ভন্ডপীর, মাজার ও খানকা

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ০১ অক্টোবর, ২০১৫, ১১:১২:৫৮ রাত

ফেসবুকে এক তরুণ বুজুর্গকে (?) প্রচণ্ড জোশের সাথে ওয়াজ করতে দেখলাম। তিনি চিকিৎকার করে বলছেন, আল্লাহর কাছে পৌঁছার পথ এত সহজ নয় । সেখানে পৌঁছতে হলে হক্কানী পীরের দরবারে গিয়ে তাঁর (পীরের) কাছ থেকে দীক্ষা নিতে হবে।

অথচ রাসুল (সাঃ) নিজেই বলেছেন আল্লাহর কাছে পৌঁছার পথ একেবারে সোজা। কারণ আল্লাহ তায়ালা প্রতি রাতের শেষাংশে, নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে মানুষকে আহবান জানাতে থাকেন- এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? (বোখারী-১১৪৫, মুসলিম ৭৫৮)।

রাসুল (সাঃ) তো আল্লাহর কাছে পৌঁছতে পীর সাহেবের কাছে যেতে বললেন না। নিজ ঘরে রাতের শেষে জেগে ওঠে আল্লাহর কাছে চাইতে বললেন। আল্লাহ তো তাঁর বান্দার অপেক্ষায়ই রয়েছেন । তাহলে তরুণ ওই বুজুর্গ কেন বললেন আল্লাহর কাছে পৌঁছার পথ সহজ নয়? এর কারণ কী?

হ্যা, কারণ হলো সরাসরি সোজা পথে আল্লাহর কাছে পৌঁছে গেলে পীর সাহেবের খানকা শরীফ চলবে কীভাবে? তিনি কি পরিবার-পরিজন নিয়ে উপোষ মরবেন?

আমরা বৃহত্তর সিলেটবাসী হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর মাধ্যমে মুসলমান হয়েছি। তিনি ছিলেন আল্লাহর খাঁটি ওলি। প্রকৃত ওলিরা দুনিয়ায় কোনো সম্পদ চান না। তাইতো তিনি ছিলেন নিঃস্ব ও নিঃসন্তান। তাঁর কোনো দালান ঘর ছিলোনা, ছিলোনা অট্রালিকা।

আজ পীরদের বাড়িতে গিয়ে দেখুন কী অট্রালিকা। কী বিশাল বাড়ি। দামী গাড়ি। কোনো চাকরি নেই। কাজ নেই। গায়েবী থেকে সম্পদ আসে। কারণ তিনি পীর। লোকজন তার সুহবত পাওয়ার জন্য, তার দোয়া নেওয়া হাজার হাজার টাকা দিয়ে যান। আর তিনি জায়গা ক্রয় করতে থাকেন। বাড়ির আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকে। শহরে বিজনেস টাওয়ার তুলেন। ব্যবসা বাণিজ্য খুলেন। এসব মানুষের দানের পয়সায়।

হায় হায়, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে পীর করে পাঠিয়েছেন- মানুষের কাছ থেকে দান-দক্ষিণা নেবেন আর দোয়া করবেন। ওনাকে দোয়ার ঠিকাধারী দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যে ঘরে থাকতেন ওই ঘরের ছাদ ছিলো খেজুর পাতা দিয়ে তৈরী। ঘরে আসবাবপত্র বলতে ছিলো, একটি খাঁটিয়া, পানি রাখার একটি পাত্র আর সামান্য বাসন-কোসন হাড়ি পাতিল। এরচেয়ে আর কোনো সম্পদ ছিলোনা তাঁর। অথচ তিনি ছিলেন বিশ্বনবী।

কিন্তু আজ কিছু নামধারী হক্কানী পীরের মৃতু্যর পর তাদের বাড়িতে ব্যবসা আরো অনেকগুণ বেড়ে গেছে। কারণ তাঁর মৃতু্যর পর কবরে মাজার নির্মাণ করা হয়েছে। এখন লোকজন প্রতিদিন মানত নিয়ে আসছে। মাজার জেয়ারত করে নগদ হাজার হাজার টাকা দিয়ে যাচ্ছে। গরু, ছাগল, হাস-মুরগীতো আসছেই, ওগুলো খাওয়ার জন্য তরি-তারকারী যেমন কদু, মুলা, শিম ইত্যাদিও চলে আসছে।

তিনি যদি পীর হয়ে থাকেন, কুতুব হয়ে থাকেন, আলেম হয়ে থাকেবন তাহলে মুসলিম শরীফের হাদীসটি কি জানতেন না- যে হাদীসে কবরের উপর মাজার বানাতে রাসুল (সাঃ) নিষেধ করেছেন। হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল (সাঃ) কবরে চুনকাম (অর্থাৎ দেয়াল দিয়ে মাজার নির্মাণ) করতে ও সেখানে বসতে নিষেধ করেছন। (মুসলিম-২২৮৯).

নাহ, রাসুল (সাঃ) শুধু মাজার নির্মাণ করতেই নিষেধ করেননি, বরং মাজারগুলো গুড়িয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হাইয়াজ আসাদী বলেন, আলী (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি কাজের জন্য পাঠাবো যে কাজের জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে পাঠিয়েছিলেন। আর তা হলো, কোনো মূর্তি দেখলে তা নিশ্চিহ্ন করবে এবং কোনো কবর উঁচু দেখলে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে। (মুসলিম-৯৬৯)। তাহলে আমাদের উচিত যেসব এলাকায় বড় বড় মাজার আছে সেগুলো গুড়িয়ে দেয়া।

আমাদের একটিবার ভাবা উচিৎ, মাজারগুলোতে কী জঘন্য ন্যাক্কারজনক কাজ চলছে। একে তো মদ, গাজা ও হেরোইনখোরদের আখড়া। উপরন্তু শিরকে সয়লাব। অশিক্ষিত মানুষ মাজারের নামে মান্নত করে। অথচ কোনো কিছু মান্নত হতে হবে একমাত্র আল্লাহর নামে। মাজার, কিংবা পীরের নামে মান্নত হলে ওই জন্তুর মাংস খাওয়াই তো হারাম।

বিষয়: বিবিধ

২২৬৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

344009
০২ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:০৮
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু।
সুন্দর একটি লেখা এই রকম লেখা আমরা আরো চাই....। যা সমাজে সচেতনতা তৈরী করবে।

আমি খুব অল্প বয়সে আমার আব্বুর সাথে ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে ছিলাম। একজন বক্তার বক্তব্য শুনে আমার আব্বু পীর মাজার থেকে দূরে সরে গেছেন।

বক্তা বক্তৃতা দিতে গিয়ে এমন একটি কথা উপস্থাপন করলেন যা আমার হূদয়ে এখনো গেথে আছে।

বক্তা বলেছিলেন শয়তানের বিশেষ কিছু উদ্ধত্যের কথা.... মানুষকে শয়তান এমন রূপে গ্রাস করবে যা থেকে মানুষ বেঁচে থাকতে পারবেনা। শয়তান মানুষকে এমন কুমন্ত্রনা দেবে যাতে করে মানুষ গুনা করবে সোয়াব মনে করে....। কারন গুনা করেছে এমনটি মানুষের জানা থাকলে মানুষ একদিন না একদিন আল্লাহর কাছে মাফ চাইবে...।

সোয়াব করতেছে মনে করে গুনা করলে মানুষ সেই গুনাহের মাফ কখনো চাইবেনা। মাফ না চাইলেই শয়তান সফল।

মানুষ শয়তান হচ্ছে ভন্ড পীর আর মাজার বা খানকা এই থেকে বাঁচাতে হবেই।

আপনার এই তথ্য মুলক লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
344162
০৩ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০১:১২
তাইছির মাহমুদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
০৫ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৩:৫৪
285791
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আপনি খুবই সুন্দর লেখা উপহার দিয়ে যাচ্ছেন, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আবার মন্তব্য করেছেন....! মন্তব্য করার কারনে আপনার জবাবটি আপনার পোস্টে মন্তব্যকারী পর্যন্ত পৌঁছেনি তাই ভাবলাম বিষয়টি আপনাকে অবহিত করি...!! নিচের স্কৃনসর্টটি ফলো করুন জবাব দেয়ার জন্য...
শুভ ব্লগিং...
344163
০৩ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০১:২৩
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : জান্নাত পেতে চান? তাহলে প্রানভরে মা-বাবার খেদমত করুন, মাজারে নজরানা না দিয়ে মা-বাবাকে খাওয়ান, মাজারে মশারী না টাঙ্গিয়ে মা-বাবার আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করুন, মাজারে গিলাপ না লাগিয়ে মা-বাবার জন্য উত্তম পোষাকের ব্যবস্থা করুন। আপনার মা-বাবা যখন আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহর দরবারে দুইহাত তুলে আপনার জন্য দোয়া করবেন, তখনিই আপনার দুনিয়ায় শান্তি ও পরকালের মুক্তি নিশ্চিত হবে।
তামাম দুনিয়ার যত পীর আছে সবাইকে একত্রিত করলেও আল্লাহর রাসূলের সাহাবীরা জিহাদের ময়দানে যে ঘোড়া দৌড়াইয়াছেন সেই ঘোড়ার পায়ের ধুলার যোগ্যও হবেনা। আল্লাহর কসম এই পীরেরা আপনার জন্য কিছুই করতে পারবেনা, এদের কোন ক্ষমতা নাই।
344457
০৫ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:৩৬
তাইছির মাহমুদ লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File