গাড়ির বহর হাঁকিয়ে বাদশাপুত্র আল্লাহর দরবার থেকে কী আশা করতে পারেন?
লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:৪৩:৩৩ সন্ধ্যা
ফেসবুকে একটির পর একটি ভিডিও আপলোড হচ্ছে। মিনায় হাজীদের একজনের ওপর অপরজনের পড়ে থাকার দৃশ্য আর বাঁচার আকুতি দেখে কিছুতেই আবেগ সামলাতে পারছিনা। কেমন অস্থিরতা বোধ করছি। শুধুই ভাবছি, কেন হাজীদেরকে এমন করুণ পরিনতি ভোগ করতে হলো?
যাঁরা ইতোমধ্যে হজ্জ বা ওমরাহ পালনে সৌদি গেছেন তাদের কাছে একটি বাক্য খুব পরিচিত। তা হচ্ছে- হাজ্জী ছবর, হাজ্জী ছবর। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাজীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি একটি মহা বাণী। হাজ্বী ছবর-এই বাণীটি শোনার পর চরম ক্ষোভেও আমাদের ক্রোধ প্রশমিত হয়ে আসে। তাই পুলিশ ভলান্টিয়ার, মুয়াল্লিম, গ্রুপ লীডার সকলেই এই পন্থা অবলম্ব করে থাকেন।
অনেক গ্রুপ লিডার এভাবে ছবরের বাণী শুনিয়ে তাঁর সকল অনিয়ম ডেকে দেন । মক্কায় মদীনায় আমরা নানা অনিয়মের শিকার হই। কিন্তু কোনো অভিযোগ করিনা, কারণ হজ্জ ও পবিত্র এই নগরীর নিয়ে কথা বললে পাপ হতে পারে।
আসলেও কি তাই? অনিয়ম তো অনিয়মই। অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা না বলাটাই বরং অনিয়ম। আমরা জানি, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, সমাজে অনিয়ম-অনাচার দেখা দিলে হাত দিয়ে তার প্রতিবাদ করা মুসলমানের ওপর দায়িত্ব । আর তাতে সক্ষম না হলে মৌখিকভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। আর তাও সম্ভব না হলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করতে হবে।
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কি মক্কা-মদীনায় কোনো অনিয়ম ঘটলে এর প্রতিবাদ করেননি? পবিত্র শহরের মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে বলে তিনি কি নীরব ছিলেন?
রাসুলের (সাঃ) পরে খলিফা আবু বকর এবং ওমর (রাঃ) এর শামসামলে কোনো অনিয়ম হলে কি তাঁরাও নীরব থাকতেন? নাহ, তাঁরা কেউ নীরব থাকার প্রশ্নই আসেনা। বলাবাহুল্য, ইসলামের অধিকাংশ যুদ্ধ-বিগ্রহের ঘটনা তো এই দুই পবিত্র শহরকে কেন্দ্র করেই সংঘটিত হয়েছে।
তাহলে আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললে দোষ হবে কেন? আসলে অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা না বলাটাই বরং দোষের কারণ। হাজ্জী ছবর, হাজ্জী ছবর--বাণী শোনে কি এখনো আমরা বসে থাকবো? নাকি অনিয়মনের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত।
মিনায় সহস্রাধিক হাজী শাহাদত বরন করলেন। এ পর্যন্ত সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে কি মিডিয়ায় কোনো আনুষ্ঠানিক এপোলজি দেয়া হয়েছে? বরং হাজীদের ওপরই দোষ চাপানোর চেষ্টা
চলছে । হতাহতের ঘটনায় যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে কি কোনো ঘোষণা দেয়া হয়েছে? বাদশার পুত্রের গাড়ির বহরকে এ জন্য দায়ী করা হয়েছে । ইতোমধ্যে ভিডিও ফুটেজও রিলিজ হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে তিনি কিভাবে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়ির বহর নিয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মিনায় জনসমুদ্র বেদ করে হাঁকিয়ে বেড়াচ্ছেন। হজ্জ পালনকালে যেখানে ধনী নির্ধন, রাজা-বাদশা-ফকির সকলেই এক কাতারে দাঁড়ানোর কথা সেখানে বাদশাপুত্রের এই শোভাযাত্রা শুধু দৃষ্টিকটুই নয়, অমার্জনীয় অপরাধও বটে। তাঁর গাড়ির বহরকে রাস্তা করে দেয়ার জন্য দুটি রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার ফলে এ ঘটনা ঘটেছে বলেই মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। সহস্রাধিক হাজ্জীর প্রাণের বিনিময়ে তিনি গাড়ির বহর হাঁকলেন। অথচ তাঁর পক্ষ থেকে কেনো এপোলজি কিংবা সমবেদনা প্রকাশ করতে দেখলাম না । এ কেমন শিষ্টাচার? ব্রিটেন তো মুসলিম কান্ট্রি নয়। কিন্তু এখানে এমন ঘটনা ঘটলে ততক্ষনে কী হতো? সহজেই অনুমেয়, বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হতো। ঘটনার জন্য মন্ত্রী দায়ী হলে ততক্ষনে তাঁকে নির্ঘাত জেলে যেতে হতো।
রাসুল (সাঃ) হজ্জ পালনকালে কি উটের বহর নিয়ে মিনা ও আরাফায় অবস্থান করেছিলেন? তিনি তো ছিলেন আল্লাহর রাসুল। তিনি ছিলেন বিশ্বনবী। তাঁর তো উটের বহরে চড়ে যাওয়ারই কথা ছিলো। কিন্তু তিনি তো সেটা করেননি। তিনি সাধারণ মানুষের সাথে মিশে গিয়ে হজ্ব পালন করেছিলেন। কারণ আল্লাহর দরবারে বাদশা-ফকির সকলেই সমান। আল্লাহর কাছে
সবচেয়ে সম্মানের ব্যক্তি সে, যে নাকি ভূপৃষ্ঠে নিরহংকারী চিত্ত্বে পদব্রজে হাঁটে। গাড়ির বহর নিয়ে ঢাকা ঢোল পিটিয়ে হাজার হাজার হাজীর প্রাণের বিনিময়ে আল্লাহর দরবার থেকে কী আশা করতে পারেন বাদশাপুত্র? আল্লাহর কাছে তাঁর ওই বান্দারাই প্রিয় যারা দুই টুকরো সাদা কাপড় পরে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পায়ে হাঁটছে আর তাঁকে ডাকছে, লাব্বায়েকা আল্লাহুম্মা লাববায়েক।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৯ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
-------------------------------------
একটা মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে- "সৌদি যুবরাজের গাড়ী বহরের বিশৃঙ্খলার কারণে মিনাতে হাজীদের পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।।"
এই খবরটা বোঝা যাচ্ছে ডাহা জালিয়াতি।। কেননা "জামারা"-তে (পাথর মারার স্থানে) একটি হেলি-প্যাড আছে এবং ভি আই পি দের জন্য আলাদা আন্ডারগ্রাউন্ট রাস্তাই করা আছে।। তাই সৌদি যুবরাজের কোন-ই প্রয়োজন নাই গাড়ী বহর নিয়ে এই রাস্তায় (সাধারণ হাজীদের রাস্তা) চলে আসার।।
বোঝা যাচ্ছে সৌদি সরকারের বিরোধীপক্ষ এই সরকারকে অপমান করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।। আল্লাহ যেন আহলে সুন্নাতের অনুসারীদেরকে মিথ্যা অপবাদ থেকে (অপবাদ দেয়া এবং প্রচার উভয়টা থেকে) দূরে রাখেন।।
--------------------------------------
মন্তব্যঃ কোন বিষয়ে আন্দাজে কথা বলা ইসলামে নিষিদ্ধ।। একারণেই এমন আলেমের লেখার অনুবাদ করলাম যে সেখানে উপস্থিত আছেন।।
হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-
তোমরা কারো ব্যাপারে আন্দাজে মন্দ ধারণা করিও না, কেননা আন্দাজে ধারণা করা সব থেকে বড় মিথ্যা।।
সহিহ বোখারী- ৫১৪৩, ৬৭২৫।।
সহিহ মুসলিম- ১৪১৩,২৫৬৩।।
-------------------------------------
একটা মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে- "সৌদি যুবরাজের গাড়ী বহরের বিশৃঙ্খলার কারণে মিনাতে হাজীদের পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।।"
এই খবরটা বোঝা যাচ্ছে ডাহা জালিয়াতি।। কেননা "জামারা"-তে (পাথর মারার স্থানে) একটি হেলি-প্যাড আছে এবং ভি আই পি দের জন্য আলাদা আন্ডারগ্রাউন্ট রাস্তাই করা আছে।। তাই সৌদি যুবরাজের কোন-ই প্রয়োজন নাই গাড়ী বহর নিয়ে এই রাস্তায় (সাধারণ হাজীদের রাস্তা) চলে আসার।।
বোঝা যাচ্ছে সৌদি সরকারের বিরোধীপক্ষ এই সরকারকে অপমান করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।। আল্লাহ যেন আহলে সুন্নাতের অনুসারীদেরকে মিথ্যা অপবাদ থেকে (অপবাদ দেয়া এবং প্রচার উভয়টা থেকে) দূরে রাখেন।।
--------------------------------------
মন্তব্যঃ কোন বিষয়ে আন্দাজে কথা বলা ইসলামে নিষিদ্ধ।। একারণেই এমন আলেমের লেখার অনুবাদ করলাম যে সেখানে উপস্থিত আছেন।।
হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-
তোমরা কারো ব্যাপারে আন্দাজে মন্দ ধারণা করিও না, কেননা আন্দাজে ধারণা করা সব থেকে বড় মিথ্যা।। একমত
মন্তব্য করতে লগইন করুন