম ছিলো মোহাম্মকের সফেদ লুঙ্গি, ঢিলা-কুলখ, সিজদা, মদ ও মোহাম্মক, ইফতারী ও খুরমা খেজুর। এভাবে আরো অনেক লেখা তার ব্লগে স্থান পেয়েছিলো। অত্যন্ত ভয়াভহ ধরনের লেখা। আমি সেগুলো এখানে হুবহু লিখতে পারবোনা। আমার হাত কাঁপছে। কাঁপছে আমার হার্টও। সিজদা শিরোনামের লেখায় তিনি নামাজের সিজদা প্রবর্তন কিভাবে হলো তার একটি উন্মাদ মস্তিস্কপ্রসূত গবেষণা দিয়েছেন। তাতে লিখেছেন মোহাম্মদ (সা নাকি ক্বাবায় মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে থাকতেন। এরপরের অংশ আমি লিখতে পারছিনা। আমার কলম আর এগুচ্ছেনা। এভাবেই ‘মোহাম্মকের সফেদ লুঙ্গি‘ নামক লেখায় তিনি সাদা কাপড় পরার প্রচলন কিভাবে হলো তার একটি উন্মাদনাপ্রসুত কাল্পনিক বর্ণনা দিয়েছেন। সেটিও হুবহু লিখতে পারছিনা। আমি দু:খিত।
রাজিব হায়দার শুক্রবার নিহত হন। শনিবারই তার নাস্তিকবাদী লেখার খবর চলে আসে বিভিন্ন মিডিয়ায়। স্যোসাল মিডিয়ায় লিংক চলে আসে তার ‘থাবা বাবা‘ ব্লগের। ঐ রাতে ফেইসবুকে যখন বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেখছিলাম তখন এক সহকর্মী আমাকে রাজিব হায়দারের ব্লকের লিংকটি টেগ করলেন। পড়তে থাকলাম। আমার তো রক্তক্ষরণ হওয়ার মতো অবস্থা। এসব কী দেখছি? কী পড়ছি? সিজদা-নামক লেখাটি পড়ে যেনো আমি অসুস্থতাবোধ করছিলাম। আমার যেনো দম নিতে কষ্ট হচ্ছিলো । বেড ছেড়ে উঠে গিয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাই। ঘুমানোর চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুতেই যেনো ঘুম আসছেনা। পুরো রাত্রি ছটফট করে কাটালাম। ঘুমুতে পারলামই না। মনের মধ্যে শুধু ঘৃণা। এসব কী হচ্ছে?
সকালে এক প্রগতিশীল সহকর্মীর সাথে ফোনালাপ হলো। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে একটু হালকা হওয়ার চেস্টা করলাম। তিনি বললেন, এসব জামাত-শিবিরের কারসাজি। জামায়াত রাজিব হায়দারের নামে ব্লগ তৈরী করে তার নামে কুতসা ছড়াচ্ছে। আমি আর তার সাথে যুক্তি তর্কে গেলাম না। কিছু সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ ঘাটাঘাটি করে তার যুক্তির সত্যতা খোঁজতে থাকলাম। যদিও রাজিবের লেখার ধরন দেখে আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলোনা এটা অন্যকেউ করতে পারে। কারন এ লেখার স্টাইল অন্যরকম। তবে আমার ঐ সাংবাদিক সহকর্মী যেহেতু একটি সন্দেহ ঢুকিয়ে দিলেন তাই সত্য উদঘাটনে ঘাটাঘাটি করতে থাকলাম। সংবাদপত্র ঘেটে যেটা পেলাম তা হলো-রাজিব হায়দারের নিজস্ব ব্লগটি তার নিহত হওয়ার পরে বানানো হয়নি। এটা কয়েক বছর আগের। তার ব্লগের ইমেল এড্রেস ও ফেইসবুকের ইমেইল এড্রেস একই। ফেইসবুক আইডিটি যে ফেইক নয় তা পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তাছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলেননি। অর্থ্যাত ব্লগটি যে রাজিব হায়দারের নয় এমন কোনো বক্তব্য পরিবারের পক্ষ থেকে আসেনি। তাছাড়া সোমবার রাতে ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানী রিপোর্ট পড়লাম। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার রাজিব হায়দারের শশুড়ের সাথে কথা বলেছেন। শুশুড় জানিয়েছেন-রাজিব ছিলো ভয়ংকর ধর্মদ্রোহী। তার এসব কর্মকান্ডের কারনে তিনি তার মেয়েকে রাজিবের কাছ থেকে নিয়ে যান। আমার মনে হয় এতো যুক্তির পর ‘থাবা বাবা‘ খ্যাত রাজিব হায়দারের ব্লগটি জামাতে ইসলামের কারসাজি বলার আর সুযোগ নেই।
ুআমার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। এতো বড় নাস্তিক বাংলাদেশে আছে? আমার জীবনে অনেক নাস্তিকের কথা শুনেছি। সালমান রুশদীর মতো নাস্তিক আমরা দেখেছি। তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছি। তসলিমা নাসরিনের ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখী পড়েছি। কিন্তু রাজিবের মতো ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক দেখিনি। আমার মনে হয় রাসুলের (সা আমলেও এমন ভয়ানক ধর্মদ্রোহীর আবির্ভাব ঘটেনি। সে হচ্ছে সর্বকালের সর্বাধিক কুখ্যাত ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক। কেউ নাস্তিক হতে পারে। তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এটা তার ব্যাক্তি স্বাধীনতা- সে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী হবে কি-না। কিন্তু কোনো ধর্ম নিয়ে কিংবা ধর্মে বিশ্বাসীদের নিয়ে উপহাস করার অধিকার কারো নেই। রাজিব হায়দার সে কাজটি করেছেন।
আমার দু:খ ঐ প্রগতিশীল সহকর্মীর জন্য। যিনি ফোনালাপে বললেন, ‘থাবা বাবা‘র ব্লগটি অন্যকেউ তৈরী করে তার নামে কুতসা ছড়াচ্ছে। তিনি সবকিছু বুঝে-শুনে নাস্তিক রাজিব হায়দারের কুকর্ম ডাকার চেস্টা করছেন মাত্র। অথচ একজন মুসলমান হিসেবে ধর্মবিদ্বেষী কর্মযজ্ঞের জন্য রাজিবকে তাঁর ঘৃণা করা উচিত ছিলো। আমি নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করবো। আর আমার ধর্মকে নিয়ে, রাসুলকে নিয়ে যে অবমাননা করছে তাকে সমর্থন করবো এই দ্বৈতনীতির সুযোগ ইসলামে নেই।
বিষয়: বিবিধ
৪১৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন