ইংলিশ মামনুন, হাজ্জী তারিক-তারিক

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:১৬:০৯ সকাল

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, মক্কায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো চেইন অব কমাণ্ড নেই। আপনি এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন ডেস্কের সামনে পাসপোর্ট টিকিট নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আপনার দিকে ভ্রক্ষেপই করবেন না। আপনি যখন পাসপোর্টটি বাড়িয়ে দেবেন তখন তাঁর মর্জি হলে তিনি হাতে নেবেন, নতুবা কারণ ছাড়াই আপনাকে দাঁড় করে রাখবেন। এক-দুই মিনিটই নয়, ঘন্টা-দুই ঘন্টাও হতে পারে।

একবার সৌদি এয়ারপোর্টে এক ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আমার পাসপোর্টটি নিয়ে ডেস্কে রেখে বুথ থেকে বেরিয়ে গেলেন। অন্য একটি বুথে গিয়ে তাঁর অপর সহকর্মীর সাথে দীর্ঘক্ষন খোশগল্প করে ফিরে এসে বললেন, তাঁর ডিউটির সময় শেষ । তাঁকে চলে যেতে হবে। অন্য কর্মকর্তা আসছেন। তিনি সিল মেরে দেবেন। আমাকে দাঁড় করে রেখেই তিনি বের হয়ে গেলেন। খানিক্ষণ পর অপরজন এলেন। তিনি আমার লাল পাসপোর্টটি হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াছাড়া করে টাসটাস করে দুটো সিল মেরে দিলেন। আর আমি ইমিগ্রেশন নামক পুলসিরাত পার হয়ে চলে এলাম।

একবার হারাম শরীফে আমার এক সফরসঙ্গীকে খুঁজে বের করতে তথ্য অফিস খুঁজছিলাম। একজন পুলিশ অফিসারের কাছে জানতে চাইলাম- ইজ দ্যায়ার এনি ইনফরমেশন সেন্টার (এখানে কি কোনো তথ্য অফিস আছে)? জবাবে পুলিশ অফিসার অনেকটা রেগে গিয়ে ধমকের স্বরে বললেন, হাজ্জী ইংলিশ মামনুন, তারিক তারিক (হাজী ইংলিশ নিষেধ, রাস্তা ধরে চলুন) । আমি আর কোনো কিছু জিজ্ঞাস করার সাহসই পাইনি।

শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ শেষে মিনায় ফেরার সময় রাস্তা হারিয়ে পুলিশের সাহায্য চাই- প্রশ্ন বুঝে উঠার আগেই পুলিশের জবাব--হাজ্জী তারিক তারিক (হাজী রাস্তা রাস্তা)। অর্থ্যাৎ রাস্তা দিয়ে চলুন।

অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সেখানে কারো কাছে কারও কোনো জবাবদিহীতা নেই। কোনো মনিটরিং নেই। অভিযোগের জায়গা নেই। আপনার পাসপোর্ট ডেস্কে রেখে যে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা অন্য ডেস্কে গিয়ে খোশগল্প করছেন তাঁকে দেখার কেউ নেই। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও কেউ নেই। তাঁর মর্জি হলে তিনি পাসপোর্টে সিল দিতে পারেন। নতুবা অপনাকে দাঁড় করে রাখতে পারেন। জবাবদিহীতা কিংবা চেইন অব কমাণ্ড না থাকাটাই হজ্জে অব্যবস্থাপনার একটি মূল কারণ।

বিষয়: বিবিধ

১০৪৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

343446
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:২৩
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।
যথার্থই লিখেছেন। মাসখানেক আগে আমাদের ৬ জনের টিম সৌদী এক ইয়াং ইমিগ্রেশান অফিসারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ভদ্রলোক স্মার্টফোনে মেসেজিং করছিলেন কারো সাথে। কয়েকটা লাইন লিখছিলেন এবং এক মুখ লাজুক হাসি মুখে ঝুলিয়ে আমাদের এক একজনকে ইশারা করছিলেন তার সামনে যেতে। সামনে এগিয়ে গেলে পাসপোর্ট নিতে না নিতেই আবার মেসেজ পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফিংগার প্রিন্ট, ছবি তোলা সহ প্রায় প্রতিটি এ্যাকশানের মধ্যেই ইয়াংম্যানকে তার মোবাইলে নজর দিয়ে মেসেজ এর উত্তর লিখতে হচ্ছিল। আমরা মুখে হাসি ঝুলিয়ে ধৈর্যের পারাকাষ্ঠা সহযোগে অপেক্ষা করছিলাম আর নিজেকে নিজেরা একা একা এবং পরবর্তীতে সন্মিলিতভাবে বলছিলাম - না মোটেও না - রাগ করা চলবে না। এরা নবী সঃ এর জ্ঞাতিগোষ্ঠি, প্রতিবেশী ইত্যাদি।

মক্কার পর মদীনায় যাবার পথে এক জায়গায় এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলে পর স্থানীয় এক ভাই বললেন - নাহ সবাই নবী সঃ এর জ্ঞাতিগোষ্ঠি নয় - বরং অনেকেই আছে যারা আবু জাহেল, আবু লাহাব এর জ্ঞাতিগোষ্ঠি।

ধন্যবাদ।
343627
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৩১
হতভাগা লিখেছেন : সৌদিরা কি লেখাপড়ার জন্য স্কুলে যায় ? ওদের স্কুলে কি ইংলিশ শেখায় না ?

বসে বসে খেলে রাজার ভান্ডারও ফুরিয়ে যেতে বাধ্য । একসময়ে যখন তেল আর থাকবে না তখন এই বাংলাদেশে এসেই কমলাপুর সদরঘাটে কুলির কাজ করতে হবে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File