মিলাদে কি রাসুলের (সাঃ) রুহ হাজির হয়?
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:২৪:৩৮ সকাল
ফেসবুকের বদান্যতায় মসজিদে গাউসিয়া পিটারবরাহ'র উদ্যোগে বিশাল মিলাদুন্নবী মিছিল দেখে একটি বিষয়ে কিছু লাইন লিখতে উদ্যোগী হলাম।
মিলাদ মাহফিল আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ মনে করেন- মিলাদের সময় রাসুল (সাঃ) আত্মিকভাবে বা রুহানী অবস্থায় এসে হাজির হন । কোনো কোনো মিলাদ মাহফিলে রাসুল (সাঃ) এর বসার জন্য একটি চেয়ারও সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়।
প্রশ্নটি এখানেই। তাহলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন যে হাজার হাজার মানুষ রাসুল (সাঃ) এর প্রতি সালাম পেশ করতে মদীনায় তাঁর রওজায় যাচ্ছেন তাঁদেরকে তো খালি হাতেই ফিরে আসতে হচ্ছে। কারণ রাসুল (সাঃ) এর রুহ তো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে।
নাহ, তাহলে কি বলবেন যে, রাসুল (সাঃ) এর রুহকে দেশে দেশে মিলাদে ঘুরে বেড়াতে হয়না, তিনি মদীনায় তাঁর রওজা শরীফে শোয়ে শোয়ে দর্শনার্থীদের সালামের জবাব দেন আবার একই সাথে মিলাদগুলোতেও বিচরণ করতে পারেন? কারণ তিনি রাসুল। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সেই ক্ষমতা দিয়েছেন।
কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই তো সর্বত্র বিরাজমান। তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সবকিছু দেখতে পারেন, শোনতে পারেন, তিনি মহাপরাক্রমশালী। এখন আমরা যদি রাসুলকে আল্লাহ তায়ালার জায়গায় বসিয়ে দিই, অর্থাৎ আমরা যদি বলি তিনি তাঁর রওজা থেকেই মিলাদগুলোতে বিচরণ করতে পারেন, তাহলে সেটা আল্লাহ তায়ালার গুণের সাথেই সামঞ্জস্য হয়ে যায়। এটাকেই তো বলে শিরক।
তাহলে তো প্রমাণিত হয়, জীবিত রাসুলের চেয়ে মৃত রাসুল আরো বেশি শক্তিশালী। কারণ আমরা জানি, রাসুল (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় এভাবে আত্মিকভাবে কোথাও ঘুরে বেড়িয়েছেন-এমন কোনো নজির নেই । জীবিতাবস্থায় তাঁর এমন কোনো শক্তি ছিলো বলে তিনি দাবী করেননি। তাঁর কর্মের মাধ্যমে কখনো এর প্রতিফলনও ঘটেনি। তাহলে ইন্তেকালের পর তিনি সেই শক্তি পেলেন কীভাবে? তিনি তো কিছু বলে যাননি যে, ইন্তেকালের পর তাঁর রূহ সর্বত্র ঘুরে বেড়াবে। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সেই শক্তি দিয়ে দেবেন। নাহ, অবশ্যই আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর এমন কোনো শক্তি ছিলোনা। নিচের দুটো ঘটনা বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করবে।
এক.
একবার মদীনায় একদল মুরতাদ এক রাখাল ছেলেকে হত্যা করে কয়েকটি উট নিয়ে পালিয়ে যায় । রাসুল (সাঃ) ওদেরকে খুঁজে বের করে পাকড়াও করে নিয়ে আসতে সাহাবাদের নির্দেশ দেন । দীর্ঘক্ষণ মদীনা শহরের অলিগলি তন্ন তন্ন করে খুঁজে মুরতাদ চোরদের পাকড়াও করে নিয়ে এলে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হয়।
ওই সময় রাসুল (সাঃ) কিন্তু সাহাবাদেরকে বলে দেননি, মুরতাদরা পালিয়ে গিয়ে কোন জায়গায় অবস্থান করছে । শুধু বলেছেন, মদীনার অলিগলি খুঁজে ওদের পাকড়া করে নিয়ে আসতে। রাসুলের রূহ যদি সর্বত্র বিচরণ করতো, তাহলে কোথায় কী হচ্ছে দেখতো পারতো এবং তিনি সাহাবাদের বলে দিতেন ওই.. জায়গা থেকে মুরতাদদের ধরে নিয়ে এসো। তিনি তা বলে দেননি। তাহলে প্রমাণিত হয়, তিনি অদৃশ্য বা গায়েব সম্পর্কে আগাম কিছু বলে দিতেন পারতেন না। যা কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হতো, একমাত্র তা-ই তিনি বলে দিতে পারতেন।
দুই.
রাসুল (সাঃ) এর সহধর্মিনী আয়শা (রাঃ) এর ঘটনা আমরা জানি। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে কাফেলার পেছনে আটকা পড়ায় একদল মোনাফেক তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ উত্থাপন করেছিলো। রাসুল (সাঃ) অভিযোগ শোনে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন। প্রায় দুই মাস যাবত আয়শার (রাঃ) সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ছিলো । অবশেষে এ ঘটার প্রেক্ষাপটে পবিত্র কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়। প্রমাণিত হয়- অভিযোগ ছিলো মোনাফেকদের মিথ্যাচার ও প্রপাগাণ্ডা। কুরআনের আয়াতে আয়শা (রাঃ)কে পবিত্র বলেই ঘোষণা দেয়া হয় এবং সকল বিভ্রান্তির অবসান ঘটে।
তাহলে সেদিন রাসুল (সাঃ) কেন চিন্তিত ছিলেন? কেন তিনি দীর্ঘ দুই মাস কুরআন নাজিলের অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁর রুহ যদি সর্বত্র বিচরণ করতো, তিনি যদি অদৃশে্যর খবর জানতেন তাহলে ঘটনার সাথে সাথে কেন বললেন না- এসব মিথ্যা প্রপাগান্ডা। তিনি তো কিছুই বলেনি।
এটা কি প্রমাণ করেনা যে, রাসুল (সাঃ) অদৃশ্যের খবর জানতেন না। তাঁর রুহ সর্বত্র বিরাজমান নয়। তাঁকে আল্লাহ তায়ালা জিবরিল (আঃ) এর মাধ্যমে যা জানাতেন তা-ই মানুষকে জানাতেন।
সুতরাং, আমরা বলতে পারি- কোনো মিলাদ শরীফে রাসুলের রুহ হাজির হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাঁর জন্য চেয়ার সাজিয়ে রাখা একটি গর্হিত অনৈসলামিক কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩১০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন